ভারতে তীব্র তাপদাহে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সারাদেশে এ পর্যন্ত মারা গেছে ১৪১২ জন। কেবল অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানা রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ২১৮ জনেরও বেশি মারা গেছে। এ নিয়ে এই দুটি রাজ্যে তাপদাহে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৩৪৫ জনে। এই দুই রাজ্য ছাড়াও মধ্য প্রদেশ, উত্তর প্রদেশসহ আরও অন্যান্য অঞ্চলেও তাপদাহে নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
তাপদাহে যারা মারা গেছে তাদের অধিকাংশই বয়স্ক কিংবা শ্রমিক। হিটস্ট্রোক কিংবা পানিশূন্যতায় তাদের মৃত্যু ঘটছে। বিবিসি, এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া। গত বুধবার তাপমাত্রা কিছুটা ওঠানামা করলেও তাপদাহ আগের মতোই অব্যাহত রয়েছে। তেলেঙ্গানায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৭ জন মারা গেছে। এ নিয়ে এই রাজ্যে মোট মারা গেল ৩৪০ জন।
সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে গত বুধবার অন্ধ্রপ্রদেশের গুনটুর জেলার যজ্ঞমহেশওয়ারাপুরামে। এ ছাড়া বিজয়ওয়ারা, বাপাতল্লা ও মছলিপত্তনামে তাপমাত্রা ছিল ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তীব্র তাপদাহকে এই দুই রাজ্যে ‘প্রাকৃতিক বিপর্যয়’ হিসেবে দেখছে স্থানীয় প্রশাসন। সেই সঙ্গে ক্ষুদ্র পরিসরে ত্রাণ তত্পরতাও পরিচালিত হচ্ছে।
তেলেঙ্গানায় নলগুণ্ডা ও খাম্মামে বুধবার সর্বোচ্চ ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। তেলেঙ্গানার আদিলাবাদ, নিজামাবাদ, করিমনগর, মেদাক, বারঙ্গল, খাম্মাম, রঙ্গারেড্ডি, হায়দরাবাদ, নালগোনদা ও মাহবুবনগর জেলা, আর অন্ধ্রপ্রদেশের পূর্ব গোড়াবাড়ি, পশ্চিম গোড়াবাড়ি, কৃষ্ণ, গুন্তুর, প্রকাশম, নেলোর, চিত্তর, কাদাপা ও কুর্নুল জেলা থেকে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম। তবে সপ্তাহের শেষে তাপদাহ খানিকটা কমে আসতে পারে। উত্তর-পশ্চিমা বায়ুর দিক খানিকটা পরিবর্তিত হয়েছে।
কেবল অন্ধ্রপ্রদেশে বুধবার ১২১ জনেরও বেশি প্রাণ হারায়। প্রদেশের নেলোরে, প্রকাশম, বিজয়নগরম, কৃষ্ণা, কাদপা, পশ্চিম গোদাবরি, গুন্তুর, বিশাখাপত্তম, শ্রিককুলাম ও অনন্তপুর, চিত্তোর ও কুর্নল থেকে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে এই রাজ্যে তাপদাহে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১ হাজার ৫ জনে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা কর্মকর্তারা জনগণকে দিনের বেলায় বাইরে না যাওয়ার ব্যাপারে পরামর্শ দিচ্ছে এবং পানীয় জাতীয় খাবার খাওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করছে। পথচারীদের খাবার পানি সরবরাহ করতে অন্ধ্রপ্রদেশে পুলিশ বিভাগ প্রতিটি পুলিশ স্টেশনে পানি সরবরাহ কেন্দ্র খুলেছে। তারা পথচারীদের পানি সরবরাহ করছে। অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার প্রত্যেক মৃত ব্যক্তির জন্য এক লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে।
দেশটিতে মৃত্যুর মিছিলে প্রতিদিনই নতুন সংখ্যা এসে যুক্ত হচ্ছে। কিন্তু আবহাওয়া অফিস শোনাতে পারছে না আশার কোনো বাণী। বরং আবহাওয়া কর্মকর্তারা বলছেন, তেলেঙ্গানার সাত জেলায় ও অন্ধ্রপ্রদেশের ছয় উপকূলীয় জেলায় আরও দু’দিন ভয়াবহ তাপদাহ অব্যাহত থাকবে। আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক ওয়াই কে রেড্ডি বলেন, তবে ৪৪-৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা আরও কিছু দিন অব্যাহত থাকবে বলে আশঙ্কা করছি আমরা।
বিশেষ করে অন্ধ্রপ্রদেশে এই তাপমাত্রা অনুভূত হবে। এদিকে কেবল এই দুটি রাজ্যেই নয়, সারা ভারতের সর্বত্রই তাপদাহের শিকার হচ্ছে বহু মানুষ। চলতি মাসে আহমেদাবাদে প্রাণ হারায় ৭ জন, উড়িষ্যা ও রাজস্থানে ৪১ ও ৪৭ জন। রাজধানী দিল্লিতে তাপদাহে মারা গেছে দু’জন। তবে তাপদাহ শুরু হওয়ার পর গত বুধবার প্রথম সেখানে তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে। রাজস্থান ও উড়িষ্যাতে তাপমাত্রা এখনও ৪৫ থেকে ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠানামা করছে।
এ ছাড়া মহারাষ্ট্র, উত্তর প্রদেশ, পাঞ্জাব, মধ্য প্রদেশ ও পশ্চিম বঙ্গে তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশেই উঠানামা করছে।
আহমেদাবাদ সরকার জানিয়েছে, আগামী সাত দিনেও তাপমাত্রা কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। ফলে আহমেদাবাদ সরকার ‘অরেঞ্জ অ্যালার্ট’ জারি করতে বাধ্য হয়েছে। উত্তর, মধ্য ও পূর্ব ভারতেও তাপদাহ চলছে এবং তা অব্যাহত থাকবে আরও কয়েক দিন।