ঢাকা ০৩:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গ্রামীণ অর্থনীতির প্রাণশক্তি কৃষি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:১২:১১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৫ এপ্রিল ২০২১
  • ১৮১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ করোনা মহামারি বিশ্ব অর্থনীতিকে মন্দার দিকে ধাবিত করছে। মরণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণে গোটা বিশ্ব এখনো প্রায় স্থবির। বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর একটি বাংলাদেশে এ ভাইরাসের ছোবলে দিন দিন বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। করোনা মহামারি শুধু মৃত্যুই ডেকে আনছে না, বরং এটি দেশের অর্থনীতির চাকাকেও স্থবির করে দিচ্ছে। এতে করে দেশের অর্থনীতি বিপর্যয়ের সম্মুখীন। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, দেশের অর্থনীতিকে প্রাণবন্ত করতে সরকারের উচিত একটি রোডম্যাপ আঁকা। সেক্ষেত্রে প্রথমেই উচিত কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ  অর্থনীতির কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা এবং এর গতিশীলতা বৃদ্ধি করা। অর্থনীতিতে জিডিপির প্রবৃদ্ধি আসে মূলত পাঁচ খাত থেকে-উৎপাদন, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা, পরিবহণ, নির্মাণ ও কৃষি। দেশের মোট শ্রমশক্তি ৬ দশমিক ৩৫ কোটি। কৃষি খাতে নিয়োজিত এর ৪০ দশমিক ৬ শতাংশ, শিল্পে ২০ দশমিক ০৪ শতাংশ এবং সেবা খাতে ৩৯ শতাংশ।

দেশের মোট শ্রমশক্তির শতকরা ৮০ ভাগকে কৃষিতে নিয়োজিত করলে দারিদ্র্য ঘোচানো কিছুটা সম্ভব। আমাদের কৃষি জমির অনেকাংশই অব্যবহৃত বা পতিত অবস্থায় আছে। শুধু তাই নয়, কৃষি শ্রমশক্তির বিরাট একটি অংশ মাইগ্রেন করে কৃষি থেকে শিল্প ও অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত আছে। এদেরকে গ্রামীণ অর্থনীতির বহু ক্ষেত্র যেমন-হাঁস-মুরগি পালন, মাছ চাষ, পশু পালন, দুগ্ধ খামার, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ ইত্যাদি কাজে লাগিয়ে মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর উৎপাদন স্তর কাক্সিক্ষত মাত্রায় ধরে রাখা যায়; আবার তারা তাদের প্রত্যাশিত উপার্জনও অব্যাহত রাখতে পারে। বিশেষ করে করোনাকালীন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী হাঁস-মুরগি পালন, মাছ চাষ ও পশু পালন করে গ্রামীণ অর্থনৈতিক অবকাঠামোতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। আমাদের দেশের কৃষকরা এখনও সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে যাচ্ছে। ফলে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে কৃষিতে যতটুকু উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল বাস্তবে ততটা হয়নি। তাই করোনা মহামারির এ সময়ে কৃষি প্রশিক্ষণ, মৎস্য চাষ প্রশিক্ষণ, হাঁস-মুরগি পালন প্রশিক্ষণ, বাণিজ্যিকভাবে ফলমূল চাষে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার; যাতে কৃষকরা নিজেরা উপকৃত হন এবং তারা গ্রামীণ অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখতে পারেন।

করোনার প্রভাব দেশের কৃষি অর্থনীতি তথা কৃষি খাতের ওপর যেন প্রভাব বিস্তার করতে না পারে সেজন্য কয়েকটি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। কৃষিতে চলতি মূলধনভিত্তিক খাত যেমন-হর্টিকালচার, মৎস্য চাষ, পোলট্রি, ডেইরি ও প্রাণিসম্পদ খাতে অর্থসংস্থান জরুরি ভিত্তিতে করা সম্ভব হলে এ খাতে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। এ মুহূর্তে শস্য ও ফসল খাতেও প্রণোদনা প্যাকেজ প্রয়োজন। শস্য ও ফসল উৎপাদনে আগের অবস্থা বজায় রাখা এবং উৎপাদনকে আরও বেগবান করা দরকার। আমাদের অর্থনীতির আরেকটি অদৃশ্য খাত রয়েছে। আমাদের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী। নারীদের অবদান কৃষি অর্থনীতিতে অতুলনীয়। বিশেষ করে আমাদের যেসব মা-বোন গ্রামের বাসিন্দা, তারা কোনো না কোনোভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত। যেমন তাদের অনেকে হাঁস-মুরগি পালন, গরু-ছাগল পালন, ভেড়া পালন, টার্কি পালন, বাড়ির আঙ্গিনায় ফলমূল চাষ, লাল শাক, পালং শাক, সজনা, মিষ্টি কুমড়া, লাউ ইত্যাদি উৎপাদন করে থাকেন। এসব কাজের শ্রমমূল্য যোগ করলে দেখা যাবে অর্থনীতির বড় একটা অংশজুড়ে আছে এর সংখ্যাতাত্ত্বিক হিসাব।

রনি সরকার : শিক্ষার্থী, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

গ্রামীণ অর্থনীতির প্রাণশক্তি কৃষি

আপডেট টাইম : ১০:১২:১১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৫ এপ্রিল ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ করোনা মহামারি বিশ্ব অর্থনীতিকে মন্দার দিকে ধাবিত করছে। মরণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণে গোটা বিশ্ব এখনো প্রায় স্থবির। বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর একটি বাংলাদেশে এ ভাইরাসের ছোবলে দিন দিন বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। করোনা মহামারি শুধু মৃত্যুই ডেকে আনছে না, বরং এটি দেশের অর্থনীতির চাকাকেও স্থবির করে দিচ্ছে। এতে করে দেশের অর্থনীতি বিপর্যয়ের সম্মুখীন। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, দেশের অর্থনীতিকে প্রাণবন্ত করতে সরকারের উচিত একটি রোডম্যাপ আঁকা। সেক্ষেত্রে প্রথমেই উচিত কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ  অর্থনীতির কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা এবং এর গতিশীলতা বৃদ্ধি করা। অর্থনীতিতে জিডিপির প্রবৃদ্ধি আসে মূলত পাঁচ খাত থেকে-উৎপাদন, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা, পরিবহণ, নির্মাণ ও কৃষি। দেশের মোট শ্রমশক্তি ৬ দশমিক ৩৫ কোটি। কৃষি খাতে নিয়োজিত এর ৪০ দশমিক ৬ শতাংশ, শিল্পে ২০ দশমিক ০৪ শতাংশ এবং সেবা খাতে ৩৯ শতাংশ।

দেশের মোট শ্রমশক্তির শতকরা ৮০ ভাগকে কৃষিতে নিয়োজিত করলে দারিদ্র্য ঘোচানো কিছুটা সম্ভব। আমাদের কৃষি জমির অনেকাংশই অব্যবহৃত বা পতিত অবস্থায় আছে। শুধু তাই নয়, কৃষি শ্রমশক্তির বিরাট একটি অংশ মাইগ্রেন করে কৃষি থেকে শিল্প ও অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত আছে। এদেরকে গ্রামীণ অর্থনীতির বহু ক্ষেত্র যেমন-হাঁস-মুরগি পালন, মাছ চাষ, পশু পালন, দুগ্ধ খামার, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ ইত্যাদি কাজে লাগিয়ে মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর উৎপাদন স্তর কাক্সিক্ষত মাত্রায় ধরে রাখা যায়; আবার তারা তাদের প্রত্যাশিত উপার্জনও অব্যাহত রাখতে পারে। বিশেষ করে করোনাকালীন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী হাঁস-মুরগি পালন, মাছ চাষ ও পশু পালন করে গ্রামীণ অর্থনৈতিক অবকাঠামোতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। আমাদের দেশের কৃষকরা এখনও সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে যাচ্ছে। ফলে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে কৃষিতে যতটুকু উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল বাস্তবে ততটা হয়নি। তাই করোনা মহামারির এ সময়ে কৃষি প্রশিক্ষণ, মৎস্য চাষ প্রশিক্ষণ, হাঁস-মুরগি পালন প্রশিক্ষণ, বাণিজ্যিকভাবে ফলমূল চাষে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার; যাতে কৃষকরা নিজেরা উপকৃত হন এবং তারা গ্রামীণ অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখতে পারেন।

করোনার প্রভাব দেশের কৃষি অর্থনীতি তথা কৃষি খাতের ওপর যেন প্রভাব বিস্তার করতে না পারে সেজন্য কয়েকটি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। কৃষিতে চলতি মূলধনভিত্তিক খাত যেমন-হর্টিকালচার, মৎস্য চাষ, পোলট্রি, ডেইরি ও প্রাণিসম্পদ খাতে অর্থসংস্থান জরুরি ভিত্তিতে করা সম্ভব হলে এ খাতে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। এ মুহূর্তে শস্য ও ফসল খাতেও প্রণোদনা প্যাকেজ প্রয়োজন। শস্য ও ফসল উৎপাদনে আগের অবস্থা বজায় রাখা এবং উৎপাদনকে আরও বেগবান করা দরকার। আমাদের অর্থনীতির আরেকটি অদৃশ্য খাত রয়েছে। আমাদের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী। নারীদের অবদান কৃষি অর্থনীতিতে অতুলনীয়। বিশেষ করে আমাদের যেসব মা-বোন গ্রামের বাসিন্দা, তারা কোনো না কোনোভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত। যেমন তাদের অনেকে হাঁস-মুরগি পালন, গরু-ছাগল পালন, ভেড়া পালন, টার্কি পালন, বাড়ির আঙ্গিনায় ফলমূল চাষ, লাল শাক, পালং শাক, সজনা, মিষ্টি কুমড়া, লাউ ইত্যাদি উৎপাদন করে থাকেন। এসব কাজের শ্রমমূল্য যোগ করলে দেখা যাবে অর্থনীতির বড় একটা অংশজুড়ে আছে এর সংখ্যাতাত্ত্বিক হিসাব।

রনি সরকার : শিক্ষার্থী, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর