হাওর বার্তা ডেস্কঃ মরুর বুকে রাতের অন্ধকার ভেদ করে বল আছড়ে পড়ছিল গ্যালারিতে। জাতিন্দার-প্রজাপতিদের চার-ছক্কাগুলো সাড়ে ৩ হাজার কিলোমিটার দূরের বাংলাদেশের অলিগলিতে যেন চাবুকের আঘাত হয়ে ধরা দিচ্ছিল। ১৭ কোটি মানুষের হৃদকম্পন তুললেও শেষ পর্যন্ত ওমান আর পেরে উঠেনি। খাদের কিনারে পড়তে পড়তেও মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ।
ব্যাটসম্যানদের পর বোলাদের লড়াকু পারফরম্যান্সে গতকাল ওমানের বিপক্ষে বহুল কাঙ্ক্ষিত জয়ে টি-২০ বিশ্বকাপে টিকে রইল টাইগাররা। প্রথম রাউন্ডে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ওমানকে ২৬ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। স্কটল্যান্ডের কাছে হারে বিষম চাপে পড়েছিল টাইগাররা। বিশ্বকাপের স্বপ্নযাত্রা পড়ে গিয়েছিল দুশ্চিন্তার বেড়াজালে। অবশেষে ওমানের বিপক্ষে জয়ে স্বস্তি ফিরল ক্রিকেটপ্রেমীদের মাঝে।
বিশ্বকাপের সুপার-১২ পর্বে উঠতে হলে আগামীকাল (২১ অক্টোবর) গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচেও পাপুয়া নিউগিনিকে হারাতে হবে বাংলাদেশকে। পরে ওমান-স্কটল্যান্ড ম্যাচের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। যেখানে ওমানের হার দেখতেই মুখিয়ে থাকবে মাহমুদউল্লাহ বাহিনী।
মাসকাটের আল-আমিরাত স্টেডিয়ামে গতকাল টসজয়ী বাংলাদেশ ২০ ওভারে ১৫৩ রানে অলআউট হয়। জবাবে বাংলাদেশকে কাঁপিয়ে দিলেও ৯ উইকেটে ১২৭ রানের বেশি যেতে পারেনি ওমান। ব্যাটিংয়ে ৪২ রান, বোলিংয়ে ২৮ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন সাকিব আল হাসান।
বোলিংয়ে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল খুবই বাজে। এলোমেলো বোলিং, ক্যাচ মিসের মহড়ায় চাপে পড়ে যায় টাইগাররা। সাকিব, মুস্তাফিজ, তাসকিনদের ওপর ঝড় বইয়ে দিচ্ছিলেন ওমানের ব্যাটসম্যানরা। পালটা আক্রমণে ২ ওভারেই ২৪ রান তুলে ফেলে ওমান। নিজের প্রথম বলে উইকেট নিলেও পাঁচ ওয়াইডসহ ১১ বলে দ্বিতীয় ওভার শেষ করেছিলেন মুস্তাফিজ। সাইফউদ্দিনের করা পরের ওভারের চতুর্থ বলে শর্ট থার্ড ম্যানে ক্যাশাপ প্রজাপতির ক্যাচও ফেলেন তিনি। ষষ্ঠ ওভারে মুস্তাফিজের বলে একই ব্যাটসম্যানের সহজ ক্যাচ ছাড়েন মাহমুদউল্লাহ। দুই বল পর প্রজাপতি ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। তিনি ২১ রান করেন।
কিন্তু জাতিন্দার ও অধিনায়ক জিশান মাকসুদ তোপ দাগাচ্ছিলেন। মাকসুদকে থামান মেহেদী। ১৩তম ওভারে বাংলাদেশের গলার কাঁটা হয়ে থাকা জাতিন্দারকে ফেরান সাকিব। তারপরই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পায় টাইগাররা। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। জাতিন্দার ৪০, প্রজাপতি ২১, মাকসুদ ১২ রান করেন। বাংলাদেশের মুস্তাফিজ ৪টি, সাকিব ৩টি, সাইফউদ্দিন, মেহেদী ১টি করে উইকেট নেন।
এর আগে নাঈম শেখ ও সাকিবের ব্যাটে বড় স্কোরের সম্ভাবনা জেগেছিল। কিন্তু শেষ ৫ ওভারে ৪১ রানের বেশি তুলতে পারেনি বাংলাদেশ। উলটো হারিয়েছিল ৬ উইকেট।
স্কটিশদের বিপক্ষে একাদশে ব্রাত্য হয়ে থাকা নাঈমই গতকাল দলের স্কোরের মূল রসদ যুগিয়েছেন। বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচেই হাফ সেঞ্চুরির গৌরব অর্জন করেন এ বাঁহাতি ওপেনার। বাংলাদেশের পক্ষেও এবারের আসরে এটি প্রথম হাফ সেঞ্চুরি। ১৭তম ওভারে আউট হওয়ার আগে ৫০ বলে ৬৪ রান (৩ চার, ৪ ছয়) করেন তিনি।
লিটন দাস (৬) ও মেহেদী হাসান (০) ব্যর্থ হলেও চারে নেমে সাকিবের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়েই ওমানের বোলারদের তৈরি করা চাপের বাঁধন ভাঙে বাংলাদেশ। তৃতীয় উইকেটে সাকিব-নাঈম ৮০ রানের জুটি গড়েন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে রানআউট হওয়ার আগে সাকিব ২৯ বলে ৬টি চারে ৪২ রানের ইনিংস খেলেন। ২০১০ সালের পর দ্বিতীয়বার আট নম্বরে নেমে মুশফিক ৬ রান করেন। শেষ দিকে মাহমুদউল্লাহর ১৭ রানেই দেড় শ পার হয় বাংলাদেশের স্কোর। ওমানের বিলাল খান-ফায়াজ বাট ৩টি করে, কালিমউল্লাহ ২টি ও জিশান মাকসুদ ১টি করে উইকেট পান।