আবার শোনা যাচ্ছে ‘লেইস ফিতা লেইস’

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কে বলে হারিয়ে গেছে তারা? করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় আরোপিত লকডাউন তুলে নেওয়ার পর থেকে চট্টগ্রাম মহানগরীতে আবারও দলে দলে নেমেছে দীর্ঘকাল ধরে বাংলাদেশের শহর-বন্দর-গ্রামের মধ্যবিত্ত, নিম্ন আয়ের পরিবারের নারীদের অতিপ্রিয় ‘লেইসফিতাওয়ালা’। নগরীর অলিগলিতে ফের শোনা যাচ্ছে সেই সুরেলা ডাক— ‘লেইস ফিতা লেইস’।

এই লেইস ফিতা ওয়ালারা আজও খুবই জনপ্রিয় গার্মেন্টসসহ সাধারণ চাকরিজীবী দেশের অগণিত তরুণী, বালিকা-কিশোরিদর কাছেও। কারণ তাদের কাছে অতি অল্প দামে মেলে ক্রিম-পাউডার, চুলের ফিতা, ক্লিপ, চুলবাঁধার অলংকৃত কাঁটা, রাবার ব্যান্ড, সেফটিপিন, চুড়ি, পুঁতিরমালা, ইমিটেশনের গয়না, জেড পাথর ও আর্টিফিশিয়াল মুক্তার মালা। চাই কী সাজগোজ করার উপটান, আই লাইনার, খোঁপার কাঁটা, শীতের দাওয়াই ভ্যাসেলিন, চুলে মাখার সুগন্ধী তেল, নানা ব্র্যান্ডের দেশি-বিদেশি গোসল করার সুগন্ধী গ্লিসারিন সাবান, নারীদের পরিধেয় কাপড় অলংকৃত করতে জরির লেইসসহ আরো কতো কি।

এসব লেইস ফিতা ওয়ালারা কাঁধে নিয়ে ঘুরে বেড়ান মালামালের বিশাল বোঝা, হাতে কাচ বাঁধানো একটি ভ্রাম্যমাণ শো-কেস নিয়ে সেই আগেকার মতো নগরীর পাড়ায়-মহল্লায়, বাড়ির আঙিনায় এসে হাঁক দিচ্ছে- ‘লেইস ফিতা লেইস’ ‘এই লেইস ফিতা’। নারী, গৃহবধূরা এসে ভিড় করেন ঘরের দুয়ারে, লেইস ফিতা ওয়ালার কাছ থেকে দরদাম করে কিনে নেন যার যার প্রয়োজনীয় সামগ্রী। বধূ-কন্যা-মাতাদের জটলায় ঘরের দুয়ারে যেন কেনাকাটার উত্সব শুরু হয়ে যায়। এই দৃশ্যটি চট্টগ্রাম মহানগরীর ৬০ বর্গমাইল এলাকার সাধারণ মানুষের বসতবাড়ির দুয়ারে-আঙিনায় আগের মতোই দৃশ্যমান।

 

চট্টগ্রাম নগরীর অলিগলিতে হেঁটে লেইস ফিতা, লেইস ফিতা বলে হাঁক দিচ্ছিলেন এমনই একজন, নাম তার শহিদুল। বাড়ি ফরিদপুর জেলায়। শহিদুল ইত্তেফাককে জানান, তারা ২০০ জন লেইস ফিতা ওয়ালা অস্থায়ীভাবে ভাড়া থাকেন নগরীর চেয়ারম্যানঘাটা এলাকায়। এটাই তাদের জীবিকা। বাড়িতে তার স্ত্রী এবং দুই মেয়ে এক ছেলে রয়েছে। সন্তানরা লেখাপড়া করে। চট্টগ্রামে তারা দল বেঁধে আসেন এক মাসের জন্য। প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০০/৬০০ টাকা, আবার কোনো কোনো দিন ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত পণ্য বিক্রি হয়ে থাকে।

ঘরভাড়া ও অন্যান্য খরচাপাতির পর মাস শেষে হাতে থাকে ৮ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকা। এগুলো নিয়ে তারা বাড়ি যান। আবার নতুন করে পণ্য কিনে বিক্রির জন্য চট্টগ্রাম মহানগরীতে ফিরে আসেন। করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনে তাদের ব্যবসা বন্ধ ছিল। এখন লকডাউন না থাকায় তারা আবার আগের মতো পণ্য বিক্রি করতে পারছেন। তারা জানান, নগরীর অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে তাদের কোনো ক্রেতা নেই। কারণ সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে ঢোকা যায় না, ক্রেতাদেরও নাগাল মেলে না। তবে নগরীতে এখনো সিংহভাগ মানুষ সাধারণ বাসাবাড়ি ও ভবনে বসবাস করেন, ফলে সেখানেই বিশেষত মহিলারা তাদের বাধা খদ্দের।

নগরীর খতিবেরহাটে একটি টিনশেড বাড়িতে চট্টগ্রাম ইপিজেডের বিভিন্ন গার্মেন্টস কারখানায় কর্মরত ২০ জন নারী কর্মী বসবাস করেন। তাদের মধ্যে শিউলি বেগম, নাদেরা বেগম ও হোসনেআরা বেগম জানান, তারা চাকরির ব্যস্ততার কারণে মার্কেটে যাওয়ার ফুরসত খুব কমই পান। তাই প্রয়োজনীয় প্রসাধনী ও অন্যান্য পণ্য এই লেইস ফিতা ওয়ালাদের কাছ থেকেই কিনে থাকেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর