আন্দোলন-সংগ্রাম তো দূরের কথা, কর্মসূচি থেমে যাওয়ার পরও দেখা মেলেনি তাদের। অথচ দল পুনর্গঠনের খবরে শেষ পর্যন্ত প্রকাশ্যে এলেন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে তাদের দেখা মিললো ঢাকার রাজপথে। অনেকে আবার দলের চেয়ারপারসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ব্যক্তিগত গাড়ি ছেড়ে ঘুরেছেন মোটরসাইকেলে করে।
তবে এসব নেতার প্রায় সবার বিরুদ্ধেই আছে অসংখ্য মামলা। কারো বিরুদ্ধে হুলিয়াও জারি আছে । কিন্তু দুই একজন ছাড়া অন্যরা আত্মগোপনে থেকেই আসামি হয়েছেন। আজ প্রকাশ্যে ঘুরলেও পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
আজ শনিবার ছিল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। দিনটি উপলক্ষে বিএনপিও অঙ্গ সংগঠনের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। সকালে রাজধানীর শেরে বাংলানগরে অবস্থিত জিয়ার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি। বেলা ১২টার পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে খালেদা জিয়া দুস্থদের মাঝে খাবার বিরতণ করেন। এসময় দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকা নেতাদেরকে খালেদা জিয়ার আশপাশ দিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়।
তবে এদের মধ্যে কাউকে কাউকে আজকের কর্মসূচির আগেও প্রকাশ্যে দেখা গেছে।
সবচেয়ে বেশিদিন আত্মগোপনে থাকা নেতাদের মধ্যে আজ যাদের দেখা গেল তাদের মধ্যে রয়েছেন-বিএনপির অর্থ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগরের সাবেক সদস্য সচিব আবদুস সালাম, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার।
এছাড়াও যুবদল নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ও ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী বাবু, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলেরও দেখা মিললো আজ রাজপথে।
আর সারাক্ষণই খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের সামনে মোটরসাইকেলে দেখা গেছে ছাত্রদল সভাপতি রাজিব আহসান, সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানকে।
এছাড়াও জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীকে ঘিরে রাজধানীতে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের অনেক নেতাকে দেখা গেছে যারা বিগত আন্দোলনের শুরু থেকে আত্মগোপনে ছিলেন।
এদিকে দীর্ঘদিন পর নেতাকে কাছে পেয়ে তাদের সমর্থকদের মধ্যে শোকের দিনেও খুশির আমেজ লক্ষ্য করা গেছে। রাজধানীতে তিন দিনের কর্মসূচির প্রথম দিনে ২০টির বেশি স্পটে দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করেন খালেদা জিয়া। এসময় তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিপুলসংখ্যক মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দিতে দেখা গেছে।
খালেদা জিয়া বারবার আন্দোলনে নামার আহ্বান জানালেও বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের মাঠে নামাতে পারেননি। বেশিরভাগই ছিলেন নিষ্ক্রিয়। কিন্তু আন্দোলনে ছিলেন এমন নেতাদের দিয়ে তিনি দল পুনর্গঠনের ঘোষণা দেয়ায় এসব নেতারা নড়েচড়ে বসেন। তারই অংশ হিসেবে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকলেও তারা এখন প্রকাশ্যে এসেছেন বলে জানা গেছে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, দল পুনর্গঠনের আগে খালেদা জিয়া নানাভাবে তথ্য সংগ্রহ করছেন। এর আলোকেই আগামীতে দলে পদ দেয়া হবে। সেক্ষেত্রে কোনো সুপারিশ আমলে নেয়া হবে না বলেও জানা গেছে। এ কারণে আন্দোলনে ছিলেন না এমন নেতাদের মধ্যে ‘পদ হারানোর’ আতঙ্ক চেপে বসেছে।
এ বিষয়ে বিএনপির একজন মধ্যম সারির নেতার সঙ্গে কথা বললে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, “পদ থাকবে না এই ভয়ে আজ সবাই মাঠে নামছে। কর্মসূচি শেষ হলে হয়তো আবার এরা আত্মগোপনে যাবেন। আর পুলিশ নাকি এদের সবসময় খুঁজে কিন্তু আজকে পুলিশের সামনে ঘুরছে অথচ কিছু বলছে না। এটা জেনেই তারা কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন।”
জানা গেছে, এদের মধ্যে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, ইসহাক সরকারের বিরুদ্ধে একশোর বেশি মামলা রয়েছে। এদের মধ্যে ইসহাক সরকারের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি আছে বলে দাবি বিএনপির।
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এই প্রতিবেদকের কথা হয় ইসহাক সরকারের সঙ্গে। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, “ভাই কোনো মতে বেঁচে আছি। শারীরিকভাবে ভালো থাকলেও মানসিকভাবে কেমন আছি বুঝতেই তো পারছেন। দোয়া করবেন।” এরচেয়ে বেশি কিছু বলতে রাজি হননি ছাত্রদলের এই শীর্ষ নেতা।