ঢাকা ১২:৫১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে সংশয়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:০৮:১৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ মার্চ ২০২১
  • ১৮৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মারণ ভাইরাস করোনার কারণে প্রায় এক বছর বন্ধ থাকার পর আগামী ৩০ মার্চ দেশের সব স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। দেশে সংক্রমণ কমে আসায় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। একই দিন সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ২৪ মে থেকে শুরু হবে বলেও জানানো হয়।

কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্তের তৃতীয় দিন অর্থাৎ চলতি মাসের প্রথম দিন থেকে হঠাৎ করেই সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি শুরু হয়। ওইদিন রোগী শনাক্ত হার এক লাফে ৪ শতাংশের ওপরে উঠে যায়। সেদিন ৪ দশমিক ৩১ শতাংশ হারে রোগী শনাক্ত হয়, যা ছিল তার আগের ৪১ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ।

এছাড়া একই দিন প্রায় এক মাস পর শনাক্তকৃত রোগীর সংখ্যাও ৫০০ ছাড়িয়ে যায়। এমনকি গত কয়েক দিন ধরে সংক্রমণ ক্রমেই বাড়ছে। শনাক্ত হার আবার ৫ শতাংশের ওপরে উঠে গেছে এবং রোগীর সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে ৩০ মার্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ব্যাপারে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। নতুন করে ভাবতে হচ্ছে সরকারকে। সংক্রমণ পরিস্থিতি এমন থাকলে আদৌ স্কুল-কলেজ খুলবে কি না সে নিয়ে সংশয়ে আছেন করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ।

সংক্রমণ এমন থাকলে বা আরও বাড়লে এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পক্ষে নন বিশেষজ্ঞরা। আর খুললেও যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে সীমিত আকারে খোলার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়ে স্কুল-কলেজ খোলা দরকার, যাতে স্কুল-কলেজ খুলে সংক্রমণ বাড়ানোর ঝুঁকি তৈরি না করি। সরকার যদি যথেষ্ট আস্থাবান হয় যে একেবারে প্রস্তুতি ঠিকমতো নেয়া হয়েছে, তাহলে স্কুল-কলেজ খোলা যেতে পারে।

এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বৃহস্পতিবার বলেন, ১৫-১৬ মার্চ পর্যন্ত দেখব। তখন সংক্রমণ পরিস্থিতি কী দাঁড়ায়, সেটার ওপর বিবেচনা করে একটা ঘোষণা দেব। তবে এখন পর্যন্ত আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পক্ষে।

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, এখন পর্যন্ত আগের ঘোষণা বহাল রয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, স্কুল-কলেজ খোলার ব্যাপারে ১৩ মার্চ বিকেলে তথ্য মন্ত্রণালয় একটি বৈঠক ডেকেছে। সেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা থাকবেন। সেই সভার সিদ্ধান্ত ছাড়া বলতে পারব না স্কুল-কলেজ খুলবে কি না। সংক্রমণ বৃদ্ধির পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কী করবে, সেখানে সিদ্ধান্ত হবে। তবে এখন পর্যন্ত যেটুকু দেখছি তাতে মনে হচ্ছে আরও দুই সপ্তাহ দেখতে হতে পারে। তখন সংক্রমণ পরিস্থিতি বোঝা যাবে। তবে সত্যি যদি এরকম বাড়তে থাকে, তাহলে তো আশঙ্কার কথা।

স্কুল-কলেজ খোলার আগে সরকার শিক্ষকদের টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে গতকাল (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত ৪০ বছরের কমবয়সী শিক্ষকদের টিকাদান শুরু হয়নি বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। স্কুল-কলেজ খোলার আগে সব শিক্ষককে টিকা দেয়া সম্ভব বলেও জানান মহাপরিচালক। তিনি বলেন, আমরা দৈনিক দুই লাখের বেশি টিকা দিতে পারি। ১০ লাখ শিক্ষককে দিতে সর্বোচ্চ ১০ দিন লাগবে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, যখন স্কুল-কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তখন তো সংক্রমণের হার ২ শতাংশের মাঝামাঝি ছিল। এখন তো আবার বাড়ছে। ফলে খুলতে হলে সবকিছুর একটা সমন্বয় আনতে হবে। এখন খুলতে হলে সবাইকে নিয়ে মিটিং করতে হবে। সেখানে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের তথ্য ও মত তুলে ধরবে। তখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। এখনো ৩১ মার্চ আসতে তিন সপ্তাহের মতো সময় আছে। সংক্রমণ কোন পর্যায়ে যায় সেটাও বোঝা যাবে।

অবশ্য স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পক্ষে অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যেহেতু জীবনের অন্য কোনো ক্ষেত্রে কোনো বাধানিষেধ নেই, তাই স্কুল-কলেজ না খোলার কোনো যুক্তি নেই। শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয়ই জীবনের সব ক্ষেত্রে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে। সে ক্ষেত্রে তারা যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকে এবং সেখান যদি সংক্রমণ প্রতিরোধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারি, তাহলে সমস্যা নেই।

এ বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রত্যেকটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যদি হাত ধোয়ার ব্যাপার করতে পারতাম তাহলেও হতো। সেই ওয়াশ ব্লক আমাদের এখানে নেই। প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানে গাইড লাইন দিতে হবে। ট্রেনিং দিতে হবে। মনিটরিং করতে হবে। আমরা এক বছর সময় পেলাম। এতদিনে অনেক ব্যবস্থা নিতে পারতাম। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে সংক্রমণ প্রতিরোধ টিম করতে পারতাম। স্বাস্থ্যবিধির সব নিয়ম যদি মানতাম, তাহলে এখন খোলা অনেক সহজ ছিল।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে সংশয়

আপডেট টাইম : ১১:০৮:১৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ মার্চ ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মারণ ভাইরাস করোনার কারণে প্রায় এক বছর বন্ধ থাকার পর আগামী ৩০ মার্চ দেশের সব স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। দেশে সংক্রমণ কমে আসায় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। একই দিন সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ২৪ মে থেকে শুরু হবে বলেও জানানো হয়।

কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্তের তৃতীয় দিন অর্থাৎ চলতি মাসের প্রথম দিন থেকে হঠাৎ করেই সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি শুরু হয়। ওইদিন রোগী শনাক্ত হার এক লাফে ৪ শতাংশের ওপরে উঠে যায়। সেদিন ৪ দশমিক ৩১ শতাংশ হারে রোগী শনাক্ত হয়, যা ছিল তার আগের ৪১ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ।

এছাড়া একই দিন প্রায় এক মাস পর শনাক্তকৃত রোগীর সংখ্যাও ৫০০ ছাড়িয়ে যায়। এমনকি গত কয়েক দিন ধরে সংক্রমণ ক্রমেই বাড়ছে। শনাক্ত হার আবার ৫ শতাংশের ওপরে উঠে গেছে এবং রোগীর সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে ৩০ মার্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ব্যাপারে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। নতুন করে ভাবতে হচ্ছে সরকারকে। সংক্রমণ পরিস্থিতি এমন থাকলে আদৌ স্কুল-কলেজ খুলবে কি না সে নিয়ে সংশয়ে আছেন করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ।

সংক্রমণ এমন থাকলে বা আরও বাড়লে এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পক্ষে নন বিশেষজ্ঞরা। আর খুললেও যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে সীমিত আকারে খোলার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়ে স্কুল-কলেজ খোলা দরকার, যাতে স্কুল-কলেজ খুলে সংক্রমণ বাড়ানোর ঝুঁকি তৈরি না করি। সরকার যদি যথেষ্ট আস্থাবান হয় যে একেবারে প্রস্তুতি ঠিকমতো নেয়া হয়েছে, তাহলে স্কুল-কলেজ খোলা যেতে পারে।

এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বৃহস্পতিবার বলেন, ১৫-১৬ মার্চ পর্যন্ত দেখব। তখন সংক্রমণ পরিস্থিতি কী দাঁড়ায়, সেটার ওপর বিবেচনা করে একটা ঘোষণা দেব। তবে এখন পর্যন্ত আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পক্ষে।

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, এখন পর্যন্ত আগের ঘোষণা বহাল রয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, স্কুল-কলেজ খোলার ব্যাপারে ১৩ মার্চ বিকেলে তথ্য মন্ত্রণালয় একটি বৈঠক ডেকেছে। সেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা থাকবেন। সেই সভার সিদ্ধান্ত ছাড়া বলতে পারব না স্কুল-কলেজ খুলবে কি না। সংক্রমণ বৃদ্ধির পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কী করবে, সেখানে সিদ্ধান্ত হবে। তবে এখন পর্যন্ত যেটুকু দেখছি তাতে মনে হচ্ছে আরও দুই সপ্তাহ দেখতে হতে পারে। তখন সংক্রমণ পরিস্থিতি বোঝা যাবে। তবে সত্যি যদি এরকম বাড়তে থাকে, তাহলে তো আশঙ্কার কথা।

স্কুল-কলেজ খোলার আগে সরকার শিক্ষকদের টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে গতকাল (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত ৪০ বছরের কমবয়সী শিক্ষকদের টিকাদান শুরু হয়নি বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। স্কুল-কলেজ খোলার আগে সব শিক্ষককে টিকা দেয়া সম্ভব বলেও জানান মহাপরিচালক। তিনি বলেন, আমরা দৈনিক দুই লাখের বেশি টিকা দিতে পারি। ১০ লাখ শিক্ষককে দিতে সর্বোচ্চ ১০ দিন লাগবে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, যখন স্কুল-কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তখন তো সংক্রমণের হার ২ শতাংশের মাঝামাঝি ছিল। এখন তো আবার বাড়ছে। ফলে খুলতে হলে সবকিছুর একটা সমন্বয় আনতে হবে। এখন খুলতে হলে সবাইকে নিয়ে মিটিং করতে হবে। সেখানে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের তথ্য ও মত তুলে ধরবে। তখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। এখনো ৩১ মার্চ আসতে তিন সপ্তাহের মতো সময় আছে। সংক্রমণ কোন পর্যায়ে যায় সেটাও বোঝা যাবে।

অবশ্য স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পক্ষে অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যেহেতু জীবনের অন্য কোনো ক্ষেত্রে কোনো বাধানিষেধ নেই, তাই স্কুল-কলেজ না খোলার কোনো যুক্তি নেই। শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয়ই জীবনের সব ক্ষেত্রে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে। সে ক্ষেত্রে তারা যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকে এবং সেখান যদি সংক্রমণ প্রতিরোধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারি, তাহলে সমস্যা নেই।

এ বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রত্যেকটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যদি হাত ধোয়ার ব্যাপার করতে পারতাম তাহলেও হতো। সেই ওয়াশ ব্লক আমাদের এখানে নেই। প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানে গাইড লাইন দিতে হবে। ট্রেনিং দিতে হবে। মনিটরিং করতে হবে। আমরা এক বছর সময় পেলাম। এতদিনে অনেক ব্যবস্থা নিতে পারতাম। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে সংক্রমণ প্রতিরোধ টিম করতে পারতাম। স্বাস্থ্যবিধির সব নিয়ম যদি মানতাম, তাহলে এখন খোলা অনেক সহজ ছিল।