হাওর বার্তা ডেস্কঃ সড়ক যোগাযোগ উন্নত হওয়ায় দূর থেকেও মানুষ যাচ্ছে সেখানে। দিনে গিয়ে এখন দিনেই ফিরে আসার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছেন না প্রকৃতিপ্রেমীরা।
গত কয়েক বছরে হাওর এলাকার এই দৃশ্য ফেসবুক ওয়ালগুলোতে কত শত বা হাজারবার এসেছে, তার হিসাব নেই।
কিশোরগঞ্জে হাওরের বুক চিরে নির্মিত সড়ক মানুষকে জলের সৌন্দর্যের কাছাকাছি নিয়ে গেছে। তবে এই শুকনো মৌসুম, যখন, নদী ক্ষীণকায় হয়ে গেছে, তখনও মানুষের ঢল যে কম, এমন নয়।
এবার ঘুরতে যাওয়া মানুষ দুই চোখ ভরে উপভোগ করছে সবুজের সৌন্দর্য। পানি সরে যাওয়ায় চাষ হয়েছে হাওরের জমিতে। কাঁচা ধানগাছের পাশাপাশি এবার উন্মাদনা তৈরি করেছে এখানে-সেখানে সূর্যমুখীর বাগান।
ঘন সবুজের মাঝে যেন ছোট ছোট সূর্য ফুটে আছে। পাশাপাশি আছে দিগন্ত বিস্তৃত ঘাষের ক্ষেত। দল বেঁধে ঘুরে বেড়ানো মহিষ আর গরুর পালগুলো ঘুরতে যাওয়া মানুষদের মনে নিউজিল্যান্ডের আবহ তৈরি করে।
বর্ষায় বিস্তীর্ণ জলরাশির সৌন্দর্যের হাতছানি উপেক্ষা করা কঠিন। গত কয়েক বছর দল বেঁধে পর্যটকদের হাওর ঘুরতে যাওয়ার মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তবে জনতার ঢল এই শুকনো মৌসুমেও কম নয়।
একদম ব্রেক না চেপে ১০ কিলোমিটার বা ২০ কিলোমিটার বা তার চেয়ে বেশি এলাকা যদি গাড়িতে পাড়ি দিতে চান, তাহলে আপনার কাছে দারুণ এক সুযোগ নিয়ে এসেছে কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামকে সংযুক্ত করা চওড়া এক সড়ক। সেখান স্থানীয় যানবাহন বলতে কেবল ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, তার সংখ্যাও কম।
এর বাইরে প্রাইভেট কার বা মোটরসাইকেলে করে ভোঁ ছুটে চলা যে মানুষদের দেখা যায়, তারা সবাই বাইরে থেকে এসেছে হাওর দেখতে।
গ্রীষ্ম আসার আগে আগে মৃদুমন্দ বাতাস, চারপাশে দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ ধানক্ষেত আর ঘাষের গালিচা আপনাকে মুগ্ধ করবে, যতক্ষণ সেখানে থাকেন, ততক্ষণ।
এই সৌন্দর্য কোনো নতুন বিষয় নয়। তবে হাওরে যাওয়ার অনীহা থাকার মূল কারণ ছিল যাতায়াতের সমস্যা। বর্ষায় আসতে হলে সারা দিন নৌকায় বসে থেকে যেতে হতো। আর শুকনো মৌসুমে হাঁটা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না।
কিন্তু এখন হাওরবাসীর যোগাযোগের জন্য নির্মিত হয়েছে ‘অলওয়েদার সড়ক’। ফলে সহজেই এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলাতেগুলোতে আসা-যাওয়া করা যায় অনায়াসে। সেই সঙ্গে হাওরে নির্মিত হয়েছে অগুনতি সাবমার্সেবল বা ডুবো সড়ক।
গত বছর হাওরের ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম উপজেলার অলওয়েদার সড়কটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যদিও এর আগেই সামাজিক যোগাযোগেরমাধ্যমে ভাইরাল হয় এ সড়কটি।
এরপর থেকেই বাড়তে থাকে পর্যটকদের আনাগোনা। দুই দিকে দিয়েই পানি আর মাঝখান দিয়ে রাস্তা। যারা কখনো হাওরে আসেনি তাদের অনেকের মনেই কৌতূহল জাগত কীভাবে সম্ভব হয়েছে এই বিস্তীর্ণ জলরাশির মধ্য দিয়ে এত দীর্ঘ সড়ক।
এই একটি সড়ককে ঘিরে হাওরে সৃষ্টি হয়েছে মানুষের নতুন কর্মসংস্থান। অতীতে যারা ছয় মাস কাজ করত আর বাকি সময়টা অলস সময় পার করত, তারাও এখন সারা বছরই উপার্জন করছে।
পানি নেই, এখন পর্যটকদের ডাকছে ঘন সবুজের মাতোয়ারা দৃশ্য।
কিশোরগঞ্জ – ৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনের সংসদ সদস্য মজিবুল হক চুন্নু হাওর বার্তা নিউজকে বলেন , ‘একসময়ের অবহেলিত হাওরে পর্যটনের অপারসম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বর্ষাকালে চারদিকে পানি আর পানি। অপরদিকে শুকনো মৌসুমেই ফসলের মাঠ। একই জায়গায় দুটি রূপ সত্যিই অসাধারণ।’
তিনি বলেন, ‘কয়েক দিন আগে আমিও খানিকটা সময় কাটিয়ে এসেছি হাওরে। এই সময়ের হাওরের প্রকৃতি যেন সবুজ গালিচা। রাস্তার পাশ দিয়ে সবুজ ঘাসের গালিচা দেখে শুয়ে থাকতে মন চায়। ঘাসের ওপর শুয়ে ছবি তোলার লোভ সামলাতে পারিনি আমিও।’
কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বলেন, ‘হাওরে যোগাযোগব্যবস্থার অভাবে কেউ আসতে চাইত না। কিন্তু মহামান্য রাষ্ট্রপতি মহোদয় এবং মাননীয় প্রধানন্ত্রীর সহযোগিতায় হাওরে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে বলেই আজ প্রচুর পর্যটক হাওরে আসে। পর্যটকদের আগমন দেখে আমারও ভালো লাগে।’
কিশোরগঞ্জে হাওর ঘুরতে যাওয়া মানুষের কাছে নতুন সংযোজন দৃষ্টিনন্দন সড়ক। এটি যাতায়াতকেও সহজ করেছে।কিশোরগঞ্জ শহরের শিক্ষকপল্লি থেকে বন্ধুদের নিয়ে মোটরসাইকেলে করে ঘুরতে আসা গুরুদয়াল সরকারি কলেজের ছাত্র লাদেন আহাম্মেদ বলেন, ‘হাওরের এই অপরূপ সৌন্দর্য এবং মুক্তবাতাস, সবুজ প্রকৃতি আমাদের টেনে নিয়ে এসেছে। হাওরের এই সবুজ ঘাসের গালিচা দেখে শুয়ে থাকতে মন চাইতেছে। এ যেন নিউজিল্যান্ড।’বর্ষায় হাওরে ভ্রমণপিপাসুদের ভিড় বাড়তে থাকে এই সড়কটি ঘিরে। পর্যটকদের ভিড় দেখা যায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বাড়িতেও। পর্যটকদের আগমনকে কেন্দ্র করে সড়কটির আশপাশে তৈরি হয় আবাসিক হোটেল, রেস্টুরেন্ট। ঘুরে বেড়ানোর জন্য তৈরি করা হয় শ শ দৃষ্টিনন্দন নৌকা, কিনে আনা হয় স্পিডবোট।