মামলার জালে জিয়া পরিবার। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলার খড়্গ ঝুলছে। এর মধ্যে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধেই ১৮টি। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অন্তত ৮৪টি। এর মধ্যে অবশ্য মানহানির বেশ কয়েকটি মামলা খারিজ হয়ে গেছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও চ্যারিটেবল মামলার বিচারিক প্রক্রিয়াও শেষ পর্যায়ে। সচল রয়েছে নাইকো ও গ্যাটকো মামলা। গতকাল বিচার শুরু হয়েছে ঋণ খেলাপের আরেক মামলার। ওই মামলায় খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ছাড়াও প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শার্মিলা রহমান, দুই মেয়ে জাফিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমান আসামি। এ নিয়ে উদ্বেগ-উত্কণ্ঠায় বিএনপি নেতা-কর্মীরা।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সম্প্রতি দায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহের এক মামলায় আদালত সমন জারি করেন। পরে তা গুলশানে তার বাসভবন ‘ফিরোজা’র সামনের দেয়ালে সাঁটিয়ে দেওয়া হয়। অসুখে-বিসুখে থাকা বেগম জিয়ার এসব মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগের শেষ নেই। এসব মামলায় ‘সাজা’ আতঙ্কও বিরাজ করছে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
তবে বিএনপির দাবি, এ মামলা রাষ্ট্রদ্রোহের পর্যায়ে পড়ে না। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সূত্র জানায়, সারা দেশ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী ৪ লাখ ৩ হাজার ৮৭৮ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে প্রায় ২২ হাজার মামলা রয়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন ১৭ হাজার ৮৮৫ জন নেতা-কর্মী। অবশ্য এর মধ্যে বেশ কিছু নেতা-কর্মী জামিনে মুক্তিলাভ করেছেন।
বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদে বিএনপির ৪৪০ জন নেতা-কর্মীকে হত্যা, ২৬৭ জনকে গুম ও ৩৩৭ জনকে পঙ্গু করা হয়েছে বলেও দলীয় সূত্রে জানা গেছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ১৮ মামলা ছাড়াও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেকের বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলা রয়েছে। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে সারা দেশে প্রায় অর্ধশত মানহানি মামলা দায়ের করা হয়েছে। যার বেশির ভাগই খারিজও হয়ে গেছে।
এ ছাড়া তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা রয়েছে। অবশ্য তা উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, জিয়া পরিবারসহ সিনিয়র নেতাদের নির্বাচন ও রাজনীতি থেকে দূরে সরাতেই সরকার প্রতিনিয়ত ‘মিথ্যা’ মামলায় জড়াচ্ছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এসব মামলায় নানাভাবে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা চলছে।
উদ্দেশ্য, খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ সিনিয়র নেতাদের ‘সাজা’ দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ও পরে একাধিকবার এ চেষ্টা চালানো হয়। একইভাবে ২০-দলীয় জোটের মধ্যেও সন্দেহ-অবিশ্বাস সৃষ্টি করতেও অপকৌশল গ্রহণ করা হচ্ছে। কিন্তু এসব করেও সরকারের শেষ রক্ষা হবে না।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এ মামলা সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য হীন উদ্দেশ্যে প্রণোদিত। বিএনপি চেয়ারপারসনকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতেই এ মামলা করা হয়েছে। রাজনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ দেউলিয়া হয়ে শাসকগোষ্ঠী মিথ্যা মামলা দিয়ে বিরোধী দলকে নির্মূল করার ভয়াবহ চক্রান্তে লিপ্ত।’
খালেদা জিয়ার মামলার অন্যতম আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে, তার আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। ঋণ খেলাপের মামলায় আইনগত অনেক ত্রুটি রয়েছে। আর রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা কোনোভাবেই তা রাষ্ট্রদ্রোহের পর্যায়ে পড়ে না। এখন সরকার যা চায় তাই হয়। সামনে কাউন্সিল। দল যাতে সুসংগঠিত হতে না পারে তাই এসব মামলা দেওয়া হচ্ছে। ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) সাজা দেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। এ নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই নেতা-কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা কাজ করছে। তার পরও আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা শেষ পর্যন্ত লড়ে যাব।’ বিডি প্রতিদিন