ঢাকা ০২:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৫৫:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ মার্চ ২০২১
  • ২৬৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আমাদের দেশে যক্ষ্মা এখনও একটি বড় স্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ছয় হাজার যক্ষ্মারোগী মারা যাচ্ছে। সারা বিশ্বে এ সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ।এটিতে শুধু যে নিম্ন আয়ের মানুষরাই আক্রান্ত হচ্ছে তা নয়, বরং এই রোগ যে কারোরই হতে পারে। সচেতনতা এবং সঠিক চিকিৎসাই যক্ষ্মা থেকে রক্ষা পেতে পারে। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে-

যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ  
সাধারণত সন্ধ্যা বেলায় জ্বর আসে। খাবার খাবে কিন্তু তারপরও শুকিয়ে যাবে। কফ হবে। সেই কফ আর সারবে না। সাধারণ এন্টিবায়টিক খেলেও সারবে না। একটা সময় দেখা যাবে যে কফের সঙ্গে রক্ত আসছে। অনেক ক্ষেত্রে রক্ত নাও আসতে পারে। ওজন কমে যায়। ক্ষুধামন্দা হবে। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। সাধারণত এটা ফুসফুসের যক্ষা। কিন্তু এছাড়া অন্য কোনো যক্ষ্মার ক্ষেত্রে লক্ষ নাও থাকতে পারে।

যক্ষ্মা প্রতিরোধের উপায়
>> জন্মের পর পর প্রত্যেক শিশুকে বিসিজি টিকা দিতে হবে।

>> যক্ষ্মা আক্রান্তদের ঘনিষ্ঠ সহচার্য এড়িয়ে চলুন।

>> পুষ্টিকর ও সুষম খাবার খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে।

>> নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস তৈরি করুন।

>> বাসস্থানের পরিবেশ খোলামেলা, আলো-বাতাস সম্পন্ন হতে হবে।

>> ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এ ধরনের রোগ থাকলে যথাযথ চিকিৎসা নিন।

>> পরিচ্ছন্ন থাকুন।

>> যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীকে সবসময় নাক মুখ ঢেকে চলাচল করতে হবে। যক্ষ্মা জীবাণুযুক্ত রোগীর সঙ্গে কথা বলার সময় একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখুন। রোগী জীবাণুমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত রোগীকে অন্য সবার থেকে একটু আলাদা রাখা ভালো। জীবাণুযুক্ত রোগীকে যেখানে সেখানে কফ ফেলা পরিহার করতে হবে।

>> ওষুধের কোর্স শেষ করতে হবে।

যক্ষ্মা কেবল ফুসফুসে হয় না
৮৫ শতাংশ যক্ষ্মা ফুসফুসকে আক্রান্ত করে। তবে ফুসফুসের আবরণী, লসিকাগ্রন্থি, মস্তিষ্কের আবরণী, অন্ত্র, হাড়, ত্বক ইত্যাদিতেও যক্ষ্মা হতে পারে। তবে হৃৎপিণ্ড, নখ ও চুল এ রোগের আওতামুক্ত। জীবাণু প্রবেশ করলেই যক্ষ্মা হয় না। শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা যক্ষ্মার জীবাণুকে ধ্বংস করতে পারে। এ জীবাণু সাধারণত কাশির মাধ্যমেই ছড়ায়। অনেক সময় যক্ষ্মা সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে এবং পরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে গেলে প্রকাশ পেতে পারে। আবার অনেক সময় যক্ষ্মার জীবাণু দ্রুত শরীরের সর্বত্র ছড়িয়ে যায় ও জটিল আকার নেয়।

কখন সতর্ক হবেন?
তিন সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে কাশি, জ্বর, অরুচি, কাশির সঙ্গে রক্ত, ওজন হ্রাস, অবসাদ ইত্যাদি দেখা দিলে অবশ্যই যক্ষ্মা পরীক্ষা করা উচিত। এর বাইরে দীর্ঘক্ষণ ধরে লসিকাগ্রন্থির স্ফীতি, মলত্যাগের অভ্যাসে আকস্মিক পরিবর্তন, কখনো কোষ্ঠকাঠিন্য কখনো ডায়রিয়া, বুকে বা পেটে পানি জমা ইত্যাদিও উপসর্গ হিসেবে বিবেচ্য।

যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা
যক্ষা রোগ ভালো হওয়ার জন্য সাধারণত ছয় মাসের চিকিৎসা করা হয়। প্রথম দুই(২) মাস চার ধরনের ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। পরবর্তী চার মাস দুই ধরনের ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। সাধারণত যক্ষার ওষুধ কিছুদিন খাওয়ার পর শতকরা ৮০ ভাগ লক্ষণ চলে যায়। তখন রোগী ভাবে সে হয়তো সম্পূর্ণ ভালো হয়ে গেছে এবং ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেয়। এর ফলাফল মারাত্মক হতে পারে। এ রকম পরিস্থিতি হলে, অন্যরকম চিকিৎসা শুরু করতে হয়। তখন ৫টা ওষুধ দিয়ে পুনরায় চিকিৎসা আরম্ভ করতে হয়।

যক্ষার চিকিৎসায় প্রথম দুই মাস যে চারটি ওষুধ দেয়া হয় তা নিয়মিত খেতে হবে। একদিনও বাদ দেয়া যাবে না এবং সঠিক পরিমাণে খেতে হবে। সাধারণত রোগীর ওজন অনুযায়ী ওষুধের পরিমাণ নির্ধারিত হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে, যক্ষার কিছু কিছু ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ায় অনেকেরই চোখ হলুদ হয়ে যায় অথবা বমি বমি ভাব হয়। তখন অনেক রোগীই ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন। যক্ষার যদি সঠিকভাবে চিকিৎসা করা হয় তবে এটি এখন মারাত্মক কোনো রোগ নয়। কিন্তু সঠিক চিকিৎসা না হলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

যক্ষ্মা নিয়ে ভয় নেই
যক্ষ্মা হলেও আতঙ্কিত হবেন না। এ রোগের সুচিকিৎসা আছে। তবে পূর্ণ মেয়াদে ওষুধ সেবন করতে হবে। দুধরনের ক্যাটাগরিতে ওষুধ দেয়া হয়, ছয় মাস ও আট মাসের মেয়াদে। ওষুধ অনিয়মিত খেলে পরবর্তী সময়ে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা হতে পারে, যা সারানো খুব জটিল। সারা দেশে ডটস সেন্টারে বিনা মূল্যে যক্ষ্মার ওষুধ দেয়া হয়। তাই রোগের লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়

আপডেট টাইম : ০৯:৫৫:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ মার্চ ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আমাদের দেশে যক্ষ্মা এখনও একটি বড় স্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ছয় হাজার যক্ষ্মারোগী মারা যাচ্ছে। সারা বিশ্বে এ সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ।এটিতে শুধু যে নিম্ন আয়ের মানুষরাই আক্রান্ত হচ্ছে তা নয়, বরং এই রোগ যে কারোরই হতে পারে। সচেতনতা এবং সঠিক চিকিৎসাই যক্ষ্মা থেকে রক্ষা পেতে পারে। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে-

যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ  
সাধারণত সন্ধ্যা বেলায় জ্বর আসে। খাবার খাবে কিন্তু তারপরও শুকিয়ে যাবে। কফ হবে। সেই কফ আর সারবে না। সাধারণ এন্টিবায়টিক খেলেও সারবে না। একটা সময় দেখা যাবে যে কফের সঙ্গে রক্ত আসছে। অনেক ক্ষেত্রে রক্ত নাও আসতে পারে। ওজন কমে যায়। ক্ষুধামন্দা হবে। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। সাধারণত এটা ফুসফুসের যক্ষা। কিন্তু এছাড়া অন্য কোনো যক্ষ্মার ক্ষেত্রে লক্ষ নাও থাকতে পারে।

যক্ষ্মা প্রতিরোধের উপায়
>> জন্মের পর পর প্রত্যেক শিশুকে বিসিজি টিকা দিতে হবে।

>> যক্ষ্মা আক্রান্তদের ঘনিষ্ঠ সহচার্য এড়িয়ে চলুন।

>> পুষ্টিকর ও সুষম খাবার খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে।

>> নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস তৈরি করুন।

>> বাসস্থানের পরিবেশ খোলামেলা, আলো-বাতাস সম্পন্ন হতে হবে।

>> ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এ ধরনের রোগ থাকলে যথাযথ চিকিৎসা নিন।

>> পরিচ্ছন্ন থাকুন।

>> যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীকে সবসময় নাক মুখ ঢেকে চলাচল করতে হবে। যক্ষ্মা জীবাণুযুক্ত রোগীর সঙ্গে কথা বলার সময় একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখুন। রোগী জীবাণুমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত রোগীকে অন্য সবার থেকে একটু আলাদা রাখা ভালো। জীবাণুযুক্ত রোগীকে যেখানে সেখানে কফ ফেলা পরিহার করতে হবে।

>> ওষুধের কোর্স শেষ করতে হবে।

যক্ষ্মা কেবল ফুসফুসে হয় না
৮৫ শতাংশ যক্ষ্মা ফুসফুসকে আক্রান্ত করে। তবে ফুসফুসের আবরণী, লসিকাগ্রন্থি, মস্তিষ্কের আবরণী, অন্ত্র, হাড়, ত্বক ইত্যাদিতেও যক্ষ্মা হতে পারে। তবে হৃৎপিণ্ড, নখ ও চুল এ রোগের আওতামুক্ত। জীবাণু প্রবেশ করলেই যক্ষ্মা হয় না। শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা যক্ষ্মার জীবাণুকে ধ্বংস করতে পারে। এ জীবাণু সাধারণত কাশির মাধ্যমেই ছড়ায়। অনেক সময় যক্ষ্মা সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে এবং পরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে গেলে প্রকাশ পেতে পারে। আবার অনেক সময় যক্ষ্মার জীবাণু দ্রুত শরীরের সর্বত্র ছড়িয়ে যায় ও জটিল আকার নেয়।

কখন সতর্ক হবেন?
তিন সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে কাশি, জ্বর, অরুচি, কাশির সঙ্গে রক্ত, ওজন হ্রাস, অবসাদ ইত্যাদি দেখা দিলে অবশ্যই যক্ষ্মা পরীক্ষা করা উচিত। এর বাইরে দীর্ঘক্ষণ ধরে লসিকাগ্রন্থির স্ফীতি, মলত্যাগের অভ্যাসে আকস্মিক পরিবর্তন, কখনো কোষ্ঠকাঠিন্য কখনো ডায়রিয়া, বুকে বা পেটে পানি জমা ইত্যাদিও উপসর্গ হিসেবে বিবেচ্য।

যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা
যক্ষা রোগ ভালো হওয়ার জন্য সাধারণত ছয় মাসের চিকিৎসা করা হয়। প্রথম দুই(২) মাস চার ধরনের ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। পরবর্তী চার মাস দুই ধরনের ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। সাধারণত যক্ষার ওষুধ কিছুদিন খাওয়ার পর শতকরা ৮০ ভাগ লক্ষণ চলে যায়। তখন রোগী ভাবে সে হয়তো সম্পূর্ণ ভালো হয়ে গেছে এবং ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেয়। এর ফলাফল মারাত্মক হতে পারে। এ রকম পরিস্থিতি হলে, অন্যরকম চিকিৎসা শুরু করতে হয়। তখন ৫টা ওষুধ দিয়ে পুনরায় চিকিৎসা আরম্ভ করতে হয়।

যক্ষার চিকিৎসায় প্রথম দুই মাস যে চারটি ওষুধ দেয়া হয় তা নিয়মিত খেতে হবে। একদিনও বাদ দেয়া যাবে না এবং সঠিক পরিমাণে খেতে হবে। সাধারণত রোগীর ওজন অনুযায়ী ওষুধের পরিমাণ নির্ধারিত হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে, যক্ষার কিছু কিছু ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ায় অনেকেরই চোখ হলুদ হয়ে যায় অথবা বমি বমি ভাব হয়। তখন অনেক রোগীই ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন। যক্ষার যদি সঠিকভাবে চিকিৎসা করা হয় তবে এটি এখন মারাত্মক কোনো রোগ নয়। কিন্তু সঠিক চিকিৎসা না হলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

যক্ষ্মা নিয়ে ভয় নেই
যক্ষ্মা হলেও আতঙ্কিত হবেন না। এ রোগের সুচিকিৎসা আছে। তবে পূর্ণ মেয়াদে ওষুধ সেবন করতে হবে। দুধরনের ক্যাটাগরিতে ওষুধ দেয়া হয়, ছয় মাস ও আট মাসের মেয়াদে। ওষুধ অনিয়মিত খেলে পরবর্তী সময়ে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা হতে পারে, যা সারানো খুব জটিল। সারা দেশে ডটস সেন্টারে বিনা মূল্যে যক্ষ্মার ওষুধ দেয়া হয়। তাই রোগের লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।