ঢাকা ০২:৩০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক হল ছারপোকা আর তীব্র গরমে ঘুমাতে হয় ছাদে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:১৯:৫০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মে ২০১৫
  • ৬১৪ বার

আবাসন সংকটের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছে প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)-এর শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া তীব্র গরম, রুমে ছারপোকা, ফ্যানের সংকটসহ নানা কারণে অনেক শিক্ষার্থীই মানবেতর জীবনযাপন করছে। অনেকে নিরুপায় হয়ে ঘুমাচ্ছে হলের ছাদে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

ঢাবিতে ১৮টি আবাসিক হল ও দুটি ছাত্রাবাস রয়েছে। সম্প্রতি ছেলেদের জন্য এক হাজার আসন বিশিষ্ট ‘বিজয় একাত্তর’ চালু হয়েছে। সব হল মিলিয়ে প্রায় ১৫-২০ হাজার শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা হলেও বাকি অর্ধেক শিক্ষার্থীর জন্য কোনো আবাসনের ব্যবস্থা নেই। প্রতি বছর শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও সে অনুপাতে বাড়ছে না আসন সংখ্যা। ফলে এর প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা থেকে শুরু করে সামগ্রিক জীবনযাত্রায়।শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নানা সমস্যায় জর্জরিত আবাসিক শিক্ষার্থীরা কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। আবাসন সমস্যার কারণে কোনো কোনো হলের অবস্থা উদ্বাস্তু শিবিরের পরিবেশকেও হার মানায়। গণরুমগুলোতে আটজনের বিপরীতে থাকছে অন্তত ২০-৩০ জন। অনেকেই রাত কাটায় হলের বারান্দায় এবং মসজিদে। আবাসন সংকটের মাত্রা এতই তীব্র যে হলগুলোতে বর্তমানে ধারণক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ শিক্ষার্থী বসবাস করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসেব অনুযায়ী শহীদুল্লাহ হলে ১ হাজার ২২৫ জন, ফজলুল হক মুসলিম হলে ৭৬৬ জন, জগন্নাথ হলে ১ হাজার ৭২২ জন, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ৮০৫ জন, জহুরুল হক হলে ১ হাজার ৩২৫ জন, সূর্যসেন হলে ১ হাজার ৭৪ জন, হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলে ৫৪২ জন, কবি জসীমউদ্‌দীন হলে ৭৬৯ জন, স্যার এফ রহমান হলে ৬০২ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ৭০৩ জন, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে ৯৩৪ জন, অমর একুশে হলে ৬১০ জন, রোকেয়া হলে ১ হাজার ৬০০ জন, শামসুন্নাহার হলে ১ হাজার ৩৫০ জন, কুয়েত মৈত্রী হলে ২ হাজার ৬১ জন, স্যার পিজে হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হলে ১১৯ জন, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ১ হাজার ১৫০ জন এবং নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী ছাত্রী নিবাসে ১৬০ জন শিক্ষার্থী আবাসিক সুবিধা পাচ্ছে। এ ছাড়াও অনাবাসিক এবং দ্বৈতাবাসিক হিসেবে হলে অবস্থান করছে অনেক শিক্ষার্থী। তবে আবাসন সুবিধার চেয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা বেশি হওয়ায় হলগুলোতে গাদাগাদি করে বাস করছে শিক্ষার্থীরা। জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলে অন্তত ১২টি, এ এফ রহমান হলে ৫টি, জহুরুল হক হলে ১০টি, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে ৮টি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ৯টি, কবি জসীমউদ্দীন হলে ১১টি, হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলে ১৩টি, রোকেয়া হলে ২টি, কুয়েত মৈত্রী হলে ৪টি এবং ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ৩টি গণরুম রয়েছে। এসব রুমে গাদাগাদি করে থাকছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হল প্রশাসনের তদারকির অভাবের কারণে হলের সিট বণ্টনে নানা বৈষম্যের শিকার হতে হয় তাদের। অনেক হলে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেতারা সিট নিয়ে করছে নানা বাণিজ্য। অনেক নেতারা হলে সিট ভাড়াও দিয়ে থাকেন। এ ছাড়া সিট বণ্টনকে ব্যবহার করা হচ্ছে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে। ছাত্র নেতারাই প্রশাসনের বিকল্প হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, আবাসন সংকট আছে এ কথা সত্য। তবে খুব দ্রুত এটি নিরসন সম্ভব নয়। বিজয় একাত্তর হল চালু হওয়ার পর সংকট কিছুটা কমেছে। সংকট নিরসনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এসব উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন হলে আবাসন সংকট নিরসন হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক হল ছারপোকা আর তীব্র গরমে ঘুমাতে হয় ছাদে

আপডেট টাইম : ০৬:১৯:৫০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মে ২০১৫

আবাসন সংকটের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছে প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)-এর শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া তীব্র গরম, রুমে ছারপোকা, ফ্যানের সংকটসহ নানা কারণে অনেক শিক্ষার্থীই মানবেতর জীবনযাপন করছে। অনেকে নিরুপায় হয়ে ঘুমাচ্ছে হলের ছাদে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

ঢাবিতে ১৮টি আবাসিক হল ও দুটি ছাত্রাবাস রয়েছে। সম্প্রতি ছেলেদের জন্য এক হাজার আসন বিশিষ্ট ‘বিজয় একাত্তর’ চালু হয়েছে। সব হল মিলিয়ে প্রায় ১৫-২০ হাজার শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা হলেও বাকি অর্ধেক শিক্ষার্থীর জন্য কোনো আবাসনের ব্যবস্থা নেই। প্রতি বছর শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও সে অনুপাতে বাড়ছে না আসন সংখ্যা। ফলে এর প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা থেকে শুরু করে সামগ্রিক জীবনযাত্রায়।শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নানা সমস্যায় জর্জরিত আবাসিক শিক্ষার্থীরা কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। আবাসন সমস্যার কারণে কোনো কোনো হলের অবস্থা উদ্বাস্তু শিবিরের পরিবেশকেও হার মানায়। গণরুমগুলোতে আটজনের বিপরীতে থাকছে অন্তত ২০-৩০ জন। অনেকেই রাত কাটায় হলের বারান্দায় এবং মসজিদে। আবাসন সংকটের মাত্রা এতই তীব্র যে হলগুলোতে বর্তমানে ধারণক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ শিক্ষার্থী বসবাস করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসেব অনুযায়ী শহীদুল্লাহ হলে ১ হাজার ২২৫ জন, ফজলুল হক মুসলিম হলে ৭৬৬ জন, জগন্নাথ হলে ১ হাজার ৭২২ জন, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ৮০৫ জন, জহুরুল হক হলে ১ হাজার ৩২৫ জন, সূর্যসেন হলে ১ হাজার ৭৪ জন, হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলে ৫৪২ জন, কবি জসীমউদ্‌দীন হলে ৭৬৯ জন, স্যার এফ রহমান হলে ৬০২ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ৭০৩ জন, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে ৯৩৪ জন, অমর একুশে হলে ৬১০ জন, রোকেয়া হলে ১ হাজার ৬০০ জন, শামসুন্নাহার হলে ১ হাজার ৩৫০ জন, কুয়েত মৈত্রী হলে ২ হাজার ৬১ জন, স্যার পিজে হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হলে ১১৯ জন, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ১ হাজার ১৫০ জন এবং নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী ছাত্রী নিবাসে ১৬০ জন শিক্ষার্থী আবাসিক সুবিধা পাচ্ছে। এ ছাড়াও অনাবাসিক এবং দ্বৈতাবাসিক হিসেবে হলে অবস্থান করছে অনেক শিক্ষার্থী। তবে আবাসন সুবিধার চেয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা বেশি হওয়ায় হলগুলোতে গাদাগাদি করে বাস করছে শিক্ষার্থীরা। জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলে অন্তত ১২টি, এ এফ রহমান হলে ৫টি, জহুরুল হক হলে ১০টি, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে ৮টি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ৯টি, কবি জসীমউদ্দীন হলে ১১টি, হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলে ১৩টি, রোকেয়া হলে ২টি, কুয়েত মৈত্রী হলে ৪টি এবং ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ৩টি গণরুম রয়েছে। এসব রুমে গাদাগাদি করে থাকছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হল প্রশাসনের তদারকির অভাবের কারণে হলের সিট বণ্টনে নানা বৈষম্যের শিকার হতে হয় তাদের। অনেক হলে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেতারা সিট নিয়ে করছে নানা বাণিজ্য। অনেক নেতারা হলে সিট ভাড়াও দিয়ে থাকেন। এ ছাড়া সিট বণ্টনকে ব্যবহার করা হচ্ছে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে। ছাত্র নেতারাই প্রশাসনের বিকল্প হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, আবাসন সংকট আছে এ কথা সত্য। তবে খুব দ্রুত এটি নিরসন সম্ভব নয়। বিজয় একাত্তর হল চালু হওয়ার পর সংকট কিছুটা কমেছে। সংকট নিরসনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এসব উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন হলে আবাসন সংকট নিরসন হবে।