মনোয়ার হোসাইনঃ কিশোরগঞ্জে করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতি বিপজ্জনক আকার ধারণ করছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে শনাক্তের সংখ্যা। জেলার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সর্বশেষ বুধবার (৭ জুলাই) রাতে প্রকাশিত রিপোর্টেও সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত রয়েছে। ফলে সংক্রমণ পরিস্থিতি দিন দিনই উদ্বেগজনক হয়ে ওঠছে।
সর্বশেষ রিপোর্টে জেলায় একদিনে সর্বোচ্চ ১২৭ জন নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর বিপরীতে করোনাভাইরাস মুক্ত হয়ে জেলায় এদিন সুস্থ হয়েছেন মোট ৩১ জন। এছাড়া জেলায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে চারজনসহ মোট ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সর্বশেষ করোনা পজেটিভ হয়ে মারা যাওয়া চারজনই পুরুষ। তাদের মধ্যে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার একজন (৬৫), হোসেনপুর উপজেলার একজন (৫৫) ও করিমগঞ্জ উপজেলার দুইজন (৮৫ ও ৬৮ বছর)।
চারজনই মঙ্গলবার (৬ জুলাই) কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। আগের দিন মঙ্গলবার (৬ জুলাই) জেলায় করোনা আক্রান্তের মোট সংখ্যা ছিল ১১৪৯ জন। ফলে বুধবার (৭ জুলাই) বর্তমান রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে মোট ১২৪১ জন। জেলায় নতুন করোনা শনাক্ত হওয়া মোট ১২৭ জনের মধ্যে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় ৫২ জন শনাক্ত হয়েছে।
এছাড়া বাকি ৭৫ জনের মধ্যে হোসেনপুর উপজেলায় ৭, করিমগঞ্জ উপজেলায় ৬, তাড়াইল উপজেলায় ৮, পাকুন্দিয়া উপজেলায় ১১, কটিয়াদী উপজেলায় ১২, ভৈরব উপজেলায় ২৩, নিকলী উপজেলায় ২, বাজিতপুর উপজেলায় ৫ এবং ইটনা উপজেলায় ১ জন শনাক্ত হয়েছে। ফলে শনাক্ত, সুস্থ ও মৃত্যু সব সূচকেই জেলার মধ্যে শীর্ষে থাকা কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় করোনা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, জেলায় বর্তমান মোট রোগী ১২৪১ জনের মধ্যে ৭৬১ জনই কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায়।আগের দিন এ সংখ্যা ছিল ৭৩১ জন।এছাড়া জেলায় করোনায় মোট মারা যাওয়া ১০২ জনের মধ্যে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় ৩৬ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। এক উপজেলা বর্তমানে করোনাশূন্য থাকায় বাকি ১১ উপজেলা মিলিয়ে বর্তমান রোগীর সংখ্যা ৪৮০ জন।
কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের আরটি-পিসিআর ল্যাবে হাসপাতালটির প্রি-আইসোলেশনে ভর্তিকৃত জরুরী রোগীসহ সোমবার (৫ জুলাই), মঙ্গলবার (৬ জুলাই) ও বুধবার (৭ জুলাই) সংগৃহীত মোট ১৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১০৯ জনের কোভিড-১৯ পজেটিভ এসেছে। ল্যাবটিতে নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার শতকরা প্রায় ৫৮ ভাগ। যা আগের দিন ছিল শতকরা প্রায় ৫২ ভাগ। এ রিপোর্টে মোট ৩১১ জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল দেওয়া হয়েছে। বাকি ১২৩ জনের মধ্যে ৬৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে বাজিতপুরের জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আরটি-পিসিআর ল্যাবে। সেখানে মঙ্গলবার (৬ জুলাই) এই ৬৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৫ জনের কোভিড-১৯ পজেটিভ এসেছে।
এছাড়া করিমগঞ্জ, তাড়াইল, পাকুন্দিয়া, কুলিয়ারচর, ভৈরব ও বাজিতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট ৫৮ জনের রেপিড এন্টিজেন টেস্টে ১৩ জনের কোভিড-১৯ পজেটিভ এসেছে। নতুন সুস্থ হওয়া ৩১ জনের মধ্যে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার ২০ জন রয়েছেন। বাকি ১১ জনের মধ্যে করিমগঞ্জ উপজেলার ৫ জন ও কুলিয়ারচর উপজেলার ৬ জন রয়েছেন।
কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে বর্তমানে আক্রান্ত ও সন্দেহজনক মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১২৮ জন যাদের মধ্যে ৯ জন আইসিইউতে রয়েছেন।
গত ২৪ ঘন্টায় নতুন ২৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন এবং ২৯ জন ছাড়পত্র পেয়েছেন। হাসপাতালটিতে চারজন কোভিড-১৯ পজেটিভ ছাড়াও তিনজন সন্দেহজনক কোভিড-১৯ রোগী মারা গেছেন। এই সময় পর্যন্ত জেলায় মোট ৬৭১২ জন শনাক্ত, ৫৩৬৯ জন সুস্থ এবং ১০২ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। বর্তমানে জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ১২৪১ জন। তাদের মধ্যে ৮৭ জন হাসপাতাল ও ১১৫৪ জন হোম আইসোলেশনে রয়েছেন। শনাক্ত, সুস্থ ও মৃত্যু সব সূচকেই জেলার মধ্যে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা শীর্ষে রয়েছে।
জেলার একমাত্র অষ্টগ্রাম উপজেলায় বর্তমানে করোনা আক্রান্ত কোন রোগী নেই।
বর্তমানে করোনা আক্রান্ত মোট ১২৪১ জনের মধ্যে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় ৭৬৫, হোসেনপুর উপজেলায় ২৫, করিমগঞ্জ উপজেলায় ৩৭, তাড়াইল উপজেলায় ৩৯, পাকুন্দিয়া উপজেলায় ৬৩, কটিয়াদী উপজেলায় ৮৬, কুলিয়ারচর উপজেলায় ২১, ভৈরব উপজেলায় ১৪৭, নিকলী উপজেলায় ১০, বাজিতপুর উপজেলায় ২৭, ইটনা উপজেলায় ২৩ এবং মিঠামইন উপজেলায় ২ জন রয়েছেন।
কিশোরগঞ্জ জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো. মুজিবুর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।