ঢাকা ০৫:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এক চিরকুটে’ বেরিয়ে এলো শিশু ইমাম খুনের রহস্য

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:০৮:৫২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • ১২৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ১৫ মাস আগে জেলার বন্দর উপজেলার মাধবপাশা এলাকায় নিখোঁজের ২ দিন পর বাড়ির পাশের পুকুরে মিলেছিল ২ মাস বয়সী শিশু ইমাম হোসেনের লাশ।

বুকফাটা আহাজারি আর বার বার মূর্ছা যাওয়া শিশু ইমামের মা খাদিজা আক্তার নিজেকে দুষছিলেন, কেন তিনি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন। কারণ, ঘুমের মধ্যে তার শিশুকে চুরি করে নিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ ছিল খাদিজার।

সেই জন্মদাত্রী মা খাদিজাই স্বীকার করলেন তিনিই ছিলেন নিজের শিশু সন্তানের হন্তারক।  ‘বাচ্চা গড়ে গড়ে চুরি করমু সাবথান’- এমন একটি চিরকুটই শেষ পর্যন্ত এই শিশু ইমাম হোসেন হত্যা মামলায় আলো ফুটিয়েছে।

রোববার বিকালে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নরুন্নাহার ইয়াসমিনের আদালতে দেয়া খাদিজা আক্তার ওরফে পিংকি ১৬৪ধারায় দেয়া তার জবানবন্দিতে স্বীকার করেছেন, তিনিই তার সন্তানের হত্যাকারী ছিলেন। দাম্পত্য কলহের জেরে তিনি এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিলেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) জেলা কার্যালয়ের পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৯ এপ্রিল দিবাগত রাত ১২টার দিকে বন্দরের মাধবপাশা (কান্দিপাড়া) গ্রামের জাবেদ আলীর বাড়ি থেকে ইমাম হোসেন নামে দুই মাস বয়সী শিশু নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া যায়। পরে ২১ এপ্রিল সকাল ৭টার দিকে বাড়ির পাশে পুকুর ছেলে ওই শিশুর লাশ পাওয়া যায়। এই ঘটনায় নিহতের পিতা মো. রুবেল বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

ওই সময় নিহতের মা খাদিজা আক্তার পিংকি জানান, ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় তার শিশু সন্তানকে কেউ চুরি করে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে মামলার তদন্ত ভার দেয়া হয় পিবিআই নারায়ণগঞ্জ জেলাকে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক সাইফুল আলম গত বছরের ৩০ জুলাই মামলার তদন্ত শুরু করেন। তিনি জানান, তদন্তের এক পর্যায়ে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে আসামির বাসা থেকে সাত শব্দে লেখা একটি ছোট চিরকুট উদ্ধার করা হয়। ওই কাগজে লেখা ছিল, ‘বাচ্চা গড়ে গড়ে চুরি করমু সাবথান’।

এই কাগজের লেখার সঙ্গে মিল খোঁজার জন্য পরিবারের লোকজনসহ আশেপাশের অনেকের নমুনা লেখা সংগ্রহ করা হয়। পরে নিহত শিশুর মা খাদিজার হাতের লেখার সঙ্গে ওই লেখার মিল পাওয়া যায়।

আদালতের মাধ্যমে নমুনা লেখা বিশেষজ্ঞ (ব্যালেস্টিক) দ্বারা তুলনামূলক পরীক্ষা করেও মিল পাওয়া যায়। এরপর খাদিজা আক্তারকে পিবিআই হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার এক পর্যায়ে তিনি সব কিছু স্বীকার করেন।

পিবিআই জেলা পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম জানান,  ক্লু-লেস এই হত্যা মামলার দীর্ঘ সময় পর একটি চিরকুটের সূত্র ধরে তদন্ত শুরু করে পিবিআই। চিরকুটের মাধ্যমেই মামলার জট খোলা শুরু করে। পরে নিহত শিশুর মাকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের পর জিজ্ঞাসাবাদের পর তিনি শিশু সন্তানকে পানিতে ফেলে হত্যা করার কথা স্বীকার করেন।

তিনি জানান, আসামি আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। পারিবারিক কলহের কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। তারা উভয়ই আলাদা বসবাস করতো। ওই শিশু তাদের একমাত্র সন্তান ছিল। এই ঘটনায় নিহতের পিতার কোনো সংযোগ বা সম্পৃক্ত পাননি বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

এদিকে আদালত সূত্র জানিয়েছেন, নিজের দেয়া জবানবন্দিতে খাদিজা আক্তার বলেছেন, তার স্বামী রুবেল তাকে বার বার টাকার জন্য চাপ দিত। স্বামী তাকে উপার্জন করে সংসার চালানোর কথা বলতো। তাকে ভরণ-পোষণ দিতো না। এ নিয়ে পরিবারের লোকজনেরও উপহাস শুনতে হয়েছে তাকে। নানা ধরনের চাপের কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে সে তার দুই মাস বয়সী ছেলেকে ঘরের পাশের পুকুরে ফেলে দেয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

এক চিরকুটে’ বেরিয়ে এলো শিশু ইমাম খুনের রহস্য

আপডেট টাইম : ০৯:০৮:৫২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ১৫ মাস আগে জেলার বন্দর উপজেলার মাধবপাশা এলাকায় নিখোঁজের ২ দিন পর বাড়ির পাশের পুকুরে মিলেছিল ২ মাস বয়সী শিশু ইমাম হোসেনের লাশ।

বুকফাটা আহাজারি আর বার বার মূর্ছা যাওয়া শিশু ইমামের মা খাদিজা আক্তার নিজেকে দুষছিলেন, কেন তিনি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন। কারণ, ঘুমের মধ্যে তার শিশুকে চুরি করে নিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ ছিল খাদিজার।

সেই জন্মদাত্রী মা খাদিজাই স্বীকার করলেন তিনিই ছিলেন নিজের শিশু সন্তানের হন্তারক।  ‘বাচ্চা গড়ে গড়ে চুরি করমু সাবথান’- এমন একটি চিরকুটই শেষ পর্যন্ত এই শিশু ইমাম হোসেন হত্যা মামলায় আলো ফুটিয়েছে।

রোববার বিকালে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নরুন্নাহার ইয়াসমিনের আদালতে দেয়া খাদিজা আক্তার ওরফে পিংকি ১৬৪ধারায় দেয়া তার জবানবন্দিতে স্বীকার করেছেন, তিনিই তার সন্তানের হত্যাকারী ছিলেন। দাম্পত্য কলহের জেরে তিনি এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিলেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) জেলা কার্যালয়ের পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৯ এপ্রিল দিবাগত রাত ১২টার দিকে বন্দরের মাধবপাশা (কান্দিপাড়া) গ্রামের জাবেদ আলীর বাড়ি থেকে ইমাম হোসেন নামে দুই মাস বয়সী শিশু নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া যায়। পরে ২১ এপ্রিল সকাল ৭টার দিকে বাড়ির পাশে পুকুর ছেলে ওই শিশুর লাশ পাওয়া যায়। এই ঘটনায় নিহতের পিতা মো. রুবেল বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

ওই সময় নিহতের মা খাদিজা আক্তার পিংকি জানান, ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় তার শিশু সন্তানকে কেউ চুরি করে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে মামলার তদন্ত ভার দেয়া হয় পিবিআই নারায়ণগঞ্জ জেলাকে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক সাইফুল আলম গত বছরের ৩০ জুলাই মামলার তদন্ত শুরু করেন। তিনি জানান, তদন্তের এক পর্যায়ে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে আসামির বাসা থেকে সাত শব্দে লেখা একটি ছোট চিরকুট উদ্ধার করা হয়। ওই কাগজে লেখা ছিল, ‘বাচ্চা গড়ে গড়ে চুরি করমু সাবথান’।

এই কাগজের লেখার সঙ্গে মিল খোঁজার জন্য পরিবারের লোকজনসহ আশেপাশের অনেকের নমুনা লেখা সংগ্রহ করা হয়। পরে নিহত শিশুর মা খাদিজার হাতের লেখার সঙ্গে ওই লেখার মিল পাওয়া যায়।

আদালতের মাধ্যমে নমুনা লেখা বিশেষজ্ঞ (ব্যালেস্টিক) দ্বারা তুলনামূলক পরীক্ষা করেও মিল পাওয়া যায়। এরপর খাদিজা আক্তারকে পিবিআই হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার এক পর্যায়ে তিনি সব কিছু স্বীকার করেন।

পিবিআই জেলা পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম জানান,  ক্লু-লেস এই হত্যা মামলার দীর্ঘ সময় পর একটি চিরকুটের সূত্র ধরে তদন্ত শুরু করে পিবিআই। চিরকুটের মাধ্যমেই মামলার জট খোলা শুরু করে। পরে নিহত শিশুর মাকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের পর জিজ্ঞাসাবাদের পর তিনি শিশু সন্তানকে পানিতে ফেলে হত্যা করার কথা স্বীকার করেন।

তিনি জানান, আসামি আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। পারিবারিক কলহের কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। তারা উভয়ই আলাদা বসবাস করতো। ওই শিশু তাদের একমাত্র সন্তান ছিল। এই ঘটনায় নিহতের পিতার কোনো সংযোগ বা সম্পৃক্ত পাননি বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

এদিকে আদালত সূত্র জানিয়েছেন, নিজের দেয়া জবানবন্দিতে খাদিজা আক্তার বলেছেন, তার স্বামী রুবেল তাকে বার বার টাকার জন্য চাপ দিত। স্বামী তাকে উপার্জন করে সংসার চালানোর কথা বলতো। তাকে ভরণ-পোষণ দিতো না। এ নিয়ে পরিবারের লোকজনেরও উপহাস শুনতে হয়েছে তাকে। নানা ধরনের চাপের কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে সে তার দুই মাস বয়সী ছেলেকে ঘরের পাশের পুকুরে ফেলে দেয়।