ঢাকা ০৭:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ০১ জানুয়ারী ২০২৫, ১৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বেগুনি ধানে রঙিন দিনের হাতছানি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৫৩:০৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ অক্টোবর ২০২১
  • ১৮৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলায় রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক থেকে পূর্বে ধাপেরহাট-বকশিগঞ্জ সড়ক। গ্রামীণ পিচঢালা সড়কের দুপাশে যে দিকেই চোখ যায় শুধুই সবুজের সমারোহ।

এ গ্রামে প্রথমবারের মত দুইটি জমিতে বেগুনি ধান চাষ করেছেন এম এস রহমান নামে এক চাষি। তিনি ওই গ্রামের আব্দুল শেখের ছেলে। তিনি স্থানীয় ছফিরন নেছা আব্দুল শেখ টেকনিক্যাল বিএম মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ। ওই কলেজের সামনে ৩৪ শতক জমিসহ পাশে ২২ শতক জমিতে বেগুনি ধান চাষ করেছেন তিনি।

মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে সরেজমিন তার বেগুনি ধান ক্ষেত ঘুরে দেখা যায়, চারদিকে মাঠের পর মাঠ আমন ধান। মৃদু বাতাসে দোল খাচ্ছে শিষসহ ধানগাছ গুলো। দূর থেকে মনে হয় ঢেউ খেলছে। বিস্তীর্ণ সবুজের মধ্যে শোভা পাচ্ছে বেগুনি রঙের ধান ক্ষেত। এই বেগুনি রং প্রকৃতিতে এনেছে নতুনমাত্রা।

কথা হয় চাষি এম এস রহমানের সঙ্গে। তিনি  বলেন, প্রথমত বেগুনি ধানের রঙ ও গুণাগুণ সম্পর্কে জানতে পেরে এ ধান চাষে উদ্ধুদ্ধ হই। পরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর পঞ্চগড় থেকে ১৮শ টাকায় ৬ কেজি বীজ ধান সংগ্রহ করি। চলতি আমন মৌসুমে তা থেকে চারা তৈরি করে জমিতে রোপণ করছি। এ ধানের চারা ২০/২২ দিন পর জমিতে রোপণের নিয়ম থাকলেও অজ্ঞতাবশত এক মাস পর চারা রোপণ করা হয়েছে। তারপরেও ফলন ভাল হবে বলে আশা করছি। আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে ধান কাটার উপযুক্ত হবে। এ মৌসুমে ৫৬ শতক জমি থেকে তিনি ৪০ মণ ধান প্রতাশা করছেন। এ ধান চাষে কোন মৌসুম ভাল তা নিশ্চিত হতে সামনের বোরো মৌসুমেও তিনি বেগুনি ধান চাষ করবেন।

বেগুনি ধানের পরিচর্যা সম্পর্কে তিনি জানান, এটা নতুন ধান। এ বিষয়ে পরিপূর্ণ ধারণা আমার নেই। সে কারণে স্বাভাবিক অন্যান্য ধানের মত করেই জৈবসার-কীটনাশকসহ অন্যান্য পরিচর্যা করা হচ্ছে।

তিনি আরো জানান, বেগুনি ধানের চাল পুষ্টিগুণে ভরপুর। এ চালের ভাত থেকে শরীরে ডায়াবেটিস-ক্যানসারসহ নানা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি হয়। বেগুনি রঙের ধানের শিষ সাধারণ উফশী ধানের মতোই। কুশির সংখ্যা তুলনামূলক বেশি হওয়ায় এ ধানের ফলন বেশি হয়। জীবনকাল অন্যান্য উফশী ধানের মতোই ১৪০ থেকে ১৫০ দিন।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সম্ভাবনার বিষয়ে তিনি বলেন, ভালো ফলন পেলে আগামীতে আরো বেশি জমিতে বেগুনি ধানচাষের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া প্রতিবেশীসহ এলাকার অনেক চাষি আমার জমির দিকে নজর রাখছে। আমার সফলতা দেখলে তারাও এ ধান চাষ শুরু করবে।

বেগুনি ধান ক্ষেতের পাশের জমির মালিক ওই গ্রামের শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বেগুনি ধান চাষ অত্যন্ত লাভজনক। বেগুনি ধান-চালের পাশাপাশি ৩শ টাকা কেজিতে ধানবীজ বিক্রির বিষয়টি বেশ উৎসাহ জাগিয়েছে। আগামী মৌসুমে পাশের জমি মালিকের ফলাফল দেখে বীজ সংগ্রাহ করে বেগুনি ধান চাষ করবো।

এর আগে ২০১৮ সালে জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার রামজীবন ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের দুলালী বেগম নামে এক নারী বেগুনি রঙের ধান চাষ করেন। সেই ধান নিয়ে স্থানীয়ভাবে হইচই শুরু হয়। পরে সুন্দরগঞ্জসহ সাদুল্লাপুর উপজেলার কয়েকজন চাষি বেগুনি ধানে উৎসাহিত হন। তারা প্রতি বিঘায় ২০ মণ ধান পান। পরবর্তীতে অজ্ঞাত কারণে বেগুনি ধান চাষ বন্ধ হয়ে যায়।

এ ব্যাপারে গাইবান্ধা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. বেলাল উদ্দিন জানান, গত দু-এক বছর ধরে জেলায় বেগুনি ধান চাষের কোনো রেকর্ড ছিল না। চলতি আমন মৌসুমে সাদুল্লাপুর উপজেলায় এম এস রহমান নামে এক চাষি বেগুনি ধান চাষ করেছেন। সংশ্লিষ্ট উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তার ধানক্ষেত পরিদর্শনসহ প্রয়োজনীয় পরাদর্শ দিচ্ছেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বেগুনি ধানে রঙিন দিনের হাতছানি

আপডেট টাইম : ১১:৫৩:০৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ অক্টোবর ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলায় রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক থেকে পূর্বে ধাপেরহাট-বকশিগঞ্জ সড়ক। গ্রামীণ পিচঢালা সড়কের দুপাশে যে দিকেই চোখ যায় শুধুই সবুজের সমারোহ।

এ গ্রামে প্রথমবারের মত দুইটি জমিতে বেগুনি ধান চাষ করেছেন এম এস রহমান নামে এক চাষি। তিনি ওই গ্রামের আব্দুল শেখের ছেলে। তিনি স্থানীয় ছফিরন নেছা আব্দুল শেখ টেকনিক্যাল বিএম মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ। ওই কলেজের সামনে ৩৪ শতক জমিসহ পাশে ২২ শতক জমিতে বেগুনি ধান চাষ করেছেন তিনি।

মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে সরেজমিন তার বেগুনি ধান ক্ষেত ঘুরে দেখা যায়, চারদিকে মাঠের পর মাঠ আমন ধান। মৃদু বাতাসে দোল খাচ্ছে শিষসহ ধানগাছ গুলো। দূর থেকে মনে হয় ঢেউ খেলছে। বিস্তীর্ণ সবুজের মধ্যে শোভা পাচ্ছে বেগুনি রঙের ধান ক্ষেত। এই বেগুনি রং প্রকৃতিতে এনেছে নতুনমাত্রা।

কথা হয় চাষি এম এস রহমানের সঙ্গে। তিনি  বলেন, প্রথমত বেগুনি ধানের রঙ ও গুণাগুণ সম্পর্কে জানতে পেরে এ ধান চাষে উদ্ধুদ্ধ হই। পরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর পঞ্চগড় থেকে ১৮শ টাকায় ৬ কেজি বীজ ধান সংগ্রহ করি। চলতি আমন মৌসুমে তা থেকে চারা তৈরি করে জমিতে রোপণ করছি। এ ধানের চারা ২০/২২ দিন পর জমিতে রোপণের নিয়ম থাকলেও অজ্ঞতাবশত এক মাস পর চারা রোপণ করা হয়েছে। তারপরেও ফলন ভাল হবে বলে আশা করছি। আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে ধান কাটার উপযুক্ত হবে। এ মৌসুমে ৫৬ শতক জমি থেকে তিনি ৪০ মণ ধান প্রতাশা করছেন। এ ধান চাষে কোন মৌসুম ভাল তা নিশ্চিত হতে সামনের বোরো মৌসুমেও তিনি বেগুনি ধান চাষ করবেন।

বেগুনি ধানের পরিচর্যা সম্পর্কে তিনি জানান, এটা নতুন ধান। এ বিষয়ে পরিপূর্ণ ধারণা আমার নেই। সে কারণে স্বাভাবিক অন্যান্য ধানের মত করেই জৈবসার-কীটনাশকসহ অন্যান্য পরিচর্যা করা হচ্ছে।

তিনি আরো জানান, বেগুনি ধানের চাল পুষ্টিগুণে ভরপুর। এ চালের ভাত থেকে শরীরে ডায়াবেটিস-ক্যানসারসহ নানা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি হয়। বেগুনি রঙের ধানের শিষ সাধারণ উফশী ধানের মতোই। কুশির সংখ্যা তুলনামূলক বেশি হওয়ায় এ ধানের ফলন বেশি হয়। জীবনকাল অন্যান্য উফশী ধানের মতোই ১৪০ থেকে ১৫০ দিন।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সম্ভাবনার বিষয়ে তিনি বলেন, ভালো ফলন পেলে আগামীতে আরো বেশি জমিতে বেগুনি ধানচাষের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া প্রতিবেশীসহ এলাকার অনেক চাষি আমার জমির দিকে নজর রাখছে। আমার সফলতা দেখলে তারাও এ ধান চাষ শুরু করবে।

বেগুনি ধান ক্ষেতের পাশের জমির মালিক ওই গ্রামের শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বেগুনি ধান চাষ অত্যন্ত লাভজনক। বেগুনি ধান-চালের পাশাপাশি ৩শ টাকা কেজিতে ধানবীজ বিক্রির বিষয়টি বেশ উৎসাহ জাগিয়েছে। আগামী মৌসুমে পাশের জমি মালিকের ফলাফল দেখে বীজ সংগ্রাহ করে বেগুনি ধান চাষ করবো।

এর আগে ২০১৮ সালে জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার রামজীবন ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের দুলালী বেগম নামে এক নারী বেগুনি রঙের ধান চাষ করেন। সেই ধান নিয়ে স্থানীয়ভাবে হইচই শুরু হয়। পরে সুন্দরগঞ্জসহ সাদুল্লাপুর উপজেলার কয়েকজন চাষি বেগুনি ধানে উৎসাহিত হন। তারা প্রতি বিঘায় ২০ মণ ধান পান। পরবর্তীতে অজ্ঞাত কারণে বেগুনি ধান চাষ বন্ধ হয়ে যায়।

এ ব্যাপারে গাইবান্ধা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. বেলাল উদ্দিন জানান, গত দু-এক বছর ধরে জেলায় বেগুনি ধান চাষের কোনো রেকর্ড ছিল না। চলতি আমন মৌসুমে সাদুল্লাপুর উপজেলায় এম এস রহমান নামে এক চাষি বেগুনি ধান চাষ করেছেন। সংশ্লিষ্ট উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তার ধানক্ষেত পরিদর্শনসহ প্রয়োজনীয় পরাদর্শ দিচ্ছেন।