ঢাকা ০৯:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পরিবহণ ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনেও অচল সারা দেশ, ভোগান্তি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:২৬:১২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ নভেম্বর ২০২১
  • ১৪৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে আজ শনিবারও সারা দেশে বেসরকারি বাস, মিনিবাস, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ।

রাজধানীর প্রতিটি বাসস্টপেজে দেখা গেছে গাড়ির জন্য অপেক্ষমায় থাকা যাত্রীদের ভিড়। তবে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার পরীক্ষা দিতে আসা পরীক্ষার্থীরা।

শনিবার গাবতলী, মিরপুর ও মহাখালী বাস টার্মিনাল এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।

রাজধানীর খিলগাঁও বাসস্টপেজে পরিবার নিয়ে মিরপুর ২ যাবেন বলে গাড়ির অপেক্ষা করছিলেন সালাহউদ্দিন নামের এক যাত্রী। তিনি জানান, প্রায় ৩০ মিনিট ধরে কোনো গাড়ির দেখা পাচ্ছি না। ধর্মঘট অমান্য করে যে কয়েকটি গাড়ি চলছে তাতে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় রয়েছে।

কল্যাণপুর থেকে বসুন্ধরা যাবেন রাবেয়া, তিনি বলেন, কল্যাণপুর থেকে বসুন্ধরা পর্যন্ত সিএনজি ভাড়া চাচ্ছে ৫০০ টাকা। এখন বাধ্য হয়ে আমাকে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে যেতে হবে।

কুষ্টিয়া যেতে গাবতলীতে মিনিট্রাকে উঠে পড়েন চাকরির পরীক্ষা দিতে ঢাকা আসা রিয়াজুল ইসলাম। তিনি বলেন, গাবতলী থেকে পাটুরিয়া বাসে আরাম করে গেলেও ভাড়া দিতে হয় ১০০ টাকা। এখন মিনিট্রাকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাচ্ছি ৪০০ টাকা ভাড়ায়।

এমন অনেক যাত্রী দেখা গেছে রাজধানীর বাসস্টপেজগুলোতে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে যাত্রী সংখ্যাও। রাজধানীর সড়কগুলোর অধিকাংশই ছিলো রিকশা ও সিএনজি চালিত অটোরিকশার দখলে।

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে আগামীকাল রোববার বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। ওই বৈঠকে ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা না আসা পর্যন্ত পরিবহণ খাতের এ অচলাবস্থার নিরসন হবে না বলে জানিয়েছেন পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা। যদিও সরকারের তরফ থেকে শুক্রবার পরিবহণ ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছে। ওই আহ্বানে সাড়া না দিয়ে ধর্মঘট অব্যাহত রেখেছেন পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা।

এছাড়া চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরে পণ্য লোড-আনলোড কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়। বাজারে নিত্যপণ্য সরবরাহ চেইন ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। শিল্প-কারখানাগুলোতে উপকরণ সরবরাহ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তবে লঞ্চ, ট্রেন ও রাষ্ট্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ করপোরেশনের (বিআরটিসি) বাস চলাচল করেছে; যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।

এ বিষয়ে বিআরটিএর চেয়ারম্যান বলেন, সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ ব্যক্তিরা ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। তারপরও বাস-ট্রাক চলাচল বন্ধ রেখেছেন মালিকরা।

তিনি বলেন, ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে বৃহস্পতিবার শেষ বেলায় আমাদের একটি চিঠি দিয়েছেন মালিক নেতারা। আমরা সেটি গুরুত্ব দিয়ে রোববার ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনার জন্য বৈঠক ডেকেছি। এসব পদক্ষেপ নেওয়ার পরও তারা ধর্মঘট পালন করে দ্বৈতনীতি অনুসরণ করতে পারেন না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ যুগান্তরকে বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়টি সমাধানে বিআরটিএকে চিঠি দিয়েছিলাম। বৃহস্পতিবারই এর সমাধান করলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না। তারা দীর্ঘসূত্রতা করেছে। এ কারণে ভোগান্তি হচ্ছে। এর দায় মালিকদের নয়। তবুও অনিচ্ছাকৃত এ ভোগান্তির জন্য আমরা দুঃখিত।

তিনি বলেন, সরকার হঠাৎ করেই প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। বাড়তি দামে তেলে গাড়ি চালালে প্রতি প্রতি ট্রিপে লোকসান গুনতে হবে। তাই সারা দেশে সব বাস ও ট্রাক চলাচল বন্ধ রেখেছেন মালিকরা। সরকারের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়া কীভাবে তাদের গাড়ি চালাতে বলব।

তবে মানুষের দুর্ভোগ কিছুটা লাঘব করতে বিআরটিসির বাস ও ট্রাক চলাচল করেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম।

তিনি যুগান্তরকে বলেন, সারা দেশে বিআরটিসি এক হাজার ১০০ বা ও ৫০০ ট্রাক চলাচল করেছে। বর্তমান ভাড়ায় এসব বাস যাত্রী বহন করেছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার যখন বাসের ভাড়া বাড়াবে, তখন বিআরটিসির বাসের ভাড়া বাড়বে। সরকার ভাড়া না বাড়ালে বর্তমান ভাড়ায় যাত্রী বহন করা হবে।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে শুক্রবারও সকাল থেকে সারা দেশে বেসরকারি বাস, মিনিবাস, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ থাকে।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শত শত মানুষ দূরপাল্লার বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য বাস টার্মিনালে এসেছেন। লাগেজ-ব্যাগ হাতে নিয়ে টার্মিনালে আসার পর জানলেন বাস চলাচল বন্ধ। সারি সারি করে পার্কিং করা হয়েছে সব বাস ও বন্ধ রয়েছে টিকিট কাউন্টারও। অলস সময় কাটাচ্ছেন কাউন্টারের কর্মীরা; কোনো হাঁকডাক নেই।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

পরিবহণ ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনেও অচল সারা দেশ, ভোগান্তি

আপডেট টাইম : ০৯:২৬:১২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ নভেম্বর ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে আজ শনিবারও সারা দেশে বেসরকারি বাস, মিনিবাস, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ।

রাজধানীর প্রতিটি বাসস্টপেজে দেখা গেছে গাড়ির জন্য অপেক্ষমায় থাকা যাত্রীদের ভিড়। তবে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার পরীক্ষা দিতে আসা পরীক্ষার্থীরা।

শনিবার গাবতলী, মিরপুর ও মহাখালী বাস টার্মিনাল এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।

রাজধানীর খিলগাঁও বাসস্টপেজে পরিবার নিয়ে মিরপুর ২ যাবেন বলে গাড়ির অপেক্ষা করছিলেন সালাহউদ্দিন নামের এক যাত্রী। তিনি জানান, প্রায় ৩০ মিনিট ধরে কোনো গাড়ির দেখা পাচ্ছি না। ধর্মঘট অমান্য করে যে কয়েকটি গাড়ি চলছে তাতে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় রয়েছে।

কল্যাণপুর থেকে বসুন্ধরা যাবেন রাবেয়া, তিনি বলেন, কল্যাণপুর থেকে বসুন্ধরা পর্যন্ত সিএনজি ভাড়া চাচ্ছে ৫০০ টাকা। এখন বাধ্য হয়ে আমাকে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে যেতে হবে।

কুষ্টিয়া যেতে গাবতলীতে মিনিট্রাকে উঠে পড়েন চাকরির পরীক্ষা দিতে ঢাকা আসা রিয়াজুল ইসলাম। তিনি বলেন, গাবতলী থেকে পাটুরিয়া বাসে আরাম করে গেলেও ভাড়া দিতে হয় ১০০ টাকা। এখন মিনিট্রাকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাচ্ছি ৪০০ টাকা ভাড়ায়।

এমন অনেক যাত্রী দেখা গেছে রাজধানীর বাসস্টপেজগুলোতে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে যাত্রী সংখ্যাও। রাজধানীর সড়কগুলোর অধিকাংশই ছিলো রিকশা ও সিএনজি চালিত অটোরিকশার দখলে।

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে আগামীকাল রোববার বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। ওই বৈঠকে ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা না আসা পর্যন্ত পরিবহণ খাতের এ অচলাবস্থার নিরসন হবে না বলে জানিয়েছেন পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা। যদিও সরকারের তরফ থেকে শুক্রবার পরিবহণ ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছে। ওই আহ্বানে সাড়া না দিয়ে ধর্মঘট অব্যাহত রেখেছেন পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা।

এছাড়া চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরে পণ্য লোড-আনলোড কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়। বাজারে নিত্যপণ্য সরবরাহ চেইন ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। শিল্প-কারখানাগুলোতে উপকরণ সরবরাহ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তবে লঞ্চ, ট্রেন ও রাষ্ট্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ করপোরেশনের (বিআরটিসি) বাস চলাচল করেছে; যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।

এ বিষয়ে বিআরটিএর চেয়ারম্যান বলেন, সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ ব্যক্তিরা ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। তারপরও বাস-ট্রাক চলাচল বন্ধ রেখেছেন মালিকরা।

তিনি বলেন, ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে বৃহস্পতিবার শেষ বেলায় আমাদের একটি চিঠি দিয়েছেন মালিক নেতারা। আমরা সেটি গুরুত্ব দিয়ে রোববার ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনার জন্য বৈঠক ডেকেছি। এসব পদক্ষেপ নেওয়ার পরও তারা ধর্মঘট পালন করে দ্বৈতনীতি অনুসরণ করতে পারেন না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ যুগান্তরকে বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়টি সমাধানে বিআরটিএকে চিঠি দিয়েছিলাম। বৃহস্পতিবারই এর সমাধান করলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না। তারা দীর্ঘসূত্রতা করেছে। এ কারণে ভোগান্তি হচ্ছে। এর দায় মালিকদের নয়। তবুও অনিচ্ছাকৃত এ ভোগান্তির জন্য আমরা দুঃখিত।

তিনি বলেন, সরকার হঠাৎ করেই প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। বাড়তি দামে তেলে গাড়ি চালালে প্রতি প্রতি ট্রিপে লোকসান গুনতে হবে। তাই সারা দেশে সব বাস ও ট্রাক চলাচল বন্ধ রেখেছেন মালিকরা। সরকারের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়া কীভাবে তাদের গাড়ি চালাতে বলব।

তবে মানুষের দুর্ভোগ কিছুটা লাঘব করতে বিআরটিসির বাস ও ট্রাক চলাচল করেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম।

তিনি যুগান্তরকে বলেন, সারা দেশে বিআরটিসি এক হাজার ১০০ বা ও ৫০০ ট্রাক চলাচল করেছে। বর্তমান ভাড়ায় এসব বাস যাত্রী বহন করেছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার যখন বাসের ভাড়া বাড়াবে, তখন বিআরটিসির বাসের ভাড়া বাড়বে। সরকার ভাড়া না বাড়ালে বর্তমান ভাড়ায় যাত্রী বহন করা হবে।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে শুক্রবারও সকাল থেকে সারা দেশে বেসরকারি বাস, মিনিবাস, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ থাকে।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শত শত মানুষ দূরপাল্লার বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য বাস টার্মিনালে এসেছেন। লাগেজ-ব্যাগ হাতে নিয়ে টার্মিনালে আসার পর জানলেন বাস চলাচল বন্ধ। সারি সারি করে পার্কিং করা হয়েছে সব বাস ও বন্ধ রয়েছে টিকিট কাউন্টারও। অলস সময় কাটাচ্ছেন কাউন্টারের কর্মীরা; কোনো হাঁকডাক নেই।