ঢাকা ০৫:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৬ জানুয়ারী ২০২৫, ২২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

৭ বছর পর সিডলেস লেবু যাচ্ছে ইউরোপে, পান যাবে শিগগির

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:৪১:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ এপ্রিল ২০২১
  • ১৮৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সাত বছর পর গত সপ্তাহ থেকে আবারও ইউরোপের বাজারে সিডলেস (বিচিহীন) লেবু রফতানি শুরু করেছে বাংলাদেশ। শিগগির পান রফতানির নিষেধাজ্ঞাও উঠে যাবে বলে আশা করছেন রফতানিকারকরা।

বাংলাদেশের এ ধরনের পণ্যের অন্যতম প্রধান রফতানি বাজার ইউরোপ। কিন্তু ২০১৪ সালে সিডলেস লেবু ও পান রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আসে ইইউর র্যাপিড অ্যালার্ট সিস্টেম ফর ফুড অ্যান্ড ফিড (আরএএসএফএফ) নামের খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে। ওই সময় লেবুতে ক্যাঙ্কার নামে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও পানে স্যালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পেয়ে এ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল। এসব নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ পর্যায়ক্রমে বেড়ে গত সপ্তাহ পর্যন্ত বন্ধ ছিল লেবু রফতানি। আর পান রফতানি নিষেধাজ্ঞা এখনো রয়েই গেছে।

বিএফভিএপিইএর সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনসুর  বলেন, পান রফতানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ডিকলারেশন যেকোনো সময় আসতে পারে। আমরা এখন সম্পূর্ণ ব্যাকটেরিয়া মুক্ত পান উৎপাদন করছি তা ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানে। তারা নমুনা, তথ্য ও সব ডকুমেন্ট নিয়েছে। যাচাই-বাছাইও করে ঠিকঠাক বলেছে।

তিনি বলেন, সম্ভবত করোনার কারণে ফাইনাল ডিকলারেশন হয়নি। কারণ আমরা গত ছয়মাস আগেও ইইউর আরএএসএফএফ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ভার্চুয়াল মিটিং করেছি। তারা একমাসের মধ্যে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে বলেও জানিয়েছিল সে সময়।

সরকারের পক্ষে এসব বিষয়ে কাজ করে কৃষি অধিদফতরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্র। সংস্থাটির অতিরিক্ত পরিচালক মো. সামছুল আলম বলেন, লেবুতে যেসব রোগ বালাইয়ের সমস্যা ছিল সেগুলো এখন আর নেই। এছাড়া পানের ক্ষেত্রে ল্যাবরেটরি টেস্ট, জোনভিত্তিক পণ্য উৎপাদন, কৃষক নির্বাচন, কৃষক ও রফতানিকারকের প্রশিক্ষণ, সয়েল টেস্ট, ইরিগেশন ওয়াটার টেস্ট, উৎপাদন পরিস্থিতি মনিটরিং, ফিল্ড ইন্সপেকশন অ্যান্ড মনিটরিং, সার্টিফিকেশনসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের মোট ২২ ধরনের শর্ত পূরণ করা হয়েছে। ফলে পান নিয়েও সমস্যা থাকার কথা নয়।

কৃষিপণ্য রফতানিকারক মনজুরুল ইসলাম বলেন, কৃষক, সংগঠন ও সরকারের যৌথ প্রচেষ্টায় লেবুতে সফলতা এসেছে। ইউরোপের বাজারে আবার লেবু রফতানি শুরু করতে পারছি। পানেও একই পথে হেঁটেছে সকলে। আশা করা যায়, সফলতা আসবে।

জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞার পরে ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশ সালমোনেলা মুক্ত পান উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু এখনো তা রফতানির অনুমতি পাওয়া যায়নি। ফলে এর বিরাট নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে কৃষিপণ্যের মোট রফতানিতে।

তথ্য বলছে, নিষেধাজ্ঞার আগে এ দেশ থেকে রফতানি হওয়া পানের অর্ধেকই যেত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। আর ৪৫ শতাংশ যেত ইউরোপের দেশগুলোতে। নিষেধাজ্ঞার আগে পান রফতানি ছিল ৩৮ দশমিক ১ মিলিয়ন ইউএস ডলারের। যা সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরে এসে নেমেছে মাত্র ১ দশমিক ৯৮ মিলিয়ন ডলারে।

এদিকে মোহাম্মদ মনসুর আরও বলেন, কোনো পণ্যের ওপর একবার নিষেধাজ্ঞা এলে সেটিকে নতুন করে আবার রফতানি পর্যন্ত নিয়ে যেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। মধ্যস্ততার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের দুর্বলতা রয়েছে। আর এসব বিষয়ে আমদানিকারক দেশও খুব একটা গুরুত্ব দেয় না।

এদিকে জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞার পরপরই পান থেকে স্যালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। ওই সময় এ জন্য একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছিল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এতে খাওয়ার পানির সঙ্গে মিল্ড অর্গানিক এজেন্ট ‘স্যালমোসান’ মিশিয়ে পানকে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে ধুয়ে নিলেই স্যালমোনেলা মুক্ত করা যায়। এরপর ওই অর্গানিক উপাদানটি দূর করতে পানটি আবার খাওয়ার পানি দিয়ে ধুতে হয়।

রফতানিকারকরা বলছেন, ইউরোপের বাজারে যেকোনো পণ্যের রফতানি ধরে রাখতে হলে জোনভিত্তিক পণ্যের চাষাবাদ জরুরি। এছাড়া কৃষকের প্রশিক্ষণ, কীটনাশকের যথাযথ ব্যবহার, মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা, কৃষি কাজে ব্যবহার করা পানির পরীক্ষা, সংরক্ষণ ব্যবস্থা, পণ্য উত্তোলনের পর দ্রুত রফতানির ব্যবস্থা করা, সরকারি দফতর থেকে দ্রুত রফতানির সার্টিফিকেট পাওয়াসহ বিমানবন্দরের কাছাকাছি জায়গায় প্যাকিং করা জরুরি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ইউরোপের দেশগুলোর বাজারে আধিপত্য করা সম্ভব।

জানা গেছে, কৃষিপণ্য রফতানির বেশিরভাগই হয় আকাশপথে। যা মূলত ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেই হয়। কিন্তু পণ্যের সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউজ শ্যামপুরে অবস্থিত। ঢাকার রাস্তার যে অবস্থা তাতে পণ্য একবার এনে শ্যামপুরে রেখে প্যাকিং করার পর কয়েক ঘণ্টা সময় নিয়ে বিমানবন্দর নিয়ে যেতে বড় সমস্যা তৈরি হয়। পণ্যের মান কমে যায়।

রফতানিকারকরা আরও বলছেন, বিভিন্ন পণ্যের ওপর বেশিরভাগ সময় নিষেধাজ্ঞা আসে ইউরোপের দেশগুলো থেকে। কারণ এই দেশগুলো প্রতিনিয়ত পণ্য পরীক্ষা করে। পণ্যের মানে সামান্য পরিমাণ সমস্যা পেলেই আমদানি বন্ধ করে দেয়। কোনো ছাড় দেয় না। ফলে এসব পণ্য রফতানি প্রক্রিয়ায় যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলো দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

মদনে শীতার্তের মাঝে নবধারা’র শীতবস্ত্র বিতরণ

৭ বছর পর সিডলেস লেবু যাচ্ছে ইউরোপে, পান যাবে শিগগির

আপডেট টাইম : ০৩:৪১:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ এপ্রিল ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সাত বছর পর গত সপ্তাহ থেকে আবারও ইউরোপের বাজারে সিডলেস (বিচিহীন) লেবু রফতানি শুরু করেছে বাংলাদেশ। শিগগির পান রফতানির নিষেধাজ্ঞাও উঠে যাবে বলে আশা করছেন রফতানিকারকরা।

বাংলাদেশের এ ধরনের পণ্যের অন্যতম প্রধান রফতানি বাজার ইউরোপ। কিন্তু ২০১৪ সালে সিডলেস লেবু ও পান রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আসে ইইউর র্যাপিড অ্যালার্ট সিস্টেম ফর ফুড অ্যান্ড ফিড (আরএএসএফএফ) নামের খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে। ওই সময় লেবুতে ক্যাঙ্কার নামে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও পানে স্যালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পেয়ে এ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল। এসব নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ পর্যায়ক্রমে বেড়ে গত সপ্তাহ পর্যন্ত বন্ধ ছিল লেবু রফতানি। আর পান রফতানি নিষেধাজ্ঞা এখনো রয়েই গেছে।

বিএফভিএপিইএর সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনসুর  বলেন, পান রফতানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ডিকলারেশন যেকোনো সময় আসতে পারে। আমরা এখন সম্পূর্ণ ব্যাকটেরিয়া মুক্ত পান উৎপাদন করছি তা ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানে। তারা নমুনা, তথ্য ও সব ডকুমেন্ট নিয়েছে। যাচাই-বাছাইও করে ঠিকঠাক বলেছে।

তিনি বলেন, সম্ভবত করোনার কারণে ফাইনাল ডিকলারেশন হয়নি। কারণ আমরা গত ছয়মাস আগেও ইইউর আরএএসএফএফ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ভার্চুয়াল মিটিং করেছি। তারা একমাসের মধ্যে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে বলেও জানিয়েছিল সে সময়।

সরকারের পক্ষে এসব বিষয়ে কাজ করে কৃষি অধিদফতরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্র। সংস্থাটির অতিরিক্ত পরিচালক মো. সামছুল আলম বলেন, লেবুতে যেসব রোগ বালাইয়ের সমস্যা ছিল সেগুলো এখন আর নেই। এছাড়া পানের ক্ষেত্রে ল্যাবরেটরি টেস্ট, জোনভিত্তিক পণ্য উৎপাদন, কৃষক নির্বাচন, কৃষক ও রফতানিকারকের প্রশিক্ষণ, সয়েল টেস্ট, ইরিগেশন ওয়াটার টেস্ট, উৎপাদন পরিস্থিতি মনিটরিং, ফিল্ড ইন্সপেকশন অ্যান্ড মনিটরিং, সার্টিফিকেশনসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের মোট ২২ ধরনের শর্ত পূরণ করা হয়েছে। ফলে পান নিয়েও সমস্যা থাকার কথা নয়।

কৃষিপণ্য রফতানিকারক মনজুরুল ইসলাম বলেন, কৃষক, সংগঠন ও সরকারের যৌথ প্রচেষ্টায় লেবুতে সফলতা এসেছে। ইউরোপের বাজারে আবার লেবু রফতানি শুরু করতে পারছি। পানেও একই পথে হেঁটেছে সকলে। আশা করা যায়, সফলতা আসবে।

জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞার পরে ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশ সালমোনেলা মুক্ত পান উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু এখনো তা রফতানির অনুমতি পাওয়া যায়নি। ফলে এর বিরাট নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে কৃষিপণ্যের মোট রফতানিতে।

তথ্য বলছে, নিষেধাজ্ঞার আগে এ দেশ থেকে রফতানি হওয়া পানের অর্ধেকই যেত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। আর ৪৫ শতাংশ যেত ইউরোপের দেশগুলোতে। নিষেধাজ্ঞার আগে পান রফতানি ছিল ৩৮ দশমিক ১ মিলিয়ন ইউএস ডলারের। যা সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরে এসে নেমেছে মাত্র ১ দশমিক ৯৮ মিলিয়ন ডলারে।

এদিকে মোহাম্মদ মনসুর আরও বলেন, কোনো পণ্যের ওপর একবার নিষেধাজ্ঞা এলে সেটিকে নতুন করে আবার রফতানি পর্যন্ত নিয়ে যেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। মধ্যস্ততার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের দুর্বলতা রয়েছে। আর এসব বিষয়ে আমদানিকারক দেশও খুব একটা গুরুত্ব দেয় না।

এদিকে জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞার পরপরই পান থেকে স্যালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। ওই সময় এ জন্য একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছিল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এতে খাওয়ার পানির সঙ্গে মিল্ড অর্গানিক এজেন্ট ‘স্যালমোসান’ মিশিয়ে পানকে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে ধুয়ে নিলেই স্যালমোনেলা মুক্ত করা যায়। এরপর ওই অর্গানিক উপাদানটি দূর করতে পানটি আবার খাওয়ার পানি দিয়ে ধুতে হয়।

রফতানিকারকরা বলছেন, ইউরোপের বাজারে যেকোনো পণ্যের রফতানি ধরে রাখতে হলে জোনভিত্তিক পণ্যের চাষাবাদ জরুরি। এছাড়া কৃষকের প্রশিক্ষণ, কীটনাশকের যথাযথ ব্যবহার, মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা, কৃষি কাজে ব্যবহার করা পানির পরীক্ষা, সংরক্ষণ ব্যবস্থা, পণ্য উত্তোলনের পর দ্রুত রফতানির ব্যবস্থা করা, সরকারি দফতর থেকে দ্রুত রফতানির সার্টিফিকেট পাওয়াসহ বিমানবন্দরের কাছাকাছি জায়গায় প্যাকিং করা জরুরি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ইউরোপের দেশগুলোর বাজারে আধিপত্য করা সম্ভব।

জানা গেছে, কৃষিপণ্য রফতানির বেশিরভাগই হয় আকাশপথে। যা মূলত ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেই হয়। কিন্তু পণ্যের সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউজ শ্যামপুরে অবস্থিত। ঢাকার রাস্তার যে অবস্থা তাতে পণ্য একবার এনে শ্যামপুরে রেখে প্যাকিং করার পর কয়েক ঘণ্টা সময় নিয়ে বিমানবন্দর নিয়ে যেতে বড় সমস্যা তৈরি হয়। পণ্যের মান কমে যায়।

রফতানিকারকরা আরও বলছেন, বিভিন্ন পণ্যের ওপর বেশিরভাগ সময় নিষেধাজ্ঞা আসে ইউরোপের দেশগুলো থেকে। কারণ এই দেশগুলো প্রতিনিয়ত পণ্য পরীক্ষা করে। পণ্যের মানে সামান্য পরিমাণ সমস্যা পেলেই আমদানি বন্ধ করে দেয়। কোনো ছাড় দেয় না। ফলে এসব পণ্য রফতানি প্রক্রিয়ায় যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলো দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।