হাওর বার্তা ডেস্কঃ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী পৌরসভা ১৭.৫০ বর্গকি.মি. সীমানায় ৯টি ওয়ার্ডে ১৯টি পাড়া-মহল্লা নিয়ে অবস্থিত। যার মোট জনসংখ্যা ৫০ হাজারেরও বেশি। এই পৌরসভায় আগামী ৩০ জানুয়ারি (শনিবার) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ৩০ হাজার ৪৬৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৪ হাজার ৭৩৬ এবং নারী ভোটার ১৫ হাজার ৭৩০। পুরুষের চেয়ে ৯৯৪ জন নারী ভোটার বেশী। তার উপর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পুরুষ ভোটার রয়েছেন প্রবাসে।
ফলে নির্বাচনে নারী ভোটারকেই ফ্যাক্টর মনে করছেন পৌরবাসী। নারী ভোট যিনি বেশী কাছে টেনে নিতে পারবেন তিনিই পাড়ি দিবেন নির্বাচনী বৈতরণী।
তাই নারী ভোটারদের মন জুগাতে গণসংযোগ, পাড়া মহল্লায় উঠান বৈঠককেই প্রাধান্য দিচ্ছেন প্রার্থীগণ।
ভোটারদের মন জয় পৌরসভার মেয়রের চেয়ারে বসতে এবারের নির্বাচনে একজন নারীসহ পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। পাঁচজন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে চারজন দলীয় প্রার্থী ও একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
প্রতিদ্বন্দ্বী পাঁচজন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে সরকার দলীয় আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন বর্তমান মেয়র শওকত উসমান শুক্কুর আলী এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও দুইবারের সাবেক মেয়র মো. তোফাজ্জল হোসেন খান দিলীপ।
দলীয় অপর দুই প্রার্থীর মধ্যে জাতীয় পার্টি থেকে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে অ্যাডভোকেট আলাউদ্দিন ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী আম প্রতীক নিয়ে আব্দুল বাতেন নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন।
এছাড়া নির্বাচনে একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মোবাইল ফোন প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. মুশতাকুর রহমানের পুত্রবধূ, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তরিকুল মুস্তাক রানার সহধর্মীনি মিসেস সালমা আনিকা।
নির্বাচনী প্রচারণার শেষ সময়ে এসেও প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছেন সরকার দলীয় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান মেয়র শওকত উসমান শুক্কুর আলী। তার তুলনায় অন্য কোন প্রার্থীর প্রচারণায় তেমন সরব নন। নেই তাদের সভা-সমাবেশ, মিছিল, মিটিং।
হামলা-মামলার ভয়েই অনেকটা সভা-সমাবেশ, মিছিল মিটিং পরিহার করে নির্বাচনী কৌশল হিসাবে গণসংযোগকেই বেছে নিয়েছেন সরকার দলীয় প্রার্থী ছাড়া অপরাপর প্রার্থীগণ।
প্রতীক বরাদ্দের পর পর অন্য প্রার্থীদের স্থানে স্থানে কিছু পোস্টার চোখে পড়লেও নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, তাদের টানানো পোস্টারগুলোও ধীরে ধীরে প্রচারণার মাঠ থেকে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। তাদের অভিযোগ, রাতের আঁধারে কে বা কারা এসব পোস্টার গায়েব করে ফেলছে।
সরকার দলীয় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী প্রচার প্রচারণায় দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে সকাল-সন্ধ্যা সদলবলে ছুটে চলেছেন অবিরত। বিপরীতে দলীয় বাকি তিন প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ছুটছেন গোপনে, নিরবে, অনেকটা একাকী ভোটারের দ্বারে দ্বারে।
সরব-নিরবের এই প্রচারণায় ভোটারগণও মুখ খুলতে চাচ্ছেন না। তবে নৌকা, ধানের শীষ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মোবাইল ফোন প্রতীক নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-গুঞ্জন। সাধারণ ভোটারদের ধারণা, এখানে নৌকা, ধানের শীষ ও মোবাইল ফোন প্রতীকের ত্রিমুখী লড়াই হবে।
সরকার দলীয় প্রার্থী শওকত উসমান শুক্কুর আলী সভা-সমাবেশ, উঠান বৈঠকে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার সুযোগ চেয়ে নানা রকম প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি টাকায় ভোট কিনে আচরণবিধি লংঘন করারও অভিযোগ তুলছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে।
তবে তিনি আশাবাদী বিগত দিনের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য জনগণ নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে তাকে বিজয়ী করবেন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর প্রার্থী তোফাজ্জল হোসেন খান দিলিপ বলেন, সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা গায়ে পড়ে ঝগড়া করার চেষ্টা করছেন। কোন অজুহাত পেলেই মামলা-মোকদ্দমা করে নেতাকর্মীদের হয়রানির পরিকল্পনা করে চলেছেন। বিভিন্নস্থানে আমার মাইকিং প্রচারণায় বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলছে, সরকার দলীয় প্রার্থীর মাইকিং প্রচারণায় উসকানিমূলক কথাবার্তা বলে হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাচন অফিসকে বিষয়টি লিখিত ভাবে অবহিত করা হয়েছে।
তিনি নগর উন্নয়নের পরিকল্পনা হিসাবে ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের জন্য জন্ম ও নাগরিক সনদে অগ্রাধিকার ও শিক্ষা বৃত্তিচালুসহ ১৩টি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে নির্বাচনী ইস্তেহার ঘোষণা করেছেন।
একমাত্র স্বতন্ত্র এবং নারী প্রার্থী মিসেস সালমা আনিকা বলেন, শত প্রতিকূলতার পরও নারী ভোটারদের মন জয় করতে পেরেছি বলে আমার বিশ্বাস। প্রতিটি পাড়া মহল্লায় ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, বিজয়ী হতে পারলে নারীর ক্ষমতায়ন ও সকল কাজে নারীর অংশগ্রহণ, তাদের সাবলম্বী ও আত্মনির্ভরশীল করে তোলার লক্ষ্যে সকল প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
তিনিও প্রচারণায় বাধাগ্রস্ত হওয়ায় অভিযোগ তুলে বলেন, আমরা মাঠে স্বাভাবিকভাবে প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারছি না।
জেলা নির্বাচন অফিসার ও নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ আশ্রাফুল আলম বলেন, আবাধ ও সুষ্ঠু ভোটগ্রহণের জন্য সকল প্রকার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ব্যালট পেপার ভোটের দিন সকালে কেন্দ্র কেন্দ্রে প্রেরণ করা হবে। ভোট কেন্দ্রে যে কোন ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা মোকাবেলার জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।