শরীরচর্চা আর ক্যানসারের সঙ্গে সম্পর্ক অনেকটা ধাঁধার মতো। শরীরচর্চা বা ব্যায়াম মানব দেহের বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করে। ক্যান্সারের ওপর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যে সব ব্যক্তি নিয়মিত শরীরচর্চা করে থাকে তাদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের।
শরীরচর্চা একই সঙ্গে মানসিক চাপ কমানোর পাশাপাশি শরীরে এক ধরনের উত্তেজক হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে। যেটি মানব দেহে ক্যানসার দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে সহায়তা করে। সম্প্রতি এক প্রজাতির ইঁদুরের ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, ক্যান্সারে আক্রান্ত প্রাণীর দেহে এর জীবাণু কতটা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। এক্ষেত্রে ইঁদুরের শরীরে নিরাপদ কিছু কোষ ও ক্যামিকেল পুশ করা হলে দেখা যায়, কোষগুলো ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানোর পাশাপাশি এর বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে।
ডেনমার্কের ইউনিভার্সিটি অব কোপেনহেগেনের এক বিজ্ঞানী এবং আরও কিছু সহযোগী প্রতিষ্ঠান খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণের চেষ্টা করেন ক্যান্সারের জীবাণু আক্রান্ত ইঁদুরে শরীরের ভেতরে মূলত কি হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে তারা গবেষণাগারে কিছু নতুন ইঁদুরের ওপর গবেষণা চালান। যে ইঁদুরগুলো সাধারণত দৌড়াতে বা নড়াচড়া করতে পছন্দ করে। প্রথমে ইঁদুরগুলোর শরীরে স্ক্রিন ক্যান্সারের কোষ পুশ করেন। এদের মধ্য থেকে যে ইঁদুরগুলো স্বাভাবিকভাবে ছোটাছুটি বা দৌড়ের মধ্যে ব্যস্ত ছিল তাদের শরীরে ক্যান্সারের কোষগুলো বিস্তার লাভ করেনি। এদের মধ্যে যে ইঁদুরগুলো ঝিমিয়েছে বা কম ছোটাছুটি করেছে তাদের শরীরে ক্যানসার জীবাণু খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে দেখা যায়, যে ইঁদুরগুলো খুব বেশি ছোটাছুটি করেছে তারা ক্যান্সারের জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে টিকে আছে।
অন্য একটি গবেষণায় দেখা যায় যে, শরীরচর্চা বা ব্যায়াম শুধুমাত্র ক্যান্সারের বিরুদ্ধেই লড়াই করে না, টিউমারের ঝুঁকি কমাতেও সহায়তা করে। এ পর্যায়ে ছোটাছুটি করা ইঁদুর ও অলস ইঁদুর উভয়ের শরীর থেকে পরীক্ষার জন্য রক্ত ও কিছু কোষ সংগ্রহ করা হয়। পাশাপাশি টিউমারে আক্রান্ত প্রাণীর কিছু কোষ সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তী সময়ে ল্যাবে অণুবীক্ষণ যন্ত্র দ্বারা গভীর পর্যবেক্ষণ চালিয়ে কোষগুলোর মধ্যে বিভিন্ন পার্থক্য লক্ষ করা যায়। তারা গবেষণার মাধ্যমে বের করেন, ইনজেকশনের মাধ্যমে উত্তেজক যে কোষ পুশ করা হয়েছে সেগুলো অলস বা কম নড়াচড়া ইঁদুরের শরীরে ঘাতক ব্যাধি হিসেবে কাজ করেছে। এই ইঁদুরগুলো কিছুটা অলস হওয়ায় তাদের শরীরে ক্যান্সারের জীবাণু রক্ত ও কোষের সঙ্গে খুব দ্রুত মিশে গেছে। ঠিক একইভাবে যে ব্যক্তি নিয়মিত শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করেন, তার শরীরে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে শরীরচর্চার পাশাপাশি যে বিষয়ের ওপর আমাদের বেশি জোর দিতে হবে :
ব্যায়াম করুন
প্রতিদিন কম করে হলেও অন্তত ১৫-২০ মিনিট ব্যায়াম করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৫০% পর্যন্ত কমিয়ে আনতে পারে। এক্ষেত্রে অল্প দূরত্বের জায়গা বা আপনার অফিস যদি ৩০ মিনিটের দূরত্বে হয় তাহলে হেঁটে আসা-যাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে করে আসতে-যেতে মোট এক ঘণ্টা আপনি হাঁটার সুযোগ পাচ্ছেন।
ফল, শাক-সবজি ও উপকারী খাদ্য গ্রহণ
শুধুমাত্র ব্যায়ামের ওপর নির্ভর না করে পাশাপাশি আপনার খাদ্যাভাসের পরিবর্তন আনতে পারেন। বিভিন্ন ধরনের খাদ্য আছে যা ক্যানসার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। টমেটো আর তরমুজে লাইকোপিন থাকে যা প্রসটেড ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। পাকস্থলি, স্তন, কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে ভিটামিন ‘সি’ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করতে পারেন। নারীদের জন্য ‘বিটা ক্যারোটিন’ এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন মিষ্টি আলু এবং ভিটামিন ‘সি’ জাতীয় খাদ্য স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। ব্রোকলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ডালিম এবং বিভিন্ন ধরনের চা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে যেমন গ্রিন টি, ব্ল্যাক টি।
স্ট্রেসমুক্ত থাকুন
আপনার স্ট্রেস যত বেশি থাকবে আপনি তত অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসে জড়িয়ে যাবেন যেগুলো ক্যানসার হওয়ার জন্য মূলত দায়ী। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত খাওয়া, অতিরিক্ত ধূমপানও ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। স্ট্রেস মুক্ত থাকার জন্য মেডিটেশান, ব্যায়াম করতে পারেন।
শরীর চেকআপ করা
নির্দিষ্ট একটা সময় অন্তর পারিবারিক ডাক্তার বা স্থানীয় হাসপাতাল থেকে শরীর চেকআপ করিয়ে নিতে পারেন। এতে করে শরীরে কোনো সমস্যা স্থায়ী হওয়ার আগেই প্রাথমিক অবস্থায় আপনি জেনে নিয়ে তা প্রতিরোধ করতে পারেন।
লেখক: গ্রিটসেন রাইনোল্ডস, গ্রন্থনা: মরিয়ম চম্পা