ক্রিকেট কিংবা ফুটবল, এমনকি যদি বলি হকির কথা- কোন ম্যাচের আগেই কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবে না যে কে জিতবে। ক্রীড়াক্ষেত্রে একটা কথা প্রায়ই বলা হয়ে থাকে যে, ‘গিভেন ডে’। ওইদিন যে কোন কিছুই ঘটতে পারে। সুতরাং, ভারতীয় মিডিয়া কতবার মহেন্দ্র সিং ধোনিদের নামে ‘ফেভারিট’ শব্দটা ট্যাগ করলো সেটা কোন ব্যাপার নয়। দিনটা যদি হয় বাংলাদেশের, তাহলে চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপাটা মাশরাফির হাতে উঠলে বিস্ময়ের কিছু থাকবে না। সুতরাং, রোববারের দিনটা হতে পারে বাংলাদেশেরও। পুরো বাংলাদেশ এখন অপেক্ষায় আছে, ধোনিদের হারিয়ে মাশরাফির হাতেই উঠে যাচ্ছে এশিয়া কাপের শিরোপা। কেন বাংলাদেশ জিততে পারে, তার একটা অনুপ্রেরণা তারা নিতে পারে নিচের এই ৫টি কারণ থেকে।
সাম্প্রতিক ইতিহাস
এশিয়া কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে হয়তো বাংলাদেশ হেরেছে ভারতের কাছে। কিন্তু সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের বিচারে কিন্তু কোনভাবেই ভারতের কাছে পরাজিত দল নয় বাংলাদেশ। গত বছর বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে মেলবোর্নে বিতর্কিত সেই হারের পর বাংলাদেশ ভারতের মুখোমুখি হয়েছে মোট ৫বার। এর মধ্যে একটি টেস্ট ছিল, যেটা ড্র হয়েছে। বাকি চার ম্যাচের মধ্যে গত বছর ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশ জিতেছে ২-১ ব্যবধানে। ওই সিরিজের শেষ ম্যাচে জয় পায় ভারত এবং এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচের জিতেছে তারা। সুতরাং, ফাইনালে ফিফটি ফিফটি চান্সই ধরে রাখছে সবাই। সুতরাং, ফাইনালে কেউ ফেভারিট নয়। সুতরাং, বাংলাদেশও এশিয়া কাপের ফাইনালে জয়ের বেশ সম্ভাবনা রয়েছে।
ঘরের মাঠের দর্শক
সম্ভবত এই প্রথম তাদের ক্রিকেট ইতিহাসে, ভারত কোন ফাইনালে সম্পূর্ণ দর্শক সমর্থন হারাবে। কারণ, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা কিংবা ওয়েস্ট ইন্ডিজ- যেখানেই ভারত খেলতে যাক, সেখানেই অর্ধেক গ্যালারি ভরিয়ে তোলে প্রবাসী ভারতীয়রা। সুতরাং, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে বিদেশের মাটিতে ভারতের দর্শকই বেশি। এবারই প্রথম তারা ভুগবে সমর্থকদের সমর্থনহীনতায়। ৬ মার্চ রোববার মিরপুরের গ্যালারিতে উপস্থিত হবে প্রায় ৩০ হাজার দর্শক। গ্যালারির বাইরে থাকবে তার চেয়েও বেশি দর্শক। এবং লাখ লাখ সমর্থক থাকবে রাস্তায়। সবার কণ্ঠেই একটা প্রতিদ্বনি উচ্চারিত হবে- বাংলাদেশ। যখন লাখ লাখ কণ্ঠে এক সঙ্গে এমন উচ্চারণ ভেসে আসতে থাকবে, তখন ভারতীয়রা নিশ্চিত মানসিকভাবেই পিছিয়ে পড়বে।
পিচ কন্ডিশন
মিরপুরে আগের ম্যাচেই ভারতের জন্য সবুজ ফাঁদ পেতেছিল বাংলাদেশ। উইকেটে ঘাঁস, বাউন্সি হওয়ার কারণে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের বেশ সমস্যাতেই পড়তে হয়েছিল ওই ম্যাচে। যদিও শেষ দিকে এসে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা নিজেদের সামলে নেয়ার সুযোগ পায়। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদেরও ওই কন্ডিশনে সংগ্রাম করতে হয়েছিল। তবে, এই সময়ের মধ্যে উইকেটে বেশ পরিবর্তণ এসেছে। শ্রীলংকা এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে পুরনো চেহারাতেই দেখা গেছে মিরপুরের উইকেট। যেখানে আমাদের ব্যাটসম্যানরা আবার বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ফাইনালেও একইরকম উইকেট দেখা যেতে পারে, যেখানে বাংলাদেশের ভালো করার সম্ভাবনা আছে। এমন উইকেটই যদি হয়, তাহলে নিশ্চিত করে বলা যায়, বাংলাদেশের দারুন একটা সম্ভাবনা আছে।
প্রেরণাদায়ী মার্চ
দিনে দিনে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে মার্চ মাস হয়ে উঠছে অসম্ভব প্রেরণাদায়ী একটি মাস হিসেবে। স্বাধীনতার মাস। ৪৫ বছর আগে, ১৯৭১ সালে এই মাসেই সূচিত হয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধের। বিজয় অর্জনের পর থেকেই মার্চ মাস এবং বাংলাদেশের সাফল্য হাত ধরাধরি করে হেঁটেছে একসাথে। এই মাসেই চার বছর আগে এশিয়া কাপের ফাইনালে মাত্র ২ রানের জন্য পাকিস্তানের কাছে হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ আরও উন্নতি করেছে ক্রিকেটে। পরিণত হয়েছে বিশ্বের অন্যতম সেরা একটি দলে। আর পাকিস্তানের কাছ থেকেও নিয়েছে দারুণ প্রতিশোধ। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা ভালোভাবেই চাইবেন, কোনভাবেই যেন ২০১২ ফিরে না আসুক, ফিরে আসুক, ১৯৭১।
মাশরাফির অধিনায়কত্ব
২০১২ এশিয়া কাপের ফাইনালে কেন বাংলাদেশ হেরেছিল- এই বিশ্লেষনে অনেক সময়ই উঠে এসেছে নেতৃত্বের দুর্বলতার কথা। মুশফিকুর রহিম একজন ভালো ক্রিকেটার এবং ভালো অধিনায়ক- তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু মাশরাফির যে নেতৃত্বগুণ তার সঙ্গে অনেক কিছুই মিল পাওয়া যাবে না মুশফিকের মধ্যে। চাপের সময়টা কিভাবে সামলাবেন সেটাই জানা ছিল না হয়তো মুশফিকের। মাশরাফিকে ইতিমধ্যেই অনেকে বলতে শুরু করে দিয়েছেন, ‘ক্যাপ্টেন কুল’। এমনকি বাংলাদেশ না জিতলেও একই মন্তব্য ভেসে আসবে। গত বছর থেকেই মাশরাফির নেতৃত্বে অসাধারণ উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। তার অসাধারণ নেতৃত্ব বাংলাদেশকে বিশ্বমানের অনেক সাফল্য এনে দিচ্ছে। এমনকি মাশরাফির নেতৃত্বে একটি এশিয় কাপ জয় যেন অনিবার্য হয়ে উঠছে।