ঢাকা ০৩:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৩০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্কুল-কলেজে পরিচালনা কমিটির প্রয়োজন কেন?

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:১৮:৫৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • ১৫২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় কমিটি থাকলেও কার্যত এখন এ ধরনের কমিটির কার্যকারিতা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিচালনা কমিটির নামে ক্ষেত্রবিশেষে এটি এখন কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয়ের অন্যতম উৎস হয়ে উঠেছে। অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রভাবশালীদের সামাজিক মর্যাদা অর্জনের ক্ষেত্র হিসেবেও ব্যবহার করা হচ্ছে এই কমিটিকে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক সময় বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা সরকারের কাছ থেকে কোনো বেতন পেতেন না। পরবর্তী সময়ে এমপিওভুক্তির মাধ্যমে তারা ৪০ বা ৫০ শতাংশ বেতন সরকার থেকে পাওয়া শুরু করেন। ২০০৪ সাল থেকে শতভাগ বেতন দিচ্ছে সরকার। আবার স্থানীয়ভাবে বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজস্ব উত্স ব্যবহার করে অনেক অর্থ আয় করে, যা অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষক-কর্মচারী ও পরিচালনা কমিটির মধ্যে ভাগ-বাঁটোয়ারা হয়ে থাকে।

 

শুধু বেতন-ভাতাই নয়, প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের খরচই বহন করে সরকার। শিক্ষার্থীদের বই থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠানের চেয়ার-টেবিল, বেঞ্চসহ সব আসবাবপত্র, বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ, নতুন ভবন তৈরি, ভবন সংস্কার, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের খরচ সবই বহন করে সরকার। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দের বড় অংশটিই ব্যয় হয় এসব খাতে। অথচ এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে অযাচিত খবরদারির দায়িত্ব পরিচালনা পর্ষদের। সরকারি অর্থে প্রতিষ্ঠানের সবকিছু চললেও সরকারের হাতে প্রতিষ্ঠান পরিচালনার সুযোগ নেই। শিক্ষকরা বলছেন, যখন সরকার পুরো বেতন-ভাতা দিত না তখন শিক্ষকদের বেতনের টাকা সংগ্রহ করে দেবার জন্য কমিটির দরকার ছিল। চেয়ার-টেবিলসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র কিনে দিতে হতো। তবে এখন আর এর দরকার কী?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের কমিটির কোনো প্রয়োজন নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনার সক্ষমতা আছে। ম্যানেজিং কমিটি-গভর্নিং বডির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নানামুখী ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে শিক্ষা বোর্ডের আরও কয়েকজন কর্মকর্তা এই ধরনের পরিচালনা পরিষদ বাতিলের পক্ষে মত দিয়েছেন। তারা বলছেন, সময় এসেছে নতুন করে ভাবার।

 

উল্লেখ্য, সাধারণত এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনার দায়িত্বে থাকে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি (এসএমসি) ও কলেজ পরিচালনার দায়িত্বে থাকে গভর্নিং বডি (জিবি)। এজন্য ১৯৭৭ সালে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা প্রণয়ন করা হয়, যা সর্বশেষ সংশোধন করা হয় ২০০৯ সালে।

প্রবিধানমালা অনুযায়ী ম্যানেজিং কমিটি ও গভর্নিং বডির ১৬টি দায়িত্ব পালনে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এসব দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে: প্রতিষ্ঠানের জন্য জমি, ভবন, খেলার মাঠ, বই, ল্যাবরেটরি, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য শিক্ষা উপকরণের ব্যবস্থা করা। প্রতিষ্ঠানের তহবিল সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা। ডোনেশন সংগ্রহ, শিক্ষক নিয়োগ, সাময়িক বরখাস্ত ও অপসারণ, বার্ষিক বাজেট অনুমোদন ও উন্নয়ন বাজেট অনুমোদন, ছাত্রছাত্রীদের বিনা বেতনে অধ্যয়নের আবেদন মঞ্জুরি, ছুটির তালিকা অনুমোদন, ছাত্রছাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত স্থান সংকুলান ও স্টাফদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা, বিভিন্ন ধরনের আর্থিক তহবিল গঠন ও রক্ষণাবেক্ষণ, স্কুলের সম্পত্তির কাস্টোডিয়ান হিসেবে দায়িত্ব পালন, শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে প্রদান নিশ্চিত করা এবং শিক্ষকদের নিয়ে প্রি-সেশন সম্মেলনের ব্যবস্থা করা।

কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, বর্তমানে অধিকাংশ পরিচালনা পর্ষদই এসব কাজের একটিও করে না। বরং প্রতিষ্ঠান থেকে ভুয়া বিল ভাউচার দিয়ে বিভিন্ন নামে টাকা লুটপাট করে তহবিল শূন্য করার বহু উদাহরণ রয়েছে। সংস্কারের কোনো কাজ না করেই টাকা তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও কম নয়।

 

বর্তমানে সহকারী শিক্ষক ও প্রভাষক নিয়োগের ক্ষমতা বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষকে (এনটিআরসিএ) দেওয়া হলেও প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক, অধ্যক্ষ ও কর্মচারী পদে আগের মতোই বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এসএমসি ও জিবির বিরুদ্ধে।

এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত করে থাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর। এই অধিদপ্তরের ৩০টি তদন্ত রিপোর্ট পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এর মধ্যে অন্তত ২৮টি প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের মূল কারণ গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি। ঐ কমিটি কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। অথচ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা পর্যন্ত নিতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

সম্প্রতি রাজধানীর হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক তদন্তে দেখা গেছে, কলেজের গভর্নিং বডি ও বিভিন্ন নামে গঠিত কমিটি ২০১৭-১৮ থেকে তিন অর্থবছরে সম্মানীর নামে ২০ লাখ ১৫ হাজার টাকা নিয়েছে। এক দিন মিটিং করলেই ব্যয় ১ লাখ টাকা। গভর্নিং বডির সভাপতি এবং বিভিন্ন কমিটির সদস্যরা কলেজের মিটিং ছাড়াও রুটিন বহির্ভূত কাজে আসতেন। এজন্য সভাপতি প্রতিদিন ৩ হাজার টাকা করে নিতেন। আর অন্য সদস্যরা নিতেন ২ হাজার করে।

রাজধানীর শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ গভর্নিং বডির সাবেক এক সভাপতি মাসে গড়ে ৬৫ হাজার টাকা করে সম্মানী নিতেন। এছাড়া ভবন সংস্কার, আসবাবপত্র তৈরির নামেও গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি লুটপাট করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সচিব অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, ‘কোনো গভর্নিং বডির বিরুদ্ধে অনিয়ম পাওয়া গেলে ঐ কমিটি ভেঙে দেওয়ার এক্তিয়ার বোর্ডের আছে।’ এ বিষয়ে কয়েকজন অধ্যক্ষ এই প্রতিবেদকে জানিয়েছেন, গভর্নিং বডির নির্দেশে অধ্যক্ষরা যা করেন পরে গভর্নিং বডি এর দায় নেয় না। বেশি অনিয়ম হলে কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। কিন্তু সভাপতি চলে গেলেও থেকে যান অধ্যক্ষ। ফলে যত শাস্তি সবই বর্তায় অধ্যক্ষের ওপর।

রাজধানীর মিরপুর কলেজের সম্প্রতি সাময়িক বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ গোলাম ওয়াদুদ বলেন, ‘সভাপতির নির্দেশনা মেনেই সব করেছি। মৌখিক নির্দেশনায় টাকাও ব্যয় করেছি। কিন্তু সভাপতি নেই। এখন তার অনিয়মের দায় আমাকে বহন করতে হচ্ছে।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

স্কুল-কলেজে পরিচালনা কমিটির প্রয়োজন কেন?

আপডেট টাইম : ১০:১৮:৫৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় কমিটি থাকলেও কার্যত এখন এ ধরনের কমিটির কার্যকারিতা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিচালনা কমিটির নামে ক্ষেত্রবিশেষে এটি এখন কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয়ের অন্যতম উৎস হয়ে উঠেছে। অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রভাবশালীদের সামাজিক মর্যাদা অর্জনের ক্ষেত্র হিসেবেও ব্যবহার করা হচ্ছে এই কমিটিকে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক সময় বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা সরকারের কাছ থেকে কোনো বেতন পেতেন না। পরবর্তী সময়ে এমপিওভুক্তির মাধ্যমে তারা ৪০ বা ৫০ শতাংশ বেতন সরকার থেকে পাওয়া শুরু করেন। ২০০৪ সাল থেকে শতভাগ বেতন দিচ্ছে সরকার। আবার স্থানীয়ভাবে বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজস্ব উত্স ব্যবহার করে অনেক অর্থ আয় করে, যা অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষক-কর্মচারী ও পরিচালনা কমিটির মধ্যে ভাগ-বাঁটোয়ারা হয়ে থাকে।

 

শুধু বেতন-ভাতাই নয়, প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের খরচই বহন করে সরকার। শিক্ষার্থীদের বই থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠানের চেয়ার-টেবিল, বেঞ্চসহ সব আসবাবপত্র, বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ, নতুন ভবন তৈরি, ভবন সংস্কার, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের খরচ সবই বহন করে সরকার। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দের বড় অংশটিই ব্যয় হয় এসব খাতে। অথচ এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে অযাচিত খবরদারির দায়িত্ব পরিচালনা পর্ষদের। সরকারি অর্থে প্রতিষ্ঠানের সবকিছু চললেও সরকারের হাতে প্রতিষ্ঠান পরিচালনার সুযোগ নেই। শিক্ষকরা বলছেন, যখন সরকার পুরো বেতন-ভাতা দিত না তখন শিক্ষকদের বেতনের টাকা সংগ্রহ করে দেবার জন্য কমিটির দরকার ছিল। চেয়ার-টেবিলসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র কিনে দিতে হতো। তবে এখন আর এর দরকার কী?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের কমিটির কোনো প্রয়োজন নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনার সক্ষমতা আছে। ম্যানেজিং কমিটি-গভর্নিং বডির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নানামুখী ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে শিক্ষা বোর্ডের আরও কয়েকজন কর্মকর্তা এই ধরনের পরিচালনা পরিষদ বাতিলের পক্ষে মত দিয়েছেন। তারা বলছেন, সময় এসেছে নতুন করে ভাবার।

 

উল্লেখ্য, সাধারণত এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনার দায়িত্বে থাকে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি (এসএমসি) ও কলেজ পরিচালনার দায়িত্বে থাকে গভর্নিং বডি (জিবি)। এজন্য ১৯৭৭ সালে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা প্রণয়ন করা হয়, যা সর্বশেষ সংশোধন করা হয় ২০০৯ সালে।

প্রবিধানমালা অনুযায়ী ম্যানেজিং কমিটি ও গভর্নিং বডির ১৬টি দায়িত্ব পালনে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এসব দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে: প্রতিষ্ঠানের জন্য জমি, ভবন, খেলার মাঠ, বই, ল্যাবরেটরি, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য শিক্ষা উপকরণের ব্যবস্থা করা। প্রতিষ্ঠানের তহবিল সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা। ডোনেশন সংগ্রহ, শিক্ষক নিয়োগ, সাময়িক বরখাস্ত ও অপসারণ, বার্ষিক বাজেট অনুমোদন ও উন্নয়ন বাজেট অনুমোদন, ছাত্রছাত্রীদের বিনা বেতনে অধ্যয়নের আবেদন মঞ্জুরি, ছুটির তালিকা অনুমোদন, ছাত্রছাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত স্থান সংকুলান ও স্টাফদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা, বিভিন্ন ধরনের আর্থিক তহবিল গঠন ও রক্ষণাবেক্ষণ, স্কুলের সম্পত্তির কাস্টোডিয়ান হিসেবে দায়িত্ব পালন, শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে প্রদান নিশ্চিত করা এবং শিক্ষকদের নিয়ে প্রি-সেশন সম্মেলনের ব্যবস্থা করা।

কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, বর্তমানে অধিকাংশ পরিচালনা পর্ষদই এসব কাজের একটিও করে না। বরং প্রতিষ্ঠান থেকে ভুয়া বিল ভাউচার দিয়ে বিভিন্ন নামে টাকা লুটপাট করে তহবিল শূন্য করার বহু উদাহরণ রয়েছে। সংস্কারের কোনো কাজ না করেই টাকা তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও কম নয়।

 

বর্তমানে সহকারী শিক্ষক ও প্রভাষক নিয়োগের ক্ষমতা বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষকে (এনটিআরসিএ) দেওয়া হলেও প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক, অধ্যক্ষ ও কর্মচারী পদে আগের মতোই বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এসএমসি ও জিবির বিরুদ্ধে।

এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত করে থাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর। এই অধিদপ্তরের ৩০টি তদন্ত রিপোর্ট পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এর মধ্যে অন্তত ২৮টি প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের মূল কারণ গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি। ঐ কমিটি কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। অথচ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা পর্যন্ত নিতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

সম্প্রতি রাজধানীর হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক তদন্তে দেখা গেছে, কলেজের গভর্নিং বডি ও বিভিন্ন নামে গঠিত কমিটি ২০১৭-১৮ থেকে তিন অর্থবছরে সম্মানীর নামে ২০ লাখ ১৫ হাজার টাকা নিয়েছে। এক দিন মিটিং করলেই ব্যয় ১ লাখ টাকা। গভর্নিং বডির সভাপতি এবং বিভিন্ন কমিটির সদস্যরা কলেজের মিটিং ছাড়াও রুটিন বহির্ভূত কাজে আসতেন। এজন্য সভাপতি প্রতিদিন ৩ হাজার টাকা করে নিতেন। আর অন্য সদস্যরা নিতেন ২ হাজার করে।

রাজধানীর শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ গভর্নিং বডির সাবেক এক সভাপতি মাসে গড়ে ৬৫ হাজার টাকা করে সম্মানী নিতেন। এছাড়া ভবন সংস্কার, আসবাবপত্র তৈরির নামেও গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি লুটপাট করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সচিব অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, ‘কোনো গভর্নিং বডির বিরুদ্ধে অনিয়ম পাওয়া গেলে ঐ কমিটি ভেঙে দেওয়ার এক্তিয়ার বোর্ডের আছে।’ এ বিষয়ে কয়েকজন অধ্যক্ষ এই প্রতিবেদকে জানিয়েছেন, গভর্নিং বডির নির্দেশে অধ্যক্ষরা যা করেন পরে গভর্নিং বডি এর দায় নেয় না। বেশি অনিয়ম হলে কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। কিন্তু সভাপতি চলে গেলেও থেকে যান অধ্যক্ষ। ফলে যত শাস্তি সবই বর্তায় অধ্যক্ষের ওপর।

রাজধানীর মিরপুর কলেজের সম্প্রতি সাময়িক বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ গোলাম ওয়াদুদ বলেন, ‘সভাপতির নির্দেশনা মেনেই সব করেছি। মৌখিক নির্দেশনায় টাকাও ব্যয় করেছি। কিন্তু সভাপতি নেই। এখন তার অনিয়মের দায় আমাকে বহন করতে হচ্ছে।’