ঢাকা ০৮:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৬ জানুয়ারী ২০২৫, ২৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেড় বিঘা জমিতে খিরা চাষে বছরে লাভ ৩ লাখ টাকা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৪৬:১৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৯ জুলাই ২০২১
  • ২৫৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভোরের আলো ফুটতেই ক্ষেত থেকে খিরা তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন চন্দ্র শেখর ও মীরা মন্ডল। সকাল ৮টার আগেই পিচঢালা গ্রামীণ রাস্তার পাশে প্রায় ১০ মণ খিরার স্তূপ জমে।

এটি একদিনের কোনো গল্প নয়। যশোরের কেশবপুর উপজেলা শহর থেকে রাজগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের নেংটাখালি মোড়ে প্রতিদিন সকালের রুটিন চন্দ্র শেখর দম্পতির। তবে অক্লান্ত এই পরিশ্রমে পেটে-ভাতে নয়, অর্থনৈতিকভাবে বেশ সাবলম্বী তারা। সারা বছর সংসার খরচ চালিয়েও বছরে গচ্ছিত রাখেন অন্তত দু’লাখ টাকা।

চন্দ্র শেখর মন্ডল কেশবপুর উপজেলার মূলগ্রাম ক্ষত্রিয়পাড়ার মৃত মনোরঞ্জন মন্ডলের ছেলে। আট বছর আগে ২০১৩ সালে বাবার মৃত্যুর পরে বেশ অসচ্ছল হয়ে পড়েন। সে বছরই স্থানীয় কৃষক হাজারী লাল মন্ডলের খিরা চাষ দেখে নিজে চাষে উদ্বুদ্ধ হন। এরপর সেবছরই বাবার রেখে যাওয়া ৩৯ শতক জমিতে স্বামী-স্ত্রী মিলে খিরা চাষ শুরু করেন। ওই জমিতে বছরে দু’বার খিরা চাষ ও শীতকালীন সবজি চাষাবাদ শুরু করেন।

আস্তে আস্তে খিরা চাষে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেন তারা। একপর্যায়ে ২০১৬ সালের দিকে ওই জমির পাশে আরও ২৫ শতক জমি ইজারা নিয়ে একই পদ্ধতিতে খিরা ও শীতকালীন সবজির চাষ করেন। এছাড়াও স্বামী-স্ত্রী মিলে বাবার রেখে যাওয়া বিলের ৬০ শতক জমিতে ধান-পাটের চাষ করেন। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি এ কৃষক দম্পতির। বৃদ্ধ মা ও এক ছেলে নিয়ে চাষাবাদে রোজগারের টাকায় চলছে সুখের সংসার। খিরা বিক্রির টাকায় কিনেছেন কিছু জমি, ভবিষ্যতের জন্য ব্যাংকে গচ্ছিত রেখেছেন কিছু টাকা।

কৃষক চন্দ্র শেখর মন্ডল  বলেন, এক বিঘা (৩৬ শতক) জমিতে খিরা চাষে বীজ, মিশ্র সার, কীটনাশক ও শ্রমিক বাবদ প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। খিরা বীজ বপনের ৪০ দিন পর থেকেই ফল বিক্রি শুরু হয়ে একমাস পর্যন্ত বেচাকেনা হয়। তবে ভালো ফলন হলে কমপক্ষে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা বেচাকেনা হয়। সে হিসেবে দেড় বিঘা জমিতে বছরে দু’বার চাষ করে ৩ লাখ ২০ হাজার ও শীতকালীন সবজির আবাদ করে আরও ৬০-৭০ হাজার টাকা রোজগার হয়।

চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে চন্দ্র শেখর জানান, প্রথমে জমি প্রস্তুত করে আড়াই হাত অন্তর বীজতলা তৈরি করে সামান্য পরিমাণে মিশ্র সার প্রয়োগ করেন। এর এক সপ্তাহ পরে প্রতিটি বীজতলায় পাঁচটি করে বীজ বপন করেন। এরপর খিরার চারা গজালে গোড়ায় আবারও মিশ্র সার দিয়ে মাটি দিয়ে ঢেকে দেন। এরপর চারফুট উচ্চতায় বাঁশ ও সুতার জাল দিয়ে মাচা তৈরি করে দেন। এই মাচার উপরে খিরা গাছ ওঠে। গাছের বয়স ৩০ দিন হতেই প্রত্যেক গাছ থেকে খিরা তুলে বাজারে নেওয়া শুরু হয়।

প্রথম দিকে ফলন কম হলেও গাছের বয়স ৪৫ দিন হলে দেড় বিঘা জমিতে প্রতিদিন সকালে সাত-আট মণ খিরা পাওয়া যায়।

সার প্রয়োগ সম্পর্কে চন্দ্র শেখর  বলেন, একই জমিতে সারাবছর চাষাবাদ করায় ইতোপূর্বে আলাদা আলাদা রাসায়নিক সার (ইউরিয়া, ফসফেট, পটাশ, সালফার) কিনে একসঙ্গে মিশিয়ে জমিতে ব্যবহার করতাম। গ্রামের বাজারে সরকারি নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশি নেওয়ায় কিছুটা ব্যয় বেশি হতো। এখন শুধু ‘বেঙ্গল মিশ্র সার’ কিনে ব্যবহার করি। তুলনামূলক কম দামে এই সারে ফলন অনেক ভালো পাচ্ছি, এছাড়াও পরিপুষ্ট হওয়ায় খিরার সাইজ ও রং ভালো হচ্ছে।

চন্দ্র শেখরের স্ত্রী মীরা মন্ডল  বলেন, স্বামীর সঙ্গে নিজেদের জমির কাজে সহযোগিতা করে আয়ের টাকায় সুখের সংসার চালাচ্ছি, এতে লজ্জার কিছু দেখি না। বরং আমার কাছে অনেক ভালো লাগে।

বর্তমানে চন্দ্র শেখর ও মীরা মন্ডল দম্পত্তির এই উন্নত চাষ পদ্ধতি দেখে আশপাশের আরও অনেক খিরা চাষি তাদের পরামর্শ নিচ্ছেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

দেড় বিঘা জমিতে খিরা চাষে বছরে লাভ ৩ লাখ টাকা

আপডেট টাইম : ১০:৪৬:১৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৯ জুলাই ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভোরের আলো ফুটতেই ক্ষেত থেকে খিরা তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন চন্দ্র শেখর ও মীরা মন্ডল। সকাল ৮টার আগেই পিচঢালা গ্রামীণ রাস্তার পাশে প্রায় ১০ মণ খিরার স্তূপ জমে।

এটি একদিনের কোনো গল্প নয়। যশোরের কেশবপুর উপজেলা শহর থেকে রাজগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের নেংটাখালি মোড়ে প্রতিদিন সকালের রুটিন চন্দ্র শেখর দম্পতির। তবে অক্লান্ত এই পরিশ্রমে পেটে-ভাতে নয়, অর্থনৈতিকভাবে বেশ সাবলম্বী তারা। সারা বছর সংসার খরচ চালিয়েও বছরে গচ্ছিত রাখেন অন্তত দু’লাখ টাকা।

চন্দ্র শেখর মন্ডল কেশবপুর উপজেলার মূলগ্রাম ক্ষত্রিয়পাড়ার মৃত মনোরঞ্জন মন্ডলের ছেলে। আট বছর আগে ২০১৩ সালে বাবার মৃত্যুর পরে বেশ অসচ্ছল হয়ে পড়েন। সে বছরই স্থানীয় কৃষক হাজারী লাল মন্ডলের খিরা চাষ দেখে নিজে চাষে উদ্বুদ্ধ হন। এরপর সেবছরই বাবার রেখে যাওয়া ৩৯ শতক জমিতে স্বামী-স্ত্রী মিলে খিরা চাষ শুরু করেন। ওই জমিতে বছরে দু’বার খিরা চাষ ও শীতকালীন সবজি চাষাবাদ শুরু করেন।

আস্তে আস্তে খিরা চাষে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেন তারা। একপর্যায়ে ২০১৬ সালের দিকে ওই জমির পাশে আরও ২৫ শতক জমি ইজারা নিয়ে একই পদ্ধতিতে খিরা ও শীতকালীন সবজির চাষ করেন। এছাড়াও স্বামী-স্ত্রী মিলে বাবার রেখে যাওয়া বিলের ৬০ শতক জমিতে ধান-পাটের চাষ করেন। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি এ কৃষক দম্পতির। বৃদ্ধ মা ও এক ছেলে নিয়ে চাষাবাদে রোজগারের টাকায় চলছে সুখের সংসার। খিরা বিক্রির টাকায় কিনেছেন কিছু জমি, ভবিষ্যতের জন্য ব্যাংকে গচ্ছিত রেখেছেন কিছু টাকা।

কৃষক চন্দ্র শেখর মন্ডল  বলেন, এক বিঘা (৩৬ শতক) জমিতে খিরা চাষে বীজ, মিশ্র সার, কীটনাশক ও শ্রমিক বাবদ প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। খিরা বীজ বপনের ৪০ দিন পর থেকেই ফল বিক্রি শুরু হয়ে একমাস পর্যন্ত বেচাকেনা হয়। তবে ভালো ফলন হলে কমপক্ষে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা বেচাকেনা হয়। সে হিসেবে দেড় বিঘা জমিতে বছরে দু’বার চাষ করে ৩ লাখ ২০ হাজার ও শীতকালীন সবজির আবাদ করে আরও ৬০-৭০ হাজার টাকা রোজগার হয়।

চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে চন্দ্র শেখর জানান, প্রথমে জমি প্রস্তুত করে আড়াই হাত অন্তর বীজতলা তৈরি করে সামান্য পরিমাণে মিশ্র সার প্রয়োগ করেন। এর এক সপ্তাহ পরে প্রতিটি বীজতলায় পাঁচটি করে বীজ বপন করেন। এরপর খিরার চারা গজালে গোড়ায় আবারও মিশ্র সার দিয়ে মাটি দিয়ে ঢেকে দেন। এরপর চারফুট উচ্চতায় বাঁশ ও সুতার জাল দিয়ে মাচা তৈরি করে দেন। এই মাচার উপরে খিরা গাছ ওঠে। গাছের বয়স ৩০ দিন হতেই প্রত্যেক গাছ থেকে খিরা তুলে বাজারে নেওয়া শুরু হয়।

প্রথম দিকে ফলন কম হলেও গাছের বয়স ৪৫ দিন হলে দেড় বিঘা জমিতে প্রতিদিন সকালে সাত-আট মণ খিরা পাওয়া যায়।

সার প্রয়োগ সম্পর্কে চন্দ্র শেখর  বলেন, একই জমিতে সারাবছর চাষাবাদ করায় ইতোপূর্বে আলাদা আলাদা রাসায়নিক সার (ইউরিয়া, ফসফেট, পটাশ, সালফার) কিনে একসঙ্গে মিশিয়ে জমিতে ব্যবহার করতাম। গ্রামের বাজারে সরকারি নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশি নেওয়ায় কিছুটা ব্যয় বেশি হতো। এখন শুধু ‘বেঙ্গল মিশ্র সার’ কিনে ব্যবহার করি। তুলনামূলক কম দামে এই সারে ফলন অনেক ভালো পাচ্ছি, এছাড়াও পরিপুষ্ট হওয়ায় খিরার সাইজ ও রং ভালো হচ্ছে।

চন্দ্র শেখরের স্ত্রী মীরা মন্ডল  বলেন, স্বামীর সঙ্গে নিজেদের জমির কাজে সহযোগিতা করে আয়ের টাকায় সুখের সংসার চালাচ্ছি, এতে লজ্জার কিছু দেখি না। বরং আমার কাছে অনেক ভালো লাগে।

বর্তমানে চন্দ্র শেখর ও মীরা মন্ডল দম্পত্তির এই উন্নত চাষ পদ্ধতি দেখে আশপাশের আরও অনেক খিরা চাষি তাদের পরামর্শ নিচ্ছেন।