হাওর বার্তা ডেস্কঃ রহিম-রূপবান জোড়া নাম। তবে এটি আগের দিনের যাত্রাপালা নয়। গ্রীষ্মকালে চাষ করা সবজি ভিন্ন জাতের শিমের নাম। যা চাষ করা হয়েছে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের রাখালগাছি ইউনিয়নের সুবিতপুর মাঠে।
শিম শীতকালীন সবজি হলেও কমপক্ষে ২০ বছর ধরে কৃষকেরা চাষ করে লাভবান হয়ে আসছেন। চলতি বছরেও প্রায় ৩০ বিঘা জমিতে চাষ হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে অসময়ে এ সবজির চাষ হওয়ায় গ্রামটি শিমের গ্রাম হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
লকডাউনের মধ্যেও তারা প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করছেন। একবার লাগালে প্রায় ৫ মাস পর্যন্ত শিম পাওয়া যায়। কৃষকদের ভাষ্য, প্রতি বিঘা শিম চাষে যাবতীয় খরচ বাদে লক্ষাধিক টাকা আসে।
সুবিতপুর মাঠে গেলে দেখা যায়, বর্ষার সময় হলেও মাঠ ভরা শিম ক্ষেত। যেখানে থোকায় থোকায় শিম ধরে আছে। একইভাবে ফুলও ফুটে আছে। কোনটা সবুজ আবার কোনটা লাল বেগুনী। যা দূর থেকে দেখতেই অপরূপ লাগছে। যেখানে কাজ করছেন কৃষকেরা।
করোনার ভয়াবহতার মধ্যেও তারা আনন্দে গান গেয়ে মাঠে করছেন। ক্ষেতের কাজে এসে রোদে পুড়লেও কোন ক্লান্তি নেই তাদের। কারণ মাঠে অসময়ের শিম চাষ করে ভালো দাম পাচ্ছেন।
ওই গ্রামের কৃষক হারুন অর রশিদ জানান, শুধু এ বছরই নয়, কমপক্ষে ২০ বছর ধরে বর্ষার মৌসুমে তাদের গ্রামের মাঠে কৃষকেরা এ জাতের শিমের চাষও করে আসছেন। এটি বিশেষ জাতের শিম হওয়ায় জমিতে বর্ষার পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হলেও শিমগাছ মরে না। সুবিধা হচ্ছে বৃষ্টি সহিঞ্চু ও অসময়ে হওয়ার কারণে দামও ভালো পাওয়া যায়। তাইতো প্রতিবছর তারা চাষ করেন।
তিনি আরো জানান, ২০২১ সালে তাদের গ্রামের গুণী কৃষক জহর আলী আত্মীয় বাড়ি থেকে বীজ এনে মাত্র ৫ কাঠা জমিতে রূপবান জাতের শিমের চাষ করেছিলেন। সাধারণত শিম শীতকালীন সবজি তাই বর্ষার সময়ে চাষ করায় চারদিকে হাসি তামাশার সৃষ্টি হয়।
কিন্ত সবাইকে চমকে দিয়ে বেশ লাভবান হয়েছিলেন। এ থেকেই শুরু। এ বছর ওই গ্রামের কৃষক বাপ্পারাজ সবচেয়ে বেশি ৪ বিঘা, ইমরান হোসন ৩৬ শতক, রফি উদ্দিন ২৬ শতক, হাশেম আলী ১২ কাঠা, নিনি নিজে ৩৪ শতক, পান্নু রহমান ২২ শতক, আব্দুস ছাত্তার ৩৭, রহমত আলীর ১৮ শতকসহ মোট ৩০ বিঘার অধিক শিম চাষ করেছেন।
কৃষক বাপ্পারাজ জানান, জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝিতে এ শিম বীজ লাগানো হয়। লতা জাতীয় গাছ হওয়ায় খুব তাড়াতাড়ি টাল বানে বানে উঠালে দ্রুতই লতিয়ে গিয়ে ফুল ও ফল ধরে। বানে উঠে যাওয়ার পরে কমপক্ষে ৫ মাস শিম পাওয়া যায়। এখন একটু কম তোলা গেলেও বাজারে প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকায় পাইকারি বিক্রি করছেন।
তবে ক্রমেই বেশি তোলা যাবে। এখন প্রতি সপ্তাহে ১ দিন তুললেই হয়। কিন্ত দিন যত পার হবে ক্রমেই বেশি পাওয়া যাবে। তবে সে সময়ে শীতকালীন সবজির উপস্থিতিতে দাম কমে যায়। তারপরও বৃষ্টি সহিঞ্চু এ জাতের সবজির চাষ করলে বীজ,সার, কীটনাশক কামলাসহ যাবতীয় খরচ বাদে লক্ষাধিক টাকা আসে। অর্থাৎ অল্প জমি চাষ করে বেশি লাভ করা যায়।
শিম চাষি রফি উদ্দিনের জানান, অন্য ফসল চাষ করে উৎপাদন ব্যয় বাদ দিলে খুব একটা লাভ থাকে না। সেক্ষেত্রে গ্রীষ্মকালীন রহিম রূপবান শিমের চাষ করলে অল্প জমিতে বেশ লাভ পাওয়া যায়। এ নাগারে কয়েক মাস ক্ষেতের শিম বিক্রি করা যায়। এর পরে ওই জমিতেই বেরো ধানের আবাদ করা যায়।
এ ব্যাপারে রাখালগাছি ইউপির উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, তার ইউপির সুবিতপুর গ্রামের মাঠে গ্রীষ্মকালীন রহিম রূপবান জাতের শিমের চাষ হয়েছে। এ গাছ পানিতে মরে না। তবে প্রচণ্ড তাপদাহে ক্ষেত নষ্ট হতে পারে। তবে ওই গ্রামটির কৃষকেরা বেশ কয়েক বছর ধরে চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। সবুজ যে শিম তার নাম রহিম আর লালটা রূপবান জাতের। রহিমের চেয়ে রূপবানে ফলন বেশি।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শিকদার মুহা মোহায়মেন আক্তার জানান, এ বছর বেশ কিছু জমিতে শিমের চাষ করেছেন। অসময়ের শিম হওয়ায় দামও ভালো পাচ্ছেন। ফলে ওই গ্রাম ছাড়াও আশপাশের গ্রামের কৃষকেরাও এ জাতের শিম চাষ শুরু করেছেন।