ঢাকা ০৬:১৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৬ জানুয়ারী ২০২৫, ২৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

টমেটোর ভালো ফলনেও রাজবাড়ীর চাষিদের মুখ মলিন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:৩৯:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ এপ্রিল ২০২১
  • ২১০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ চলতি বছরে রাজবাড়ীতে টমেটোর ব্যাপক চাষ হয়েছে। আবহাওয়ার তারতম্য থাকলেও টমেটোর ফলন হয়েছে বেশ ভালো। জেলাবাসীর চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ অন্যান্য জেলায়ও যাচ্ছে এখানকার উৎপাদিত টমেটো। কিন্তু দাম একেবারেই কম। ক্ষেত থেকে টমেটো তুলে ও পরিবহন করে যে খরচ, বিক্রি হয় এখন তার অর্ধেক। ফলে জেলার টমেটো চাষিদের মুখ হয়ে আছে মলিন। তারা এখন আর টমেটো তুলছেনই না। ক্ষেতেই পচে নষ্ট হচ্ছে বিপুল পরিমাণ টমেটো।

এদিকে, টমেটো সংরক্ষণের জন্য এ অঞ্চলে নেই কোনো হিমাগার। এতে করে আশানুরুপ দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। দাম না পাওয়ায় চাষিদের মুখে এখন হাসি নেই। এজন্য তারা হিমাগার নির্মাণের দাবি জানান। হিমাগার নির্মাণের উপর জোর দিচ্ছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগও।
জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক এস এম শহীদ আকবর বলছেন, জেলায় প্রতিবছর ৪৫ কোটি টাকার টমেটো উৎপাদন হলেও হিমাগার না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা। যারা টমেটোর আগাম আবাদ করেছেন তারা প্রতি মণ টমেটো বিক্রি করেছেন দুই হাজার টাকার উপরে। কিন্তু চাষিদের অনেকেই লাভের আশায় পরে টমেটো লাগিয়েছেন। তারা এখন পাচ্ছেন না দাম। প্রতি মণ টমেটোর দাম মাত্র ১০০ টাকা।

স্থানীয় কয়েকজন টমেটো চাষি জানান, দরপতনের কারণে তারা টমেটো তুলতে আগ্রহ হারিয়েছেন। এক মণ টমেটো বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া যাচ্ছে, তার চেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে বাজারজাতকরণে। এতে লোকসান গুণতে হচ্ছে তাদের।

জেলার পাংশা উপজেলার কৃষক মিলন বিশ্বাস, জাহাঙ্গীর ও সুফিয়া বেগম জানান, প্রথম দিকে কিছুটা দাম পেলেও মাঝখানে এসে টমেটোর দাম পড়ে গেছে। কৃষকরা এখন আর ক্ষেত থেকে টমেটো তুলছেন না। ক্ষেত থেকে টমেটো তুলতে যে টাকা খরচ হয়, বিক্রি করতে হচ্ছে তার অর্ধেক দামে।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এসএম শহীদ আকবর বলেন, টমেটোর বাম্পার ফলনে দিন দিন টমেটো চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের। এবার জেলায় উৎপাদিত টমেটোর বাজার মূল্য ৪৫ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। তবে এখানে হিমাগার না থাকায় তারা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে হিমাগার নির্মাণ করা হলে এ জেলার সবজি উৎপাদন আরো অনেকটা বাড়বে। আর এ অঞ্চলে যদি টমেটো প্রক্রিয়াকরণের কোনো ব্যবস্থা থাকত বা সংরক্ষণের জন্য হিমাগার থাকত, তাহলে এসব টমেটো নষ্ট হতো না। ভবিষ্যতে এ ধরনের ফসল চাষে আরও আগ্রহী হতেন চাষিরা।

প্রসঙ্গত, প্রতিবছর রাজবাড়ী সদর, গোয়ালন্দ, বালিয়াকান্দি, কালুখালি ও পাংশার অর্থাৎ পাঁচটি উপজেলার মোট আবাদি জমির পাঁচ শতাংশ জমিতে টমেটো আবাদ হয়। রোগবালাইয়ের আক্রমণ কম এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবারও হয়েছে টমেটোর বাম্পার ফলন। জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে এবার ৫৫০ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে, যার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫১০ হেক্টর জমি। গত বছর চাষ হয়েছে ৪১০ হেক্টরে। উন্নতমানের বিজলী, মানিক রতন, সুবলা, লাভলী জাতের টমেটো চাষ করে ভালো ফলন পাচ্ছেন চাষিরা। এখানকার টমেটো সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

মদনে শীতার্তের মাঝে নবধারা’র শীতবস্ত্র বিতরণ

টমেটোর ভালো ফলনেও রাজবাড়ীর চাষিদের মুখ মলিন

আপডেট টাইম : ০৩:৩৯:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ এপ্রিল ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ চলতি বছরে রাজবাড়ীতে টমেটোর ব্যাপক চাষ হয়েছে। আবহাওয়ার তারতম্য থাকলেও টমেটোর ফলন হয়েছে বেশ ভালো। জেলাবাসীর চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ অন্যান্য জেলায়ও যাচ্ছে এখানকার উৎপাদিত টমেটো। কিন্তু দাম একেবারেই কম। ক্ষেত থেকে টমেটো তুলে ও পরিবহন করে যে খরচ, বিক্রি হয় এখন তার অর্ধেক। ফলে জেলার টমেটো চাষিদের মুখ হয়ে আছে মলিন। তারা এখন আর টমেটো তুলছেনই না। ক্ষেতেই পচে নষ্ট হচ্ছে বিপুল পরিমাণ টমেটো।

এদিকে, টমেটো সংরক্ষণের জন্য এ অঞ্চলে নেই কোনো হিমাগার। এতে করে আশানুরুপ দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। দাম না পাওয়ায় চাষিদের মুখে এখন হাসি নেই। এজন্য তারা হিমাগার নির্মাণের দাবি জানান। হিমাগার নির্মাণের উপর জোর দিচ্ছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগও।
জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক এস এম শহীদ আকবর বলছেন, জেলায় প্রতিবছর ৪৫ কোটি টাকার টমেটো উৎপাদন হলেও হিমাগার না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা। যারা টমেটোর আগাম আবাদ করেছেন তারা প্রতি মণ টমেটো বিক্রি করেছেন দুই হাজার টাকার উপরে। কিন্তু চাষিদের অনেকেই লাভের আশায় পরে টমেটো লাগিয়েছেন। তারা এখন পাচ্ছেন না দাম। প্রতি মণ টমেটোর দাম মাত্র ১০০ টাকা।

স্থানীয় কয়েকজন টমেটো চাষি জানান, দরপতনের কারণে তারা টমেটো তুলতে আগ্রহ হারিয়েছেন। এক মণ টমেটো বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া যাচ্ছে, তার চেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে বাজারজাতকরণে। এতে লোকসান গুণতে হচ্ছে তাদের।

জেলার পাংশা উপজেলার কৃষক মিলন বিশ্বাস, জাহাঙ্গীর ও সুফিয়া বেগম জানান, প্রথম দিকে কিছুটা দাম পেলেও মাঝখানে এসে টমেটোর দাম পড়ে গেছে। কৃষকরা এখন আর ক্ষেত থেকে টমেটো তুলছেন না। ক্ষেত থেকে টমেটো তুলতে যে টাকা খরচ হয়, বিক্রি করতে হচ্ছে তার অর্ধেক দামে।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এসএম শহীদ আকবর বলেন, টমেটোর বাম্পার ফলনে দিন দিন টমেটো চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের। এবার জেলায় উৎপাদিত টমেটোর বাজার মূল্য ৪৫ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। তবে এখানে হিমাগার না থাকায় তারা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে হিমাগার নির্মাণ করা হলে এ জেলার সবজি উৎপাদন আরো অনেকটা বাড়বে। আর এ অঞ্চলে যদি টমেটো প্রক্রিয়াকরণের কোনো ব্যবস্থা থাকত বা সংরক্ষণের জন্য হিমাগার থাকত, তাহলে এসব টমেটো নষ্ট হতো না। ভবিষ্যতে এ ধরনের ফসল চাষে আরও আগ্রহী হতেন চাষিরা।

প্রসঙ্গত, প্রতিবছর রাজবাড়ী সদর, গোয়ালন্দ, বালিয়াকান্দি, কালুখালি ও পাংশার অর্থাৎ পাঁচটি উপজেলার মোট আবাদি জমির পাঁচ শতাংশ জমিতে টমেটো আবাদ হয়। রোগবালাইয়ের আক্রমণ কম এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবারও হয়েছে টমেটোর বাম্পার ফলন। জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে এবার ৫৫০ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে, যার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫১০ হেক্টর জমি। গত বছর চাষ হয়েছে ৪১০ হেক্টরে। উন্নতমানের বিজলী, মানিক রতন, সুবলা, লাভলী জাতের টমেটো চাষ করে ভালো ফলন পাচ্ছেন চাষিরা। এখানকার টমেটো সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।