হাওর বার্তা ডেস্কঃ জলবায়ু সহিষ্ণু পদ্ধতিতে উঁচু মাদা, বস্তা ও টাওয়ার গার্ডেন করে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষে সফল হয়েছেন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগর ইউপির গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক জামাল মিয়া ও শাপলা বেগম দম্পতি।
জানা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনাল থেকে জলবায়ু সহিষ্ণু পদ্ধতিতে লাউ, করলা, শসা চাষের বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ নেন ভিলেজ মডেল ফার্মার জামাল মিয়া ও শাপলা বেগম দম্পতি।
প্রশিক্ষণ শেষে দম্পতি তাদের ১৫ শতাংশ জমির মধ্যে জলবায়ু সহিষ্ণু পদ্ধতিতে জয়েন্ট ডেমো প্রদর্শনী প্লট গড়ে তুলেন। এতে তাদের খরচ হয় প্রায় ২৫ হাজার টাকা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও হেলেন কেলার ইন্টান্যাশনালের কারিগরি সহযোগিতায় এবং সূচনা প্রকল্পের বাস্তবায়নে প্রদর্শনী প্লটটি বর্তমানে বাস্তবে রূপ নিয়েছে। তাদের ১৫ শতাংশ জমিতে জলবায়ু সহিষ্ণু উঁচু মাদা, বস্তায় ও টাওয়ার পদ্ধতিতে লাউ ও করলা চাষে এসেছে সফলতা।
জামাল মিয়া দম্পতি জানান, জলবায়ু সহিষ্ণু পদ্ধতিতে তিনি লাউ চাষ করে এখন পর্যন্ত লাউ বিক্রি করছেন প্রায় ৪০ হাজার টাকা। মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রভাব যদি বাজারে না পড়ে তাহলে আরো ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার লাউ, করলা বিক্রি করতে পারবেন।
হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনালের কারিগরি সহায়তাকারী কামরুল ইসলাম বলেন, এটি মূলত সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার একটি প্রদর্শনী প্লট। সাংবাদ প্রচারের মাধ্যমে জলবায়ু সহিষ্ণু পদ্ধতিটি কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া হলে তা আরো কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর এর উপ-সহকারী রিপন দাস জানান, জলবায়ু সহিষ্ণু পদ্ধতি মূলত একটি আধুনিক পদ্ধতি। এই পদ্ধতি ব্যবহার করলে বন্যা কিংবা অতিবৃষ্টিতে ও ফসলের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকবে না। উঁচু মাদা ও টাওয়ার গার্ডেন মূলত জলযুক্ত ও বন্যা কবলিত এলাকায় করা হয়। যা মাটি থেকে ৪ ফুট উঁচু মাদা ও টাওয়ার তৈরি করে সেখানে বীজ ও চারা রোপণ করা হয়। আবার ক্ষেত্র বিশেষে বেশি বন্যা কবলিত এলাকায় ৫ ফুট পর্যন্ত উঁচু টাওয়ার করা হয়, যাতে রোপণকৃত ফসলটি ঝুঁকি মুক্ত থাকে।
সূচনা প্রকল্পের কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল উপজেলা সমন্বয়কারী এম, এইচ মিলন বলেন, জলবায়ু সহিষ্ণু পদ্ধতিতে উঁচু মাদা ও টাওয়ার গার্ডেনে যে সবজি চাষ করা হচ্ছে এটি মূলত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনালের কারিগরী সহায়তা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহযোগিতায় আমরা সূচনা প্রকল্প এ ধরনের জলবায়ু সহিষ্ণু পদ্ধতিতে আরো প্রদর্শনী প্লট করব। যাতে অতিবৃষ্টি ও বন্যায় কৃষকের ফসলের ক্ষতি না হয়।
উল্লেখ্য, আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খরা ও অতিবৃষ্টিতে কৃষি উৎপাদনে ঝুঁকি বাড়ছে। কৃষিপণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে আহরণ পর্যন্ত কৃষকদের যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অসময়ে বৃষ্টি কিংবা অতিবৃষ্টি। আবার অনেক সময় বৃষ্টির মৌসুমে বৃষ্টি না হয়ে তীব্র খরার সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে প্রতিকূল প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করেই কৃষকদের ফসল উৎপাদন করতে হয়। প্রাকৃতিক এসব দুর্যোগের কারণে অনেক সময় বীজ, চারা, ফসল বিনষ্ট হলে কৃষকরা লোকসানের শিকার হয়। এমন প্রতিকূল প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে দেশের বিজ্ঞানীরা জলবায়ু সহিষ্ণু কৃষি চাষাবাদের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে উদ্ভাবন করেন বিভিন্ন জলবায়ু সহিষ্ণু পদ্ধতিতে চাষাবাদ।