ডেন্টাল রোগ জিইয়ে রাখতে নেই

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আজ ডেন্টিস্ট দিবস। এ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন ডেন্টাল সংগঠন, ডেন্টাল কলেজ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান নানা কর্মসূচি পালন করছে। দিবসটি পালনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষ যাতে ডেন্টাল চিকিৎসা নিতে গিয়ে অপচিকিৎসার শিকার না হয়, সে জন্য জনসচেতনতা সৃষ্টি করা।

দেশের প্রচলিত আইনে ন্যূনতম বিডিএস (ব্যাচেলর অফ ডেন্টাল সার্জারি) ডিগ্রি ছাড়া কারও ডেন্টাল চিকিৎসা প্রদানের বৈধতা নেই। চিকিৎসকদের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল প্রত্যেক চিকিৎসককে ভিন্ন নিবন্ধন নম্বর প্রদান করে আর সেটা তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে আপডেট থাকে। বর্তমানে দেশের জনগণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। যে কেউ চাইলে সহজেই চিকিৎসকের নিবন্ধন নম্বরের সাহায্যে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে চিকিৎসকের বৈধতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, দেশে অগণিত ডিগ্রিবিহীন ভুয়া চিকিৎসক ডেন্টাল চিকিৎসার মতো অতি সংবেদনশীল চিকিৎসা দেওয়ার দুঃসাহস দেখিয়ে যাচ্ছে। ফলে রোগীদের প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা রয়ে গেছে এবং সেক্ষেত্রে তারা চিকিৎসার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলতে পারেন।

২০০০ সালের শুরুতে দেশে অনুমোদিত ডেন্টাল চিকিৎসকের সংখ্যা ছিল এক হাজারের মতো। সে সময় অসহায় ডেন্টাল রোগীরা অনেকটা নিরুপায় হয়ে হাটে-বাজারে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একশ্রেণির অবৈধ ব্যবসায়ীর কাছে চিকিৎসা নিতেন। বর্তমানে এ অবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়েছে, দেশে এখন প্রায় ১৩ হাজার বৈধ চিকিৎসক রয়েছেন। তারা সরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে চিকিৎসার মানকে উন্নত বিশ্বের পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বোধকরি একমাত্র ডেন্টাল চিকিৎসার জন্য কোনো রোগীকে বিদেশে যেতে হয় না, বরং অপেক্ষাকৃত অনেক কম খরচে বিশ্ব মানের চিকিৎসাসেবা পেতে প্রবাসী, এমনকি ভিনদেশিরাও আমাদের দেশের ডেন্টাল চিকিৎসকদের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখছেন। দেশেই এখন ডেন্টালের বিভিন্ন শাখার ওপর উচ্চতর ডিগ্রি প্রদান করা হয়। একজন ডেন্টিস্টকে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ, প্রচলিত সব ওষুধ, সম্ভাব্য সব জটিলতার কারণ ও চিকিৎসাসহ অন্যান্য রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে হয়। তা না হলে সাধারণ চিকিৎসা প্রদান থেকেও রোগীর অপরিণত ক্ষতি হতে পারে।

অনেকের ধারণা, ডেন্টাল চিকিৎসক কেবল দাঁত নিয়ে কাজ করেন। বাস্তবতা হচ্ছে-দাঁত, মাড়ি, ঠোঁট, চোয়ালের হাড় ও সন্ধি, জিহ্বা, তালু, লালা ও লালা গ্রন্থি, মুখের স্নায়ুসহ মুখগহ্বরের যে কোনো রোগের চিকিৎসা দেওয়ার বৈধতা রাখেন ডেন্টাল চিকিৎসকরা। দাঁত তোলা, কৃত্রিম দাঁত সংযোজন, আঁকাবাঁকা দাঁত সুসজ্জিত করা, বিবর্ণ দাঁত সাদা করা, মাড়ির রোগ, মুখের ক্ষত বা ঘা, ক্যান্সার, চোয়ালের হাড় ভাঙা, মুখ খুলতে অসুবিধা, লালা নিঃসরণে অস্বাভাবিকতা, দাঁতে গর্ত বা ভেঙে যাওয়া, দাঁতে ব্যথা ইত্যাদি নানা সমস্যার সফল সমাধান ডেন্টাল চিকিৎসার অন্তর্ভুক্ত।

উন্নত বিশ্বে ডেন্টিস্ট দিবসে রোগীরা তাদের আস্থাভাজন ডেন্টাল চিকিৎসককে শুভেচ্ছা প্রদান করে বাৎসরিক মুখের পরীক্ষা করিয়ে নেন। ডেন্টালের অধিকাংশ রোগে শুরুতে তেমন কোনো উপসর্গ থাকে না, অবহেলায় রোগটি জটিল হয়ে উঠলে তার চিকিৎসা পদ্ধতি জটিল, সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে। অহেতুক মনগড়া কোনো সংশয় নিয়ে ডেন্টাল রোগ জিইয়ে রাখা অনুচিত। কারণ এর ফলে শরীরের অন্য যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই আসুন, মুখের স্বাস্থ্য রক্ষায় সচেষ্ট হই, বৈধ চিকিৎসকের পরামর্শ নেই।

ডা. মো. আসাফুজ্জোহা রাজ : ডেন্টাল চিকিৎসক

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর