ঢাকা ১২:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাওরের বুক চিরে হবে ৪ হাজার কোটির উড়াল সড়ক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:১৪:৪৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • ২০৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ যতদূর চোখ যায় পানি আর পানি। কিছুদূর পরপর কচুরিপানার মতো ভেসে থাকা গ্রাম। বর্ষার হাওরে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে যেতে এক সময় নৌকা ছাড়া উপায় ছিল না। শুকনো মৌসুমে ক্ষেতের আইল ধরে কোনোরকম পায়ে হেঁটে আরেক গ্রামে যেতে হতো। এর জন্য হাওরে যোগাযোগের প্রবাদ ছিল ‘শুকনোয় পাও, বর্ষায় নাও’।

এ বর্ষায় সেখানে দর্শনার্থীদের ভিড় লেগে গিয়েছিল। তবে সেই চোখজুড়ানো সড়কটি হাওরবাসীকে যোগাযোগে পূর্ণতা এনে দেয়নি। কারণ, এর সাথে কিশোরগঞ্জ সদর তথা সারা দেশের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়নি। এই অপূর্ণতা ঢাকতে এবার হাওরে নির্মাণ করা হচ্ছে উড়াল সড়ক। এর জন্য নতুন প্রকল্প নিয়েছে সেতু বিভাগ। প্রাথমিক কাজ অনেকটা এগিয়েও গিয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্প এলাকার মাটি পরীক্ষার কাজও শেষ হয়েছে। এবার ভূমি অধিগ্রহণের পালা।

এই উড়ালসড়ক নির্মাণে নকশা প্রণয়ন এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য পরিকল্পনা প্রণয়নে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে (বুয়েট) পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে নির্মাণাধীন সেনানিবাসকেও যুক্ত করা হবে।

প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ ও পূনর্বাসন পরিকল্পনা বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগ মঙ্গলবার দুপুরে করিমগঞ্জের মচিখালী বাজারে অংশীজনদের সাথে এক অবহিতকরণ সভায় প্রকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলমের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নু। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, সেতু বিভাগের সচিব আবু বকর ছিদ্দীক, সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মো: ফেরদৌস, জেলার পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম (বার)। সেতু কর্তৃপক্ষের পরিচালক (উপসচিব) আলতাফ হোসেন শেখের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রকল্পের সার্বিক দিক তুলে ধরেন বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক খান এম আমানত। অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, উড়াল সড়ক হাওরের জন্য কল্পনার বিষয় ছিল। এটি নির্মিত হওয়ার পর কিশোরগঞ্জ সদর তথা সারা দেশের সাথে হাওরের তিন উপজেলার স্থায়ী সড়ক যোগাযোগ তৈরি হবে।

রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বলেন, রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদের ইচ্ছায় এর আগে ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রামের মধ্যে প্রায় ৩০ কিলোমিটার সড়ক নির্মিত হয়। ২০১৬ সালে এটির নির্মাণকাজের উদ্বোধনও করেন রাষ্ট্রপতি। এই সড়কের সাথে কিশোরগঞ্জ ও সারা দেশের সরাসরি সংযোগ স্থাপনের আগ্রহের কথা রাষ্ট্রপতিই জানিয়েছিলেন। এরপরই সেতু বিভাগ উড়ালসড়ক নির্মাণে তৎপর হয়।

উড়াল সেতুটি দ্রুত বাস্তবায়নে সরকারের উচ্চপর্যায়ের তাগিদ রয়েছে, এমন তথ্য দিয়ে সেতু বিভাগের সচিব আবু বকর ছিদ্দীক বলেন, মিঠামইন থেকে করিমগঞ্জের মরিচখালীর খয়রত গ্রাম পর্যন্ত মূল উড়াল সেতুটি হবে ১৪ কিলোমিটার দৈর্ঘের। প্রকল্পের অধীন মরিচখালি থেকে কিশোরগঞ্জ সদরের নাকভাঙ্গা পর্যন্ত সড়কটি প্রশস্ত করা হবে। প্রকল্পটির নির্মাণে চার হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচ হবে। পুরো টাকা সরকারের রাজস্ব খাত থেকে ব্যয় করা হবে।

বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক খান এম আমানত বলেন, এর আগে হাওরে যেভাবে সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে, তাতে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর ক্ষতিকর প্রভাব আছে। এ জন্যই হাওরে উড়াল সড়ক করা হচ্ছে। এতে পানির প্রবাহ ঠিক থাকবে। জীববৈচিত্র্যে প্রভাব ফেলবে না। উড়াল সড়কটি নির্মাণে হাওরের জনজীবনের মান উন্নত হবে বলেও জানান তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

হাওরের বুক চিরে হবে ৪ হাজার কোটির উড়াল সড়ক

আপডেট টাইম : ১১:১৪:৪৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ যতদূর চোখ যায় পানি আর পানি। কিছুদূর পরপর কচুরিপানার মতো ভেসে থাকা গ্রাম। বর্ষার হাওরে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে যেতে এক সময় নৌকা ছাড়া উপায় ছিল না। শুকনো মৌসুমে ক্ষেতের আইল ধরে কোনোরকম পায়ে হেঁটে আরেক গ্রামে যেতে হতো। এর জন্য হাওরে যোগাযোগের প্রবাদ ছিল ‘শুকনোয় পাও, বর্ষায় নাও’।

এ বর্ষায় সেখানে দর্শনার্থীদের ভিড় লেগে গিয়েছিল। তবে সেই চোখজুড়ানো সড়কটি হাওরবাসীকে যোগাযোগে পূর্ণতা এনে দেয়নি। কারণ, এর সাথে কিশোরগঞ্জ সদর তথা সারা দেশের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়নি। এই অপূর্ণতা ঢাকতে এবার হাওরে নির্মাণ করা হচ্ছে উড়াল সড়ক। এর জন্য নতুন প্রকল্প নিয়েছে সেতু বিভাগ। প্রাথমিক কাজ অনেকটা এগিয়েও গিয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্প এলাকার মাটি পরীক্ষার কাজও শেষ হয়েছে। এবার ভূমি অধিগ্রহণের পালা।

এই উড়ালসড়ক নির্মাণে নকশা প্রণয়ন এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য পরিকল্পনা প্রণয়নে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে (বুয়েট) পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে নির্মাণাধীন সেনানিবাসকেও যুক্ত করা হবে।

প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ ও পূনর্বাসন পরিকল্পনা বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগ মঙ্গলবার দুপুরে করিমগঞ্জের মচিখালী বাজারে অংশীজনদের সাথে এক অবহিতকরণ সভায় প্রকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলমের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নু। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, সেতু বিভাগের সচিব আবু বকর ছিদ্দীক, সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মো: ফেরদৌস, জেলার পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম (বার)। সেতু কর্তৃপক্ষের পরিচালক (উপসচিব) আলতাফ হোসেন শেখের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রকল্পের সার্বিক দিক তুলে ধরেন বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক খান এম আমানত। অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, উড়াল সড়ক হাওরের জন্য কল্পনার বিষয় ছিল। এটি নির্মিত হওয়ার পর কিশোরগঞ্জ সদর তথা সারা দেশের সাথে হাওরের তিন উপজেলার স্থায়ী সড়ক যোগাযোগ তৈরি হবে।

রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বলেন, রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদের ইচ্ছায় এর আগে ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রামের মধ্যে প্রায় ৩০ কিলোমিটার সড়ক নির্মিত হয়। ২০১৬ সালে এটির নির্মাণকাজের উদ্বোধনও করেন রাষ্ট্রপতি। এই সড়কের সাথে কিশোরগঞ্জ ও সারা দেশের সরাসরি সংযোগ স্থাপনের আগ্রহের কথা রাষ্ট্রপতিই জানিয়েছিলেন। এরপরই সেতু বিভাগ উড়ালসড়ক নির্মাণে তৎপর হয়।

উড়াল সেতুটি দ্রুত বাস্তবায়নে সরকারের উচ্চপর্যায়ের তাগিদ রয়েছে, এমন তথ্য দিয়ে সেতু বিভাগের সচিব আবু বকর ছিদ্দীক বলেন, মিঠামইন থেকে করিমগঞ্জের মরিচখালীর খয়রত গ্রাম পর্যন্ত মূল উড়াল সেতুটি হবে ১৪ কিলোমিটার দৈর্ঘের। প্রকল্পের অধীন মরিচখালি থেকে কিশোরগঞ্জ সদরের নাকভাঙ্গা পর্যন্ত সড়কটি প্রশস্ত করা হবে। প্রকল্পটির নির্মাণে চার হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচ হবে। পুরো টাকা সরকারের রাজস্ব খাত থেকে ব্যয় করা হবে।

বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক খান এম আমানত বলেন, এর আগে হাওরে যেভাবে সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে, তাতে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর ক্ষতিকর প্রভাব আছে। এ জন্যই হাওরে উড়াল সড়ক করা হচ্ছে। এতে পানির প্রবাহ ঠিক থাকবে। জীববৈচিত্র্যে প্রভাব ফেলবে না। উড়াল সড়কটি নির্মাণে হাওরের জনজীবনের মান উন্নত হবে বলেও জানান তিনি।