ঢাকা ০৭:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শীর্ষ দূষিত নদীর দেশ বাংলাদেশ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:০৭:৪১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • ১২১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পৃথিবীর শীর্ষ দূষিত বায়ুর শহরের স্থান দখলের পর বাংলাদেশ এবার শীর্ষ দূষিত নদীর দেশ হিসেবে পরিচিত হয়েছে। বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলন এক প্রতিবেদনে বলেছে, পৃথিবীর শীর্ষ দূষিত নদীগুলোর অবস্থান এখন নদীমাতৃক বাংলাদেশে। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা, কর্ণফুলিসহ অসংখ্য নদীতীরবর্তী লক্ষ লক্ষ মানুষ, প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য নদী দূষণের শিকার। ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে বসবাসকারী প্রত্যেকেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ দূষণের শিকার। অধিকাংশ রফতানিমুখী শিল্পকারখানা প্রধানত এ দূষণের জন্য দায়ী। তাই অপ্রিয় হলেও সত্য যে আমাদের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে দূষণের ওপর।
বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলন গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে নদীদূষণ নিরসনের দাবি জানায়। বিবৃতিতে এ সংগঠনটি বলে, যেভাবে ৬০,০০০ নদী দখলদারের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, ঠিক তেমন করে যারা সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে নদীদূষণ করছে তাদের তালিকা প্রকাশ করে বিচারের আওতায় আনা হোক। ইতোমধ্যে যে নদীগুলো দূষিত হয়েছে এবং যার তলদেশে ১০/১২ ফুট পর্যন্ত ক্ষতিকর ধাতুর কঠিন স্তর পড়েছে সেগুলো অবিলম্বে দূর করার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলন।
একই সাথে বিবৃতিতে নদ-নদীর প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণ, দূষণের প্রতিকার ও দূষণকারী প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ এবং উজানের অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা প্রাপ্তিতে জাতিসংঘ পানিপ্রবাহ কনভেনশনে স্বাক্ষরসহ যৌথ নদী কমিশনে নেপাল ও চীনকে অন্তর্ভুক্তকরণের দাবি জানিয়েছে এ সংগঠনটি।
বিবৃতিতে বলা হয়, ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটারের-এ দেশে নদ নদীর প্রকৃত সংখ্যা কত সে ব্যাপারে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও বিশেষজ্ঞরা এখনো ঐক্যমত্যে পৌঁছাতে পারেননি। নদীমাতৃক আমাদের এ দেশের জন্য এটা চরম ব্যর্থতা। সরকারি সংস্থাগুলো বলছে ২৩০টি নদী আছে। উইকিপিডিয়ায় লেখা হয়েছে ৪০৫টি, শিশু একাডেমির শিশু বিশ^কোষে বলা হয়েছে ৭০০টি, লেখক সৈয়দ শামসুল হকের কবিতায় বলা হয়েছে ১৩০০টি, বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ১৫০০টির বেশি, গবেষক ইনামুল হক বলছেন প্রায় ২০০০টি নদী রয়েছে। অন্যদিকে উজানের ভিন্ন স্বীকৃত নদী ৫৭টি হলেও বাস্তবে রয়েছে ১০৭টি। বিভিন্ন সংখ্যার কারণে আমরা বিভ্রান্ত। এজন্য নদ-নদীগুলো দখলমুক্ত, প্রবাহমানও জীবন্ত রাখতে চাইলে এর প্রকৃত সংখ্যা জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে জাতির সামনে তুলে ধরতে হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, স্বাধীন বাংলাদেশের সূচনা লগ্নেই (১৯৭২ সালেবাংলাদেশ ভারত) যৌথ নদী কমিশনের যাত্রা শুরু হয়। যার লক্ষ্য হলো উজানের অভিন্ন নদীগুলোর পানি সম্পদ বণ্টন, সেচ, বন্যা ও ঘুর্ণিঝড় নিয়ন্ত্রণে যৌথ প্রচেষ্টা জোরদার ইত্যাদি। বিগত ৪৯ বৎসরে মাঝেমাঝে ঝলসে উঠলেও বর্তমানে একবারে নিশ্চুপ এ প্রতিষ্ঠানটি। বৈশি^ক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় এর কার্যক্রমকে আরো জোরালো করা এখন সময়ের দাবি। এ জন্য ‘নদী ক‚টনীতি’ কে যেমন বেগবান করতে হবে তেমনি এর পরিধি বাড়িয়ে নেপাল ও চীনকে এর অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এ ছাড়া মেকং নদী রক্ষা কমিশনের মত উজানের অভিন্ন বড় নদীগুলোর ক্ষেত্রে যেমন গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, মহানন্দা, সুরমা, কুশিয়ারা, ইত্যাদি নদীভিত্তিক পৃথক নদীকমিশন গঠন করা দরকার, যাতেকরে সত্যিকার অর্থেই নদীগুলোকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে জিইয়ে রাখা যায়। আর এটা সম্ভব তখনই যখন বাংলাদেশ জাতিসংঘ পানিপ্রবাহ কনভেনশনে (যা ইতোমধ্যে আইনে পরিণত হয়েছে) স্বাক্ষর করে ন্যায্য হিস্যার বিষয়টি জাতিসংঘে তুলে ধরবে। নদী ও পরিবেশ রক্ষায় যারা নিরলসভাবে কাজ করছে তাদের জন্য রাষ্ট্রীয় প্রণোদনা, পৃষ্ঠপোষকতা ও পুরস্কারের ব্যবস্থা করা উচিত। যাতেকরে এ ধরনের সামাজিক আন্দোলন যেন হারিয়ে না যায়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

শীর্ষ দূষিত নদীর দেশ বাংলাদেশ

আপডেট টাইম : ০৯:০৭:৪১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পৃথিবীর শীর্ষ দূষিত বায়ুর শহরের স্থান দখলের পর বাংলাদেশ এবার শীর্ষ দূষিত নদীর দেশ হিসেবে পরিচিত হয়েছে। বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলন এক প্রতিবেদনে বলেছে, পৃথিবীর শীর্ষ দূষিত নদীগুলোর অবস্থান এখন নদীমাতৃক বাংলাদেশে। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা, কর্ণফুলিসহ অসংখ্য নদীতীরবর্তী লক্ষ লক্ষ মানুষ, প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য নদী দূষণের শিকার। ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে বসবাসকারী প্রত্যেকেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ দূষণের শিকার। অধিকাংশ রফতানিমুখী শিল্পকারখানা প্রধানত এ দূষণের জন্য দায়ী। তাই অপ্রিয় হলেও সত্য যে আমাদের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে দূষণের ওপর।
বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলন গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে নদীদূষণ নিরসনের দাবি জানায়। বিবৃতিতে এ সংগঠনটি বলে, যেভাবে ৬০,০০০ নদী দখলদারের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, ঠিক তেমন করে যারা সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে নদীদূষণ করছে তাদের তালিকা প্রকাশ করে বিচারের আওতায় আনা হোক। ইতোমধ্যে যে নদীগুলো দূষিত হয়েছে এবং যার তলদেশে ১০/১২ ফুট পর্যন্ত ক্ষতিকর ধাতুর কঠিন স্তর পড়েছে সেগুলো অবিলম্বে দূর করার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলন।
একই সাথে বিবৃতিতে নদ-নদীর প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণ, দূষণের প্রতিকার ও দূষণকারী প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ এবং উজানের অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা প্রাপ্তিতে জাতিসংঘ পানিপ্রবাহ কনভেনশনে স্বাক্ষরসহ যৌথ নদী কমিশনে নেপাল ও চীনকে অন্তর্ভুক্তকরণের দাবি জানিয়েছে এ সংগঠনটি।
বিবৃতিতে বলা হয়, ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটারের-এ দেশে নদ নদীর প্রকৃত সংখ্যা কত সে ব্যাপারে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও বিশেষজ্ঞরা এখনো ঐক্যমত্যে পৌঁছাতে পারেননি। নদীমাতৃক আমাদের এ দেশের জন্য এটা চরম ব্যর্থতা। সরকারি সংস্থাগুলো বলছে ২৩০টি নদী আছে। উইকিপিডিয়ায় লেখা হয়েছে ৪০৫টি, শিশু একাডেমির শিশু বিশ^কোষে বলা হয়েছে ৭০০টি, লেখক সৈয়দ শামসুল হকের কবিতায় বলা হয়েছে ১৩০০টি, বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ১৫০০টির বেশি, গবেষক ইনামুল হক বলছেন প্রায় ২০০০টি নদী রয়েছে। অন্যদিকে উজানের ভিন্ন স্বীকৃত নদী ৫৭টি হলেও বাস্তবে রয়েছে ১০৭টি। বিভিন্ন সংখ্যার কারণে আমরা বিভ্রান্ত। এজন্য নদ-নদীগুলো দখলমুক্ত, প্রবাহমানও জীবন্ত রাখতে চাইলে এর প্রকৃত সংখ্যা জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে জাতির সামনে তুলে ধরতে হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, স্বাধীন বাংলাদেশের সূচনা লগ্নেই (১৯৭২ সালেবাংলাদেশ ভারত) যৌথ নদী কমিশনের যাত্রা শুরু হয়। যার লক্ষ্য হলো উজানের অভিন্ন নদীগুলোর পানি সম্পদ বণ্টন, সেচ, বন্যা ও ঘুর্ণিঝড় নিয়ন্ত্রণে যৌথ প্রচেষ্টা জোরদার ইত্যাদি। বিগত ৪৯ বৎসরে মাঝেমাঝে ঝলসে উঠলেও বর্তমানে একবারে নিশ্চুপ এ প্রতিষ্ঠানটি। বৈশি^ক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় এর কার্যক্রমকে আরো জোরালো করা এখন সময়ের দাবি। এ জন্য ‘নদী ক‚টনীতি’ কে যেমন বেগবান করতে হবে তেমনি এর পরিধি বাড়িয়ে নেপাল ও চীনকে এর অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এ ছাড়া মেকং নদী রক্ষা কমিশনের মত উজানের অভিন্ন বড় নদীগুলোর ক্ষেত্রে যেমন গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, মহানন্দা, সুরমা, কুশিয়ারা, ইত্যাদি নদীভিত্তিক পৃথক নদীকমিশন গঠন করা দরকার, যাতেকরে সত্যিকার অর্থেই নদীগুলোকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে জিইয়ে রাখা যায়। আর এটা সম্ভব তখনই যখন বাংলাদেশ জাতিসংঘ পানিপ্রবাহ কনভেনশনে (যা ইতোমধ্যে আইনে পরিণত হয়েছে) স্বাক্ষর করে ন্যায্য হিস্যার বিষয়টি জাতিসংঘে তুলে ধরবে। নদী ও পরিবেশ রক্ষায় যারা নিরলসভাবে কাজ করছে তাদের জন্য রাষ্ট্রীয় প্রণোদনা, পৃষ্ঠপোষকতা ও পুরস্কারের ব্যবস্থা করা উচিত। যাতেকরে এ ধরনের সামাজিক আন্দোলন যেন হারিয়ে না যায়।