হাওর বার্তা ডেস্কঃ চলতি বোরো মৌসুমে বিভিন্ন জেলায় ধান পাকতে শুরু করলেও এ ধান ঘরে তোলা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। কারণ অনেক এলাকায় ধান কাটার মতো শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।
করোনাভাইরাসের আতঙ্কে অনেক কৃষক বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না। যেসব শ্রমিক আছেন তারাও পরিবহণের অভাবে আরেক জেলায় গিয়ে ধান কাটতে পারছেন না। এদিকে এ সময় কালবৈশাখী ঝড় ও বৃষ্টিতে ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তাছাড়া আকস্মিক বন্যা দেখা দিলে হাওরাঞ্চলের বোরো ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। অতীতে এভাবে ফসলের ক্ষতি হওয়ার বহু উদাহরণ রয়েছে।
দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ২০ বছরে হাওরাঞ্চলে ছয়টি আগাম বন্যা দেখা দিয়েছে এবং এসব বন্যায় উৎপাদিত বোরো ফসলের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এ বছরও হাওরাঞ্চলে অকাল বন্যা দেখা দিতে পারে। কাজেই ঝড়, বর্ষা ও বন্যা আসার আগেই ধান কাটার যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যসূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে সারা দেশে বোরো আবাদ হয়েছে ৪৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে, যা গত মৌসুমের তুলনায় ৭৮ হাজার হেক্টরের কিছুটা বেশি। উল্লেখ্য, ধান-চাল উৎপাদনে দেশে বোরোর স্থান শীর্ষে।
দেশে উৎপাদিত চালের ৫৫ শতাংশ আসে বোরো ধান থেকে। বাকিটা আসে আমন ও আউশ ধান থেকে। অর্থাৎ খাদ্য নিরাপত্তায় বোরো ধানের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। খাদ্য নিরাপত্তায় করোনা মহামারির নেতিবাচক প্রভাবের কথা মাথায় রেখে আমাদের উচিত যে কোনো কারণে বোরো ফসলের সম্ভাব্য ক্ষতি রোধে সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
দেশে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ধান কাটার ব্যবস্থা অপ্রতুল। জানা গেছে, হাওরাঞ্চলে সরবরাহকৃত হারভেস্টার ও রিপারের সংখ্যা খুবই কম। তাছাড়া এগুলো দিয়ে ধান কাটানোর দামও বেশি নেয় সুযোগসন্ধানীরা। এ বাস্তবতায় সরকারের উচিত স্বল্প মূল্যে ধান কাটার যন্ত্র সরবরাহ করা।
কৃষকরা বলছেন, সরকার যদি এসব যন্ত্রের দাম অর্ধেক কমিয়ে দেয়, আবার ওই অর্ধেক দামের ওপর ভর্তুকি দেয়, তাহলে একটি গ্রামের কয়েকজন কৃষক মিলে সমবায়ের ভিত্তিতে একটি মেশিন কিনতে পারবেন। এতে সবাই উপকৃত হবেন।
বহু বছর ধরে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলসহ সারা দেশ থেকে আসা কৃষি শ্রমিকরা হাওরাঞ্চলে বোরো ধান কাটা এবং তা ঘরে তোলার কাজ করে আসছেন। গত বছর মার্চে দেশে করোনা মহামারি দেখা দিলে সরকার এক অঞ্চল বা জেলা থেকে অন্য অঞ্চল বা জেলায় যাতায়াতের সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করলে কৃষি শ্রমিকের অভাবে হাওরাঞ্চলে বোরো ধান কাটার ক্ষেত্রে সংকট সৃষ্টি হয়।
এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকার বিশেষ ব্যবস্থায় উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলসহ সারা দেশ থেকে লাখ লাখ কৃষি শ্রমিক নিয়ে আসার ব্যবস্থা করলে এ সংকটের সমাধান হয়। সরকারের উচিত এবারও বিশেষ ব্যবস্থায় সারা দেশ থেকে কৃষি শ্রমিক এনে হাওরাঞ্চলে বোরো ধান কাটার ব্যবস্থা করা।
সম্প্রতি কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক হাওরাঞ্চলসহ সারা দেশে সময়মতো বোরো ধান কাটার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তাই আমরা আশা করব, অবিলম্বে নেওয়া হবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।