তনু হত্যার বিচার : রাজপথে আ.লীগ-বিএনপি

সারাদিনই রাজপথ ছিল উত্তাল। সোহাগী জাহান তনুর খুনিদের বিচার দাবিতে মাঠে নেমেছিল তার ৩০ হাজার সহপাঠী। বসে থাকতে পারেননি রাজনৈতিক নেতাকর্মীরাও। তনুর বন্ধুদের সঙ্গেই হাতে হাত ধরে রাজপথে নেমে আসেন তারা। সব ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারেই দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ-বিএনপি, ছাত্রলীগ কিংবা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।

এমন দৃশ্য দেখে সাধারণ মানুষের মধ্যেও পর্বতসম আন্দোলন শক্তি বেড়ে যায়।

পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ সদস্যদেরও বার বার চোখ মুছতে দেখা যায়।

তনু হত্যাকারীদের বিচার দাবিতে কুমিল্লার কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরের রাজপথে নেমে আসে সর্বস্তরের মানুষ।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন তারা। এ সময় নগরীতে কিছু সময়ের জন্য যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এতে কাউকেই অস্বস্তিবোধ করতে দেখা যায়নি। বরং গাড়ি থেকে নেমে অনেকেই আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন।

সকালে এ আন্দোলনে সংহতি জানান কুমিল্লা জেলা পরিষদের প্রশাসক ও কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সহ-সভাপতি মো. ওমর ফারুক, সাংস্কৃতিক সংগঠক শহীদুল হক স্বপন, দক্ষিণ জেলা যুবদল সভাপতি আমিরুজ্জামান আমির, দক্ষিণ জেলা ছাত্রদল সভাপতি উৎবাতুল বারী আবু, মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি আবদুল আজিজ সিহানু, ছাত্রলীগ নেতা রোকন উদ্দিন, শাওন প্রমুখ।

মানববন্ধনে অংশ নিয়ে কুমিল্লা জেলা পরিষদের প্রশাসক মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘সেনাবাহিনীর এলাকায় নিরাপত্তার বেষ্টনীর মধ্যে তনুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’

সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের ঘটনার ৫দিন পার হলেও প্রশাসন নীরব। তনু হত্যাকারীদের ফাঁসিতে না ঝুলিয়ে রাজপথ থেকে আমাদের সরানো যাবে না।’

তারা বলেন, প্রশাসন যদি তনু হত্যাকারীরে গ্রেফতার না করে নীরব ভূমিকা পালন করে, তাহলে পরবর্তী পদক্ষেপ হবে ভিক্টোরিয়া কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা। রেল লাইনসহ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ, ডিসি অফিস অবরোধ, থানা অবরোধ, শিক্ষকদের কর্মবিরতি। প্রয়োজন হলে আমরণ অনশন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ-মিছিল নিয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. হাসানুজ্জামাল কল্লোল এবং পুলিশ সুপারের কাছে স্মরকলিপি জমা দেন।

কান্দিরপাড়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে এসে দুঃখ প্রকাশ করেন সহ-পুলিশ সুপার ইমতিয়াজ আহমেদ, কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আবদুর রব। তারা শিগগিরই অপরাধীদের শনাক্ত করার আশ্বাস দেন।

২০ মার্চ সন্ধ্যায় টিউশনি করে বাসায় ফেরার পথে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা করা হয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুকে। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ময়নামতি সেনানিবাস এলাকার পাওয়ার হাউসের পানির ট্যাংকের পাশে তনুর মরদেহ খুঁজে পান তার বাবা।

তনুর বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী হিসেবে কাজ করেন। ঘটনার দিন তিনি রাত সোয়া ১০টার দিকে বাসায় ফিরে শোনেন মেয়ে বাসায় ফেরেনি। তখন তাকে খুঁজতে গিয়ে সন্তানের নিথর মরদেহটিই পান।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর