চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদহ ইউনিয়নের জাহাপুর গ্রামের প্রতিবন্ধী কিশোরী স্থানীয় স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী নাজমা মানবেতর জীবন-যাপন করছে। ছোট বেলায় তাকে নানীর কাছে রেখে মা-বাবা চলে গেছে জেলা সদরের রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামে। নানার বাড়িতে অতিকষ্টে মানুষ হতে থাকে সে। একমাস আগে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি নানা মারা গেলে নানির সংসারে বোঝা হয়ে দাঁড়ায় নাজমা। বর্তমানে পার্শ্ববর্তী ঘোলদাড়ী বাজার মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে সে। দুই পা না থাকলেও হামাগুড়ি দিয়ে প্রতিদিন স্কুলে যেতে হয় তাকে। লেখাপাড়ার ওপর ভীষন আগ্রহ তার। লেখাপড়া শিখে কিছু একটা করতে হবে। সারা জীবন কারো বোঝা হয়ে থাকতে চায় না সে।
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদহ ইউনিয়নের জাহাপুর গ্রামের আনেছার বিয়ে হয় চুয়াডাঙ্গার রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামের রফিকুলের সঙ্গে। বিয়ের বছর ঘুরতেই তাদের কোলে আসে এক প্রতিবন্ধী কন্যাসন্তান। নাম রাখা হয় নাজমা। অতি দরিদ্রতার কারণে রফিকুল দম্পতি ৫ বছরের প্রতিবন্ধী সন্তান নাজমাকে রেখে যায় নানা রফিক মন্ডল ও নানী জাহানারা বেগমের কাছে। নানা-নানী গ্রামের স্কুলে ভর্তি করে দেন নাজমাকে। হামাগুড়ি দিয়ে বই-খাতা নিয়ে নিয়মিত স্কুলে যায় সে। এ বছর ভালোভাবে প্রাইমারী পাস করে ঘোলদাড়ী বাজার মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। প্রতিদিন বাড়ি থেকে ২ কি. মি. পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে যেতে হয় তাকে। কখনো কখনো কোনো বান্ধবীর সাহায্য নিয়ে আবার পথে দাঁড়িয়ে থেকে কোন ব্যক্তির করুণায় স্কুলে পৌঁছায় নাজমা। চোখে অদম্য স্বপ্ন তার। তাকে লেখাপড়া করতেই হবে। ছোট বেলা থেকেই বুঝতে পেরেছে, সে পরিবারের বোঝা। প্রতিবন্ধী নাজমা জানায়, নানীর সংসারে প্রচন্ড অভাব। এ কারণে প্রায় প্রতিদিনই কোন সময় আধা মুঠো খেয়ে, আবার কোন সময় কিছু না খেয়েই হামাগুড়ি দিয়ে স্কুলে যেতে হয়। আমার খুব কষ্ট হয়। তাছাড়া রাস্তার ইট-খোয়ার ওপর দিয়ে চলতে খুব বেগ পেতে হয়, খোয়ায় পায়ের হাটু ছিলে রক্ত ঝরে কষ্ট হলেও স্কুলে যাই। বাড়িতে বসে থেকে কী করবো? যদি একটা হুইল চেয়ার থাকতো। স্কুলে যাওয়া আসা অনেক সহজ হতো। আমি অনেক লেখাপড়া শিখে কিছু একটা করতে চাই। সারাজীবন কারো বোঝা হয়ে থাকতে চাইনা। নাজমা তার স্বপ্ন পূরণে এলাকার বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেছে।
সভ্যতার এ যুগে মানুষের আবেগ, অনুভূতি, মানবিকতার পরীক্ষায় বিবেক কেমন সাড়া দেয় তার প্রতীক্ষায় রইলো প্রতিবন্ধী কিশোরী নাজমা।
মানবকণ্ঠ