রফিকুল ইসলামঃ ‘বিট পুলিশিং বাড়ি বাড়ি, নিরাপদ সমাজ গড়ি’ — জনসেবামূলক এই মানবিক স্লোগানসম্বলিত স্টিকার নিয়ে উপজেলার প্রতিটি গ্রামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশের সেবা গ্রহণের দাওয়াত পৌঁছে দিচ্ছে কিশোরগঞ্জের মিঠামইন থানা বিট পুলিশ।
পুলিশ সদর দপ্তরের কমিউনিটি ও বিট পুলিশিং শাখা সূত্রে জানা যায়, ‘বিট পুলিশিং’কে মানুষের কাছে যাওয়ার অন্যতম উপায় বের করা হয়েছে। বিট পুলিশিং এমন একটি কার্যক্রম, যার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।
সূত্রটি আরও জানায়, বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীকে আরও বেশি জনমুখী করতে এবং মানুষের দোরগোড়ায় পুলিশী সেবা পৌঁছে দিতে সারাদেশে বিট পুলিশিং কার্যক্রম চালু হয়েছে। এখন থেকে পুলিশ জনগণের দ্বারে দ্বারে গিয়ে পুলিশী সেবা পৌঁছে দেবে।
সে লক্ষ্যেই মিঠামইন থানা বিট পুলিশ জঙ্গি তৎপরতা, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, মাদক ব্যবসা, নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা, ধর্ষণ, ইভটিজিং, বাল্যবিয়ে, নারী পাচার, চুরি, ডাকাতি ও সাম্প্রদায়িকতাসহ সামাজিক ব্যাধিসমূহ প্রতিরোধকল্পে জনসচেতনতা তৈরি করতে এবং আইন ও পুলিশী সেবা ইউনিয়ন ভিত্তিক বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছে।
ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মো: হাবিবুর রহমান বিপিএম.পিপিএম বার ও জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো: মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম বারের নির্দেশনায় পুলিশ-জনতার মধ্যে আরো দৃঢ়বন্ধন স্থাপন এবং অবৈধ ও অসামাজিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে এ জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে বলে পুলিশ প্রশাসন জানায়।
প্রতিকূল সামাজিক পরিবেশে মানুষ ব্যক্তিত্বের মধ্যে অসুস্থ প্রবণতা সৃষ্টি হয়ে সমাজিক ব্যাধির জন্ম হচ্ছে।
বাঙালি আবহমানকালের যে কৃষ্টি-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য, নিষ্কলুষ মূল্যবোধ ও চারিত্রিক স্বকীয়তার যে অবক্ষয়, তা প্রতিরোধে বড় চিকিৎসক একমাত্র পুলিশ বা প্রশাসন নয়, এমন কি সরকারও নয়– সমাজও। বিদ্যমান অথচ নিষ্ক্রিয় সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুলিশের পাশাপাশি কিছুকিছু দায়িত্ব পালনে সক্রিয় হওয়ারও প্রয়োজন রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত প্রকাশ করছেন।
মিঠামইন থানার ওসি মো: জাকির রব্বানী জানান, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ৭টি বিট রয়েছে। প্রতিটিতে একজন উপ-পরিদর্শক (এসআই), একজন এএসআই ও দুজন কনস্টেবলের সমন্বয়ে একেকটি বিট পুলিশ গঠন করা হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত এই পুলিশ কর্মকর্তারাই এলাকার আইন-শৃঙ্খলাসহ সার্বিক বিষয়ে খুঁজ রাখবেন ও প্রাথমিকভাবে ব্যবস্থা নেবেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
গোপদিঘী ইউনিয়ন বিটের দায়িত্বে রয়েছেন এসআই মো: নূরুল হুদা, মিঠামইন সদর ইউনিয়নে এসআই মো: নজরুল ইসলাম, ঢাকী ইউনিয়নে এসআই গণেশ চন্দ্র শীল, ঘাগড়া ইউনিয়নে এসআই লুৎফর রহমান, কেওয়ারজোড় ইউনিয়নে এসআই প্রভাত কর্মকার, কাটখাল ইউনিয়নে এসআই মো: মাসুদ মিয়া ও বৈরাটি ইউনিয়নে এসআই শেখ জিয়াউল রাব্বি।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, সমাজের ছোট ছোট অপরাধ থেকেই বড় বড় অপরাধের জন্ম হয়। বিট পুলিশিং কার্যক্রমের মাধ্যমে সব স্তরের মানুষকে নিয়ে অপরাধ দূর করতে সচেষ্ট রয়েছি সবসময়।
তারা এর জন্য এলাকার জনসাধারণকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, জনসাধারণের ভোগান্তি কমাতে প্রত্যেকেই সততা ও নিষ্ঠার সাথে সেবা দিয়ে যাবেন। কেউ বিপদে পড়লে 999 নাম্বারে যোগাযোগ করলে পুলিশ হাজির থাকবে জনতার পাশে।
মিঠামইন উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আছিয়া আলম বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতির এলাকা কীভাবে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকবে পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি উপজেলা পরিষদও সোচ্চার রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো: মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, করোনার মধ্যে বিভিন্নভাবে সেবা দিতে পেরে সাধারণ মানুষের ভালোবাসা এবং জনতার পুলিশ হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে পুলিশ বাহিনী। এই ভালোবাসা ও খ্যাতি ধরে রাখতে মানুষের আরও কাছাকাছি যাচ্ছে সেবা নিয়ে।
তিনি সমাজকে সুগঠিত করতে এবং জনসাধারণ বিশেষ করে যুবকদের মধ্যে নীতিজ্ঞান ও সচেতনতা জাগিয়ে তুলতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে মন্তব্য করে বলেন, সচেতন হলে কোনো রকম অন্যায় কুমন্ত্রণা তাদের বশীভূত করতে পারবে না।
এদিকে সুশীল সমাজ বিট পুলিশিংয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানায়, সমাজে ‘হোয়াইট ক্রিমিনালরা’ এসবের হোতা। এদের দৌরাত্ম্য বিশৃঙ্খলা ও অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরা ‘খাইট্টা লাগাচ্ছে আর আইট্টা গিয়া ভাইঙা দিয়া আসছে’। তাদের বিচরণ সর্বত্র। তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা গেলে অপরাধ কমতো এবং পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় শান্তি ফিরে আসতো। #
সহযোগী সম্পাদক, আজকের সূর্যোদয়, ঢাকা।