হাওরে দেখা মিলছে না দেশীয় মাছের

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আষাঢ় মাসে পানি থৈ থৈ করে। চারদিকে খালে বিলে ব্যাঙ ডাকে। এ প্রবাদগুলো যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সঠিক সময়ে পানি আসছে না হাওরে। যার ফলে দেখা মিলছে না দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছের।

এমতাবস্থায় বাধ্য হয়েই জেলার বিভিন্ন উপজেলার হাটবাজারে চাষের মাছ বিক্রি করতে হচ্ছে জেলেদের। এছাড়াও দেশীয় অনেক প্রজাতির মাছও এখন রয়েছে বিলুপ্তির পথে।

হাওরপাড়ের বাসিন্দারা বলছেন, আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি সময় চলে আসলেও হাওরে দেখা নেই কাঙ্খিত পরিমাণ পানির। আর নতুন পানি না আসায় বাজারে উঠছে না দেশীয় মাছ।

জানা যায়, হাওর-বাওর বেষ্টিত হবিগঞ্জ জেলা। এ জেলাটি বিভিন্ন কারণে দেশের শীর্ষে রয়েছে। তেমনি একটি কারণ মাছের প্রাচুর্য। হাওর অঞ্চল হওয়ায় এখানকার অধিকাংশ মানুষের বর্ষা কালের প্রধান কাজ মাছ শিকার বা চাষ। মাছ চাষ করে এখানকার লোকজন দেশের উন্নয়নে বিরাট অবদান রাখছেন। কেউ লিজ নিয়ে, কেউবা নিজের পুকুরে মাছ চাষ করছেন। এখানকার অনেক লোক পুকুরে মাছ চাষ না করেও বিভিন্ন হাওর থেকে মাছ আহরণ করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি নিজেদের উন্নয়ন করছেন।

এক সময় প্রচূর মাছ পাওয়া যেত। এখন মাছ পাওয়া স্বপ্নের মতো মনে হয়। জেলার আজমীরিগঞ্জ, লাখাই, নবীগঞ্জ ও বানিয়াচং, উপজেলাতে বেশিরভাগ মানুষ মাছ শিকারের সঙ্গে জড়িত। বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকার মানুষ বেকার হয়ে পড়ায় তারা বেছে নেন মাছ শিকার। এই জেলায় রয়েছে করাঙ্গী, বরাক, ভেড়ামোহনা, শুঁটকি, রত্না, বিজনা, খোয়াই, কুশিয়ারা, ঝিংড়ী, সুতাংসহ বিভিন্ন নদী। আরো আছে অসংখ্য খাল-বিল, ডোবাসহ নানা প্রাকৃতিক জলাশয়। আর এ কারণেই এখানে বেশি পরিমাণে মাছ পাওয়া যায়।

যদিও এবার জলাশয়গুলোতে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো শৈল, গজার, শিং, পাবদা, রুই, কাতল, চিতল, টেংরা, চিংড়ি, বোয়াল, বাউস, আইড়, টাকি, বাইম, পুঁটিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের দেখা মিলছে না।

জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় জলাশয়ের পরিমাণ ৯০ হাজার ১৩৫ হেক্টর। গত দুই তিন বছর আগেও যেখানে মাছ উৎপাদন হতো ২৮ হাজার ৪০০ টন। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রফতানি করা হতো ইউরোপসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে, সেখানে এবার স্থানীয় চাদিহা মেটানো সম্ভবপর হচ্ছে না।

জেলা মৎস্য বিভাগ জানায়, এখানকার মিঠা পানির মাছ এক সময় ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হতো। কিন্তু দিন দিন দেশীয় মাছের উৎপাদন কমে আসায় এখন স্থানীয় চাহিদা মেটানোই সম্ভবপর হয়ে উঠঠে না। যদিও পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাছের পরিমাণও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করছেন তারা।

স্থানীয় মৎস্যজীবীরা বলছেন, এবার জেলার হাওরে যা পানি রয়েছে সেগুলো বৃষ্টির পানি। ঢলের পানি হাওরে আসেনি। ফলে পর্যাপ্ত পানি না আসায় দেশীয় মাছ বৃদ্ধি পাচ্ছে না।

হবিগঞ্জ শহরের শায়েস্তানগর মাছ বাজারে মাছ ক্রয় করতে আসা তারেক মিয়া জানান, এখন বাজারে যে মাছ আসছে বেশিরভাগ মাছ চাষের। আর যে অল্পপরিমাণ দেশীয় মাছ বাজারে আনা হচ্ছে তার দাম আকাশ চুম্বি। তাই সাধারণ মানুষের পক্ষে এখন দেশীয় মাছ কিনে খাওয়া সম্ভব নয়।

আব্দুর রহমান নামে আরেক ব্যক্তি জানান, দেশীয় মাছ কিনে খাওয়া এখন গরিবদের জন্য স্বপ্ন হয়ে যাচ্ছে। নিম্ন আয়ের মানুষরা এখন বেশি চাষের মাছের প্রতিই ঝুঁকছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, এবার হাওরে দেরীতে পানি আসায় দেশীয় মাছের প্রজনন অনেকটা ব্যবহৃত হচ্ছে। হাওরে ছোট ও মা মাছ রক্ষায় উপজেলা প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে আষাঢ়ের শেষ নাগাদ হাওরের পানি বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর