ভাই জিএম কাদেরকে দলের কো-চেয়ারম্যান করা এবং এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব পদে পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত সঠিক বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
বৃহস্পতিবার রাজধানীতে দলের এক অনুষ্ঠানে এ প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘একটি ঘোষণা এত উৎসাহ জাগাতে পারে, পার্টির মধ্যে জাগরণ সৃষ্টি করতে পারে- তা আমার জানা ছিল না। গোটা রাজনৈতিক জীবনে আমি যদি কোনো ভালো কাজ করে থাকি তাহলে তা হচ্ছে এ ঘোষণা।’
এরশাদ আরও বলেন, ‘এতদিন আমি একটা চাপা কষ্ট নিয়ে ঘুরতাম। মনে শান্তি ছিল না, হাসি ছিল না। প্রতিনিয়ত দুশ্চিন্তা হত, আমি না থাকলে এই জাতীয় পার্র্টির কী হবে? আমার সন্তানের কী হবে? কিন্তু এখন আমি নিশ্চিন্ত, আমার সন্তান বেঁচে থাকবে। এই একটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে আমি বেঁচে থাকলাম। আমার সন্তান জাতীয় পার্টি এবং তোমরা বেঁচে থাকলে।’
গুলশানের ইমানুয়েল কনভেনশন সেন্টারে জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর উত্তরের আয়োজনে দলের নবনিযুক্ত কো-চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এসব কথা বলেন।
পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের প্রশংসা এবং সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘রুহুল আমিন হাওলাদার ১৪ বছর দলের মহাসচিব ছিল। কিন্তু আমি তাকে সরিয়ে দেয়ার পর কোনোদিন আমার বিরুদ্ধে একটি কথাও বলেনি। এই হচ্ছে আনুগত্য, এই হচ্ছে ভালোবাসা, এই হচ্ছে প্রেম। আর একজনকে মহাসচিব করেছিলাম। আমার ভাইকে পদ দেয়ার কারণে তিনি আমাকে আমার পার্টি থেকে বহিষ্কার করে দিলেন। এটা কোনো কথা হতে পারে?’ এ সময় উপস্থিত দলের নেতাকর্মী-সমর্থকরা সমস্বরে বলে ওঠেন, ‘না না না, সে বেইমান, বেইমান।’
এরপর এরশাদ তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আজ থেকে সব দুঃখ ভুলে গেলাম। আমরা এগিয়ে চলব। তোমরা প্রস্তুত?’ নেতাকর্মী-সমর্থকরা এ সময় ‘হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ’ বলে চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তে সমর্থন জানান। এরশাদ বলেন, ‘এতদিন তোমরা আমার কথা শুনেছ, এখন থেকে আমার ভাইয়ের কথা শুনবে। তার কথা মেনে চলবে।’
বক্তব্যের শুরুতে এরশাদ জানান, অনুষ্ঠানে আসার জন্য আগ্রহ ছিল তার স্ত্রী এবং সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদেরও। তিনি বলেন, একটু আগে রওশন ফোন করেছিলেন। আমাকে বললেন, তুমি কোথায়? আমি বললাম আমার ভাইয়ের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আছি। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আমাকে নিলে না কেন? আমি বললাম, এখানে তো আমারও আসার কথা ছিল না, অনেকটা হঠাৎ করেই এসে পড়েছি।
এরপর দলের কর্মী-সংগঠকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমার আসার কথা ছিল না, তবু আমি এসেছি। আমি শুধু এসেছি তোমাদের জন্য। তোমাদের দেখে ভালো লাগল, দুঃখ বেদনা হতাশা দূর হয়ে গেল।
জিএম কাদের সম্পর্কে এরশাদ বলেন, আমার ভাই স্পষ্ট কথা বলে। সবার মধ্যে দেখি তোষামোদের প্রবণতা। এটা আমি পছন্দ করি না। তোমরা যে বল, আমি অমুক… তমুক, আমার দুঃখ লাগে। আমি ভালো কি মন্দ তা জনগণ বিচার করবে। আমাকে শুধু বলবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান, আর কিছু নয়।
সংগঠনের ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি এসএম ফয়সল চিশতির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, মীর আবদুস সবুর আসুদ, হাজী সাইফুদ্দিন আহম্মেদ মিলন, ভাইস চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক নুরুল ইসলাম নুরু, বাহাউদ্দিন আহম্মেদ বাবুল, কেন্দ্রীয় নেতা সুলতান মাহমুদ, দিদারুল ইসলাম, আবু সাঈদ স্বপন, ইসাহাক ভূঁইয়া, মহিলা পার্টির সাধারণ সম্পাদক অনন্যা হোসাইন মৌসুমি, শ্রমিক পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবিএম আসরাফুজ্জামান খান, ছাত্র সমাজের সভাপতি সৈয়দ ইফতেখার আহসান হাসান, কাজী শামসুল ইসলাম রঞ্জন প্রমুখ। যুগান্তর