ঢাকা কলেজের একজন নেহাল আহমেদ ছিলেন

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঢাকা কলেজ! মানে মাত্র দুটি শব্দ নয়। গত বিংশ ও ঊনবিংশ শতাব্দী একটি বিস্ময়কর আবিষ্কার। ভারতীয় উপমহাদেশের আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার অন্যতম পথিকৃৎ। ঢাকা কলেজ এখন ১৮০ বছর পার করছে। সুদীর্ঘ এই গৌরবময় পথচলায় ইতিহাস ঐতিহ্যের বিদ্যাপীঠটির এ পর্যন্ত ৭১ জন অধ্যক্ষ ছিলেন। তারা প্রত্যেকেই ঢাকা কলেজকে সেরা করার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। কিন্তু বর্তমানে যে ঢাকা কলেজ দেশের সেরা আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তার সম্পূর্ণ কৃতিত্বের দাবিদার ঢাকা কলেজের সদ্য সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক নেহাল আহমেদ।

করোনা সংক্রমণের শুরুতে সরকারের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে না থেকে সারাদেশের এইচএসসি শিক্ষার্থীদের প্রথম অনলাইন ক্লাসের আওতায় এনেছিলেন ঢাকা কলেজের সদ্য সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর নেহাল আহমেদের নেতৃত্বে এক ঝাঁক মেধাবী শিক্ষক।

সেই উদ্যোগের স্বীকৃতি হিসেবে গত ১১ ডিসেম্বর শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আইসিটিখাতে সেরা কলেজের সম্মাননা পেয়েছে ঢাকা কলেজ। বর্তমানে আধুনিক ঢাকা কলেজের অন্যতম রূপকার হলেন অধ্যাপক নেহাল আহমেদ।

ঢাকা কলেজের ছাত্রদের একটি আস্থার জায়গা ছিলেন অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। ঢাকা কলেজের এই দশকের সবচেয়ে সেরা অধ্যক্ষ হলেন অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। কারণ তিনিই ছাত্রদের প্রায় সকল দাবি পূরণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

একজন সফল স্বপ্নদ্রষ্টার ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের কিছু দিক তুলে ধরা হলো:

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের একটি অন্যতম দাবি ছিল নতুন বাসের ব্যবস্থা করা। তিনি ঢাকা কলেজকে ৪টি নতুন বাসের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। ফলে ছাত্রদের দীর্ঘদিনের যাতায়াতের সমস্যার সমাধান হয়েছে। বর্তমানে শিক্ষার্থীরা কোন সমস্যা ছাড়াই রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে ঠিক সময়ে ক্লাসে উপস্থিত থাকতে পারে।

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল কলেজের মসজিদটি দোতলায় সম্প্রসারিত করার। ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মকর্তা- কর্মচারী ছাড়াও বিভিন্ন প্রান্তের মুসল্লি এখানে সমবেত হত। স্থান সংকুলান না হওয়ায় বরাবরই রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে নামাজ আদায় করতেন। মসজিদের দোতলা ভবন উদ্বোধন করার মাধ্যমে সেই দাবি পূরণ করেছেন ঢাকা কলেজের একালের সেরা অধ্যক্ষ অধ্যাপক নেহাল আহমেদ।

ঢাকা কলেজের ৮টি ছাত্রাবাসের জন্য একটি খেলার মাঠ ছিল। তবে সেই খেলার মাঠে ছিল খেলার অনুপযোগী। বর্ষা মৌসুমে প্রায় পানি জমে থাকত। এবং সেখানে ময়লা আবর্জনা থেকে মশা উৎপন্ন হত। ঢাকা কলেজের ছাত্রাবাসে আবাসিক ছাত্রদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এই মাঠটির সংস্কারের। অধ্যাপক নেহাল আহমেদ ছাত্রদের কষ্টের কথা চিন্তা করে সেই মাঠটি সম্পূর্ণ খেলার উপযোগী করেন এবং চারদিকে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বাতি দিয়ে আলোর ব্যবস্থা করেন। সেখানে সব সময় অন্ধকার ছিল। অধ্যাপক নেহাল আহমেদ ঢাকা কলেজের সকল স্থানকে অন্ধকার থেকে আলোয় আলোকিত করেছেন।

কলেজে প্রবেশ করতেই প্রশাসনিক ভবনের পাশে শিক্ষার্থীদের বাসার জন্য স্বাধীনতা চত্বর নির্মান করেন ছাত্রবান্ধব অধ্যক্ষ অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। পূর্বে ছাত্রদের বসার তেমন কোন ব্যবস্থা ছিল না। ১৮ একরের এই সুবিশাল ক্যাম্পাসে তিনি ছাত্রদের বসার জন্য মাঠের, পুকুরের পাশে স্থায়ী ব্যবস্থা করে দেন।

এছাড়া ঢাকা কলেজের সার্বিক অবকাঠামো উন্নয়নে এক অনন্য নাম অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। তিনি ছাত্রদের বিশুদ্ধ পানির জন্য ঢাকা ওয়াসার নিজস্ব পানির পাম্প স্থাপন করেছেন।যাতে করে ছাত্রদের বিশুদ্ধ পানির পানের সমস্যা না হয়। কলেজের দীর্ঘদিন ধরে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা বেহাল ছিল। কোন ঢাকনা ছিল না। তিনি সেই সমস্যাও দূর করেন। এবং তিনি নতুন করে বাস ডিপো একাডেমিক ভবনের নিরাপত্তা বেষ্ঠনী নির্মান করেছেন।

অধ্যাপক নেহাল আহমেদ তার বক্তব্যে প্রায়ই বলতেন, “ঢাকা কলেজের সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক, আবেগের সম্পর্ক,আমি যেখানেই থাকি না কেনো ঢাকা কলেজকে কখনোই ভুলতে পারব না।”ঠিক তেমনি ঢাকা কলেজের প্রায় ২৫০০০ শিক্ষার্থীরাও তার এই প্রেম প্রীতি ও ভালোবাসা কখনো ভুলতে পারবেনা। সবশেষে বলতে গেলে ঢাকা কলেজের ইতিহাস অধ্যাপক নেহাল আহমেদ ছাত্রদের মনের মনিকোঠায় থাকবে অনন্তকাল।

 

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর