হাওর বার্তা ডেস্কঃ করোনার কারণে দেশে বেড়েছে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা। বিভিন্ন গবেষণায় বলা হচ্ছে, নতুন করে দরিদ্র হয়েছে দুই থেকে আড়াই কোটি মানুষ। এই সংকটের সময়ে গবিব মানুষকে নগদ সহায়তার কোনো বিকল্প নেই। এ অবস্থায় সরকার যদি ২০২৬ সাল পর্যন্ত ৫১ লাখ ১০ হাজার পরিবারকে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা নগদ সহায়তা দেয়, তাহলে ছয় বছরের মধ্যে দরিদ্র পরিবারের সংখ্যা নেমে আসবে ৪৩ লাখ ৫০ হাজারে। আর দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমে ১ কোটি ৭৪ লাখ হবে। অর্থাৎ দেশে দারিদ্র্যের হার নেমে আসবে ১০ শতাংশে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) পক্ষে গবেষণাটি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফিরদৌসি নাহার। অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছে ইআরডি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফিরদৌসি নাহার বলেন, একসঙ্গে সব গরীব মানুষকে নগদ সহায়তা দেয়া সম্ভব নয়। প্রথম বছরে সাড়ে ১১ লাখ পরিবারকে মাসে ৫ হাজার টাকা। দ্বিতীয় বছরে আরও ১০ লাখ পরিবারকে। তৃতীয় বছরে আরও ৮ লাখ ৯০ হাজার পরিবার। চতুর্থ বছরে বাড়বে ৭ লাখ ৮০ হাজার পরিবার। পঞ্চম ও ষষ্ঠ বছরে যথাক্রমে আরও ৬ লাখ ৮০ হাজার ও ৬ লাখ পরিবারকে মাসে ৫ হাজার করে টাকা। সব মিলিয়ে ৫১ লাখ ১০ হাজার পরিবারকে নগদ সহায়তা করতে হবে। পরিবারগুলোকে ৩ মাস ৫ হাজার করে টাকা দিলে সরকারের খরচ হবে ৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। আর ছয় মাস দিলে ব্যয় হবে ১৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।
গবেষণাটিতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাজেটে সরকারের সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলোর জন্য বরাদ্দের পরিমাণ বেশ বেড়েছে। কিন্তু এই অর্থের প্রায় অর্ধেক অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন এবং সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকের সুদ দিতে ব্যয় হয়। এদের কেউই দরিদ্র বা গরিব নন।
গবেষণাটিতে আরও বলা হয়, গত বছরের মার্চে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার আগে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২০ দশমিক ৫ শতাংশ। করোনার ধাক্কায় অনেক মানুষের চাকরি বা কাজ চলে যাওয়ায় এই হার বেড়ে ২৩ শতাংশ হয়েছে। এ হিসাবে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা এখন ৩ কোটি ৭৯ লাখ। করোনার প্রভাবের কারণে গত এক বছরে প্রায় ৪৫ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে।
তবে সিপিডি, পিপিআরসি এবং সানেম সংস্থা দাবি অনুযায়ী মহামারির কারণে দুই থেকে আড়াই কোটি মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে।
সরকারি গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) বলছে, করোনার কারণে ১ কোটি ৬৪ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে।
গবেষণাটিতে বলা হয়েছে, চার সদস্যের একটি পরিবারের সর্বনিম্ন মাসিক ব্যয় হয় ৯ হাজার ৩১৬ টাকা। এর মধ্যে ৫ হাজার ১২৩ টাকা খাদ্য বাবদ খরচ হয়। এই খরচের উপর ভিত্তি করেই মাসে প্রতিটি পরিবারকে ৫ হাজার টাকা করে নগদ টাকা দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৬ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। এর পরে অবশ্য দারিদ্র্যের হার নিয়ে আর কোনো গবেষণা তথ্য প্রকাশ করেনি প্রতিষ্ঠানটি।