ঢাকা: কৃষিজমি সাশ্রয় করে টেকসই, পরিবেশবান্ধব নির্মাণের পাশাপাশি উন্নত স্থাপত্যশিল্প সমৃদ্ধ স্থাপনা নির্মাণ করতে স্থপতিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আমাদের স্থাপনাগুলো এমনভাবে করতে হবে যেন আজকে থেকে কয়েকশ’ বছর পরেও সেটা টিকে থাকে। … স্থাপত্যের মাধ্যমে আমরা যেমন প্রাচীন সভ্যতা, অতীতকে জানতে পারি, তেমনি স্থাপত্যের মাধ্যমে আমরা ভবিষ্যতকেও জানতে পারি’।
রোববার (২০ মার্চ) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশে স্থপতি ইন্সটিটিউটের নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলে প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্থাপনায় সবকিছুর একটা প্রতিফলন থাকবে, যাতে ভবিষ্যতের প্রজন্ম তারা যেন শিখতে পারে, জানতে পারে, উপলদ্ধি করতে পারে- কি সংস্কৃতি ছিলো, আমাদের জীবনযাত্রা কেমন ছিলো বা আমরা কিভাবে চিন্তা-ভাবনা করতাম’।
স্থাপত্যশিল্প একটা সভ্যতার মাপকাঠি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
দেশের সম্পদ ব্যবহার করে দেশের উপযোগী করে স্থাপত্য তৈরি করতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি নির্মাণ কাজে দেশের আবহাওয়া, জলবায়ু, পরিবেশ সবকিছু মাথায় রেখে স্থাপনা হওয়া উচিত।
কৃষিজমি রক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ভৌগলিক সীমারেখার তুলনায় জনসংখ্যা বিশাল। আমাদের প্রতিটি পরিকল্পনা নিতে হবে এমনভাবে যেন কৃষি উপযোগী জমি বাঁচানো যায়।
ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলাসহ বিভিন্ন পর্যায়ে বসত-বাড়ি তৈরির সময় জমি স্বল্পতার কথা চিন্তা করে, ভবিষ্যৎ জনসংখ্যা বৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে বহুতল ভবন নির্মাণ এবং ফ্ল্যাটবাড়িতে থাকার বিষয়ে মানুষকে আস্তে আস্তে অভ্যাসে পরিণত করার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
তৃণমূল পর্যন্ত মাস্টারপ্ল্যান করার নির্দেশনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সেখানে যাতায়াতের ব্যবস্থা থাকবে, হাসপাতাল, স্কুল থাকবে, সঙ্গে ফসলি জমি থাকবে, গ্রামীণ পরিবেশ থাকবে। তাতে দেখতেও সুন্দর লাগবে, পরিবেশও ভালো থাকবে।
পরিবেশ রক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, পরিকল্পনা বা ডিজাইন করার সময় আপনারা যদি পরিবেশের দিকে লক্ষ্য রাখেন, এই খাল, নদী ভরাট না করে কিভাবে নির্মাণ করা যায়, সেদিকে দৃষ্টি দিলে আমাদের দেশের পরিবেশটা রক্ষা পায়।
রাজধানীর পরিবেশ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকায় ও ঢাকাকে ঘিরে অনেক খাল, পুকুর, নদী ছিলো। মতিঝিলে ঝিল ছিলো, তা বন্ধ করেছিলো আইয়ুব খান। পান্থপথ এটা খাল ছিলো। এই খালের দুই পাশে যদি রাস্তা করে দিতো, গাছ থাকতো, তবে এখানকার পরিবেশ কতো চমৎকার হতো।
হাসপাতাল, শিল্প এলাকা, অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ শহরগুলোর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা রাখার পাশাপাশি জলাধার রাখার ওপর গুরুত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী।
কনসালটেন্সি করার সময় দেশি কনসালটেন্টদের অগ্রাধিকার দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশি লোক দিয়ে কনসালটেনন্সি করাতে হবে কেন? আমাদের দেশে কনসালটেন্সি করার মতো কি যোগ্য লোক নাই নাকি? যিনি আমার দেশকে চেনেন, এই মাটিকে চেনেন, এখানকার আবহাওয়া চেনেন, তারাই তো ভালো করবেন। আমাদের দেশের মানুষের কি মেধা জ্ঞান কম আছে? কনসালটেনন্সি করে টাকা নিয়ে যাবে, এটা যেন না হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, স্থপতি ইন্সটি্টিউটের সভাপতি আবু সাঈদ এম আহমদ ও মহাসচিব কাজী এম আরিফ প্রমুখ।