আমোদ-প্রমোদ আর বিলাসী অবকাশযাপনে সহায়ক রিসোর্ট ব্যবসার যেনো হিড়িক পড়েছে বাংলাদেশে। এমনই এক রিসোর্টের নাম দ্য প্যালেস রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা। তবে হবিগঞ্জের বাহুবলে দেড়শ’ একর পাহাড়ি এলাকা জুড়ে গড়ে তোলা এ রিসোর্টটিতে বিশেষ কায়দায় ব্যবসা ফাঁদা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধকে পুঁজি করে।
বিলাসবহুল এ রিসোর্টের সবচেয়ে খরুচে দু’টি প্রেসিডেন্সিশাল ভিলার একটির নাম রবিশঙ্কর, অন্যটির জর্জ হ্যারিসন।
বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন মানের হোটেল-রিসোর্টে থাকার অভিজ্ঞতা আছে এমন অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাধারণত কোনো স্যুইট, ভিলা বা রিসোর্টের বিশেষ আবাসের নাম হয় ফুল, পাখি বা নদীর নামে। কিন্তু বিদেশি কোনো ব্যক্তির নামে এভাবে রিসোর্টের বিশেষ আবাস এলাকার নামকরণ অভিনবই বটে।
অভিজ্ঞ ভ্রমণকারীরা মনে করছেন, ব্যবসায়িকভাবে ফায়দা লুটতেই প্যালেস কর্তৃপক্ষ রবিশঙ্কর ও হ্যারিসনকে এভাবে ব্যবহার করেছেন। কিন্তু যার যার অবস্থানে থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সচেতনতা গড়া ও তহবিল সংগ্রহের কাজ করায় এই দুই বিদেশি বিশেষভাবে সম্মানীয়। আর দ্য প্যালেস রিসোর্টের প্রেসিডেন্সিয়াল ভিলার মতো খরুচে আবাসে কার্যত প্রমোদপ্রিয় ক্লায়েন্টদেরই যাওয়ার কথা। তাই এমন নামকরণ নেহায়েতই অনুচিত হয়েছে।
বিষয়টি সম্পর্কে খোলাসা হতে দ্য প্যালেস রিসোর্টের ওয়েবসাইটে দেওয়া ফোনে যোগাযোগ করলে রবিশঙ্কর ও জর্জ হ্যারিসনের নামে দুটি বিলাসবহুল ভিলা থাকার কথা স্বীকার করা হয়। বলা হয়, ৩ রুমের এমন প্রতিটি ভিলার এক রাতের ভাড়া পড়ছে ১ লক্ষ ৫১ হাজার ৮শ’ টাকা।
তবে তাদের ওয়েবসাইটি আগ্রহের তৃষ্ণা মেটাতে পুরোপুরি ব্যর্থ।
ওয়েবসাইট খুললেই চোখে পড়বে সবুজ গাছ-গাছালি ছাওয়া পাহাড়ের ওপর আলো ঝলমল রিসোর্টের বেশ কয়েকটি ছবির স্লাইড শো। তবে ওয়েব সাইটে কোনো রুম ভাড়া দেখার সুযোগ নেই। নেই বিদ্যমান সুযোগ-সুবিদার বিস্তারিত বিবরণও।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে প্যালেস কর্তৃপক্ষ জানায়, ওয়েবসাইট ডেভেলপের কাজ চলছে। ভাড়া ও রুমের বিবরণ চাইলে তারা মেইল করে দেবে।
তাদের মেইল করা চার্টে দেখা গেলো, এ রিসোর্টের উইকএন্ড ও উইক ডে এর ভাড়া ভিন্ন। সবচেয়ে কম ভাড়া এক্সিকিউটিভ কিং এর। বিশেষ ছাড়ে এর মূল ভাড়া ১০ হাজার টাকা। এর সঙ্গে আরো ২৫ শতাংশ চার্জ (১০ শতাংশ সার্ভিস চার্জ ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট) যুক্ত হলে হয় সাড়ে ১২ হাজারের বেশি। আর সাধারণ সময়ে উইক ডেতে এর ভাড়া সাড়ে ১২ হাজার টাকা। চার্জ যুক্ত হওয়ার পর যা হয় সাড়ে ১৫ হাজারেরও বেশি। উইকএন্ডে এই ভাড়া বেড়ে হয় প্রায় ১৭ হাজার টাকা। এর মানে হলো সাধারণ সময়ে উইকএন্ডে ছুটি কাটতে গেলে এই রিসোর্টে এক দিনের সর্বনিম্ন ভাড়াই পড়বে ১৭ হাজার টাকা।
এছাড়া সিগনেচার কিং, সিগনেচার টুইন এবং এক, দুই বা তিন বেডরুমের সাধারণ ভিলাতে থাকা যায় ২০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা ভাড়ায়।
তবে প্রেসিডেন্সিশায় ভিলার মূল ভাড়া ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। সব চার্জ দিয়ে যা দাঁড়ায় এক লক্ষ ৫১ হাজার ৮শ’ টাকায়। এ ভাড়ার কোনো মৌসুমেই কোনো হেরফের নেই। হেলিপ্যাড আর প্রাইভেট বাগান আছে এসব ভিলায়।
বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার চেক ইন করলে উইকএন্ড হিসেবে ধরা হয়। আর রোববার থেকে বুধবার পর্যন্ত চেক ইন করলে ধরা হবে উইক ডে হিসেবে।
এক্সিকিউটিভ কক্ষ আর সিগনেচার কক্ষগুলো টাওয়ার ভবনে। এই ভবনে মোট কক্ষ আছে ১০৭টি। এছাড়া আছে মোট ২২টি ভিলা।
আগামী ১৯ জুন পর্যন্ত বিভিন্ন কক্ষের ভাড়ায় ছাড় থাকলেও প্রেসিডেন্সিশায় ভিলায় কোনো ছাড় নেই।