ঢাকা ০৮:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডিজে নেহার খদ্দেরের তালিকায় ধনাঢ্য ব্যবসায়ীরা, জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০১:০১:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • ১৬৭ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাজধানীর উত্তরার একটি রেস্টুরেন্টে পার্টিতে মদপানের পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউল্যাবের এক ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় নিহত ওই ছাত্রীর বান্ধবী ফারজানা জামান নেহা ওরফে ডিজে নেহাকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়ার পর বেরিয়ে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। ঘটনার পাঁচ দিন পর গত বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারী) রাতে রাজধানীর আজিমপুরের একটি বাসা থেকে নেহাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে নেহাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে নিজের অন্ধকার জগত সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছেন তিনি।

রবিবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) রিমান্ডের তৃতীয় দিনে ডিজে নেহার ফোনবুকে পুলিশ ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ডজনখানেক শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীর নাম্বার পেয়েছে। যেগুলো সাংকেতিকভাবে সংরক্ষণ করা। এসব ধনাঢ্যদের অনেকের কাছে মদ, তরুণী সরবরাহ করতেন তিনি। কখনও কখনও নেহা নিজেই তাদের সঙ্গ দিয়েছেন। বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে হাতিয়েছেন মোটা অঙ্কের টাকা।

তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, ডিজে নেহার পছন্দের মোবাইল ফোনে (আইফোন) টার্গেট করা ব্যবসায়ী ও ধনী যুবকদের নম্বর ‘ক্লায়েন্ট-১’, ‘ক্লায়েন্ট-২’, ‘ক্লায়েন্ট-৩’ এমন ধারাবাহিকভাবেই সংরক্ষণ করা আছে। কারও কারও নাম সংক্ষেপে প্রথম বর্ণ দিয়েও সংরক্ষণ করা।

জিজ্ঞাসাবাদে নেহা জানিয়েছেন, গত বছরের মার্চে চট্টগ্রামের এক গাড়ি ব্যবসায়ীর সঙ্গে একটি পার্টিতে তার পরিচয় হয়। এরপর ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে কৌশলে ৬ মাসে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন নেহা। এরই মধ্যে ওই গাড়ি ব্যবসায়ীর এক ফেসবুক বন্ধুর সঙ্গেও পরিচয় হয় নেহার। সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত নেহা ঢাকার ওই গাড়ি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি হাতিয়েছেন। নেহার ব্যবহৃত ১ লাখ ৩৭ হাজার টাকা দামের আইফোন টুয়েলভ প্রো ম্যাক্স ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকেই নেয়া। এভাবেই আরো অনেক ব্যবসায়ীকে মাদক ও নারী সঙ্গের জালে জড়িয়েছিলেন নেহা। নেহার এসব কাজে সহযোগিতা করতেন তারই চাচাতো ভাই শাফায়াত জামিল বিশাল। বিশাল সার্বক্ষণিক নেহার সঙ্গেই থাকতেন।

২৮ জানুয়ারি উত্তরার ব্যাম্বু স্যুট রেস্টুরেন্টে ইউল্যাব শিক্ষার্থীদের মদপান করাতে নেহা ও তার খুব কাছের বন্ধু আরাফাত পার্টির আয়োজন করেন। মদপানের পর অসুস্থ হয়ে আরাফাতও মারা গেছেন। সেদিন নেহার ফোনেই তার চাচাতো ভাই শাফায়াত জামিল ওরফে বিশাল এয়ারপোর্ট এলাকা থেকে মদ কিনে নিয়ে যায় ওই রেস্টুরেন্টে।

নেহা পুলিশকে জানিয়েছেন, খদ্দেরদের তালিকা সংরক্ষণ করতেন বিশাল। এছাড়াও অবৈধ দরদামে সে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে দায়িত্ব পালন করতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মাধুরীর মৃত্যুর পর তার বাবার মামলায় অজ্ঞাত আসামি হিসাবে নিজেই আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন বিশাল। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। এছাড়া ওই ছাত্রীর ছেলে বন্ধু আরিফ এবং তাদের বাসায় আশ্রয়দাতা তাফসিরও কারাগারে আটক রয়েছেন।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসি হারুন অর রশিদ বলেছেন, নেহাকে জিজ্ঞাসাবাদে আমরা অনেক তথ্য পেয়েছি। এসব যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

এর আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি নেহা আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছেন, গত ২৮ জানুয়ারি আমার বন্ধু আরাফাতের নিমন্ত্রণে উত্তরার ব্যাম্বুসুট রেস্টুরেন্টে যাই। সেখানে গিয়ে আরো কয়েকজনকে দেখতে পাই। আমি আরাফাত ছাড়া অন্য কাউকে চিনতে পারিনি। সেখানে আমি মদপান করি। ৩ পেগ পান করার পর আমার মুখ দিয়ে রক্ত বের হয় এবং বমিও হয়। আমি তখন সেখান থেকে বাসায় চলে যাই। বাসায় যাওয়ার পরও আমার কয়েক দফা বমি হয়। এমন পরিস্থিতিতে আমি হাসপাতালে চিকিৎসা নেই।

ওই ছাত্রী মারা যাওয়ার ঘটনায় করা ধর্ষণ ও হত্যা মামলার সব আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সব ফরেনসিক রিপোর্ট পেলে পুলিশ মামলার চার্জশিট জমা দেবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

ডিজে নেহার খদ্দেরের তালিকায় ধনাঢ্য ব্যবসায়ীরা, জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য

আপডেট টাইম : ০১:০১:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাজধানীর উত্তরার একটি রেস্টুরেন্টে পার্টিতে মদপানের পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউল্যাবের এক ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় নিহত ওই ছাত্রীর বান্ধবী ফারজানা জামান নেহা ওরফে ডিজে নেহাকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়ার পর বেরিয়ে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। ঘটনার পাঁচ দিন পর গত বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারী) রাতে রাজধানীর আজিমপুরের একটি বাসা থেকে নেহাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে নেহাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে নিজের অন্ধকার জগত সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছেন তিনি।

রবিবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) রিমান্ডের তৃতীয় দিনে ডিজে নেহার ফোনবুকে পুলিশ ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ডজনখানেক শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীর নাম্বার পেয়েছে। যেগুলো সাংকেতিকভাবে সংরক্ষণ করা। এসব ধনাঢ্যদের অনেকের কাছে মদ, তরুণী সরবরাহ করতেন তিনি। কখনও কখনও নেহা নিজেই তাদের সঙ্গ দিয়েছেন। বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে হাতিয়েছেন মোটা অঙ্কের টাকা।

তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, ডিজে নেহার পছন্দের মোবাইল ফোনে (আইফোন) টার্গেট করা ব্যবসায়ী ও ধনী যুবকদের নম্বর ‘ক্লায়েন্ট-১’, ‘ক্লায়েন্ট-২’, ‘ক্লায়েন্ট-৩’ এমন ধারাবাহিকভাবেই সংরক্ষণ করা আছে। কারও কারও নাম সংক্ষেপে প্রথম বর্ণ দিয়েও সংরক্ষণ করা।

জিজ্ঞাসাবাদে নেহা জানিয়েছেন, গত বছরের মার্চে চট্টগ্রামের এক গাড়ি ব্যবসায়ীর সঙ্গে একটি পার্টিতে তার পরিচয় হয়। এরপর ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে কৌশলে ৬ মাসে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন নেহা। এরই মধ্যে ওই গাড়ি ব্যবসায়ীর এক ফেসবুক বন্ধুর সঙ্গেও পরিচয় হয় নেহার। সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত নেহা ঢাকার ওই গাড়ি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি হাতিয়েছেন। নেহার ব্যবহৃত ১ লাখ ৩৭ হাজার টাকা দামের আইফোন টুয়েলভ প্রো ম্যাক্স ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকেই নেয়া। এভাবেই আরো অনেক ব্যবসায়ীকে মাদক ও নারী সঙ্গের জালে জড়িয়েছিলেন নেহা। নেহার এসব কাজে সহযোগিতা করতেন তারই চাচাতো ভাই শাফায়াত জামিল বিশাল। বিশাল সার্বক্ষণিক নেহার সঙ্গেই থাকতেন।

২৮ জানুয়ারি উত্তরার ব্যাম্বু স্যুট রেস্টুরেন্টে ইউল্যাব শিক্ষার্থীদের মদপান করাতে নেহা ও তার খুব কাছের বন্ধু আরাফাত পার্টির আয়োজন করেন। মদপানের পর অসুস্থ হয়ে আরাফাতও মারা গেছেন। সেদিন নেহার ফোনেই তার চাচাতো ভাই শাফায়াত জামিল ওরফে বিশাল এয়ারপোর্ট এলাকা থেকে মদ কিনে নিয়ে যায় ওই রেস্টুরেন্টে।

নেহা পুলিশকে জানিয়েছেন, খদ্দেরদের তালিকা সংরক্ষণ করতেন বিশাল। এছাড়াও অবৈধ দরদামে সে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে দায়িত্ব পালন করতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মাধুরীর মৃত্যুর পর তার বাবার মামলায় অজ্ঞাত আসামি হিসাবে নিজেই আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন বিশাল। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। এছাড়া ওই ছাত্রীর ছেলে বন্ধু আরিফ এবং তাদের বাসায় আশ্রয়দাতা তাফসিরও কারাগারে আটক রয়েছেন।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসি হারুন অর রশিদ বলেছেন, নেহাকে জিজ্ঞাসাবাদে আমরা অনেক তথ্য পেয়েছি। এসব যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

এর আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি নেহা আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছেন, গত ২৮ জানুয়ারি আমার বন্ধু আরাফাতের নিমন্ত্রণে উত্তরার ব্যাম্বুসুট রেস্টুরেন্টে যাই। সেখানে গিয়ে আরো কয়েকজনকে দেখতে পাই। আমি আরাফাত ছাড়া অন্য কাউকে চিনতে পারিনি। সেখানে আমি মদপান করি। ৩ পেগ পান করার পর আমার মুখ দিয়ে রক্ত বের হয় এবং বমিও হয়। আমি তখন সেখান থেকে বাসায় চলে যাই। বাসায় যাওয়ার পরও আমার কয়েক দফা বমি হয়। এমন পরিস্থিতিতে আমি হাসপাতালে চিকিৎসা নেই।

ওই ছাত্রী মারা যাওয়ার ঘটনায় করা ধর্ষণ ও হত্যা মামলার সব আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সব ফরেনসিক রিপোর্ট পেলে পুলিশ মামলার চার্জশিট জমা দেবে।