উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে সৌরবিদ্যুৎ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশে কয়েক মাসের মধ্যেই কয়েকটি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদন শুরু করবে। জোরেশোরে কাজ চলছে আরও কয়েকটি কেন্দ্রের। এর বাইরে একটি বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিকল্পনাও অনেক দূর এগিয়েছে। সব মিলিয়ে আগামী কয়েক বছরে বিদ্যুৎ খাতে নবায়নযোগ্য শক্তিনির্ভর বিদ্যুতের হিস্যা বাড়বে। এখন মোট ২৩টি নবায়নযোগ্য শক্তিনির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের বিভিন্ন পর্যায়ের কাজ চলছে। এসব কেন্দ্রের সম্মিলিত উৎপাদনক্ষমতা ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫৫০ মেগাওয়াট। ইতোমধ্যে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র।

প্রযুক্তি-প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে স্মার্ট ফটোভোলটাইক (পিভি) ইনস্টলের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে এ সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি যুক্ত হয়েছে। এর বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ৭৩ মেগাওয়াট। ফটোভোলটাইক সিস্টেম ব্যবহারযোগ্য সৌরবিদ্যুৎ সরবরাহে কাজ করে। সৌর প্যানেল, সোলার ইনভার্টার, মাউন্টিং, ক্যাবলিং ও অন্যান্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশসংবলিত এ ব্যবস্থা সবকিছুর মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রেখে ওয়ার্কিং সিস্টেম নিশ্চিত করে। আর্দ্র ও উষ্ণ জলবায়ুর বাংলাদেশে প্রতি বছর আড়াই হাজার ঘণ্টার বেশি সূর্যালোক থাকে। এটা বিবেচনায় রেখে এ প্রকল্পের সর্বোচ্চ সক্ষমতায় আইপি ৬৬ উচ্চস্তরের সুরক্ষা ও অ্যান্টি-পিআইডি প্রযুক্তিসহ হুয়াওয়ে এসইউএন ২০০০-১৮৫ কেটিএল স্মার্ট পিভি স্ট্রিং ইনভার্টার ব্যবহার করা হয়েছে। প্রকল্পটি ময়মনসিংহের গৌরীপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত। ১৭৩কে সোলার প্যানেল ও ৩৩২ ইনভার্টারের মাধ্যমে প্রকল্পটি জাতীয় গ্রিডে অবদান রাখবে। সৌর ও বায়ু বিদ্যুতে পরিবেশ দূষণের ঝুঁকি নেই। সৌরবিদ্যুতের ইউনিটপ্রতি খরচও কমে আসছে। এখনই জ্বালানি তেলের চেয়ে সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কম। তাই নবায়নযোগ্য শক্তি এখন বাড়তি মনোযোগ পাচ্ছে। দেশে নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে প্রায় ১ লাখ ৩৭ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এর মধ্যে সৌরবিদ্যুৎ খাতের কর্মসংস্থানে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬১ দেশের মধ্যে পঞ্চম। সৌরশক্তির প্রসার শুধু নতুন কর্মসংস্থানই তৈরি করছে না, গ্রাম এলাকায় অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, সৌরবিদ্যুতের প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে প্রায় ৫৫ লাখ পরিবার বিদ্যুতের সুবিধায় এসেছে। ২০০৯ সালে দেশে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করত ৯৬ হাজার পরিবার। প্রায় এক দশকে এ অগ্রগতি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। কিন্তু এটাও সত্য, চর বা দুর্গম এলাকায় এক ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ হয় প্রায় ৩০ টাকা আর গড়ে বাসাবাড়িতে বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি ৬ টাকা। তার মানে সুবিধাবঞ্চিত মানুষ অগ্রসর মানুষের চেয়ে পাঁচগুণ বেশি দামে বিদ্যুৎ পাচ্ছে। আবার সোলার প্যানেলের দাম ও খরচ যেমন বেশি, তেমনি সক্ষমতা কম। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে কিছুটা ভর্তুকি দেয়া হয়, বেসরকারি কয়েকটি সংস্থা সোলার প্যানেল ক্রয়ে ঋণসুবিধা দেয়, তারপরও সৌরবিদ্যুৎ এখনও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য সহনশীল ব্যবস্থা নয়।

চরে তার টেনে অথবা সাবমেরিন ক্যাবল দিয়ে বিদ্যুৎ নেয়া অনেক ক্ষেত্রেই অসম্ভব, সেখানে সৌরবিদ্যুৎই ভরসা। কিন্তু অভিযোগ আছে, গুণগত মান বজায় না রেখে চীন ও ভারত থেকে কম দামে সোলার প্যানেল আমদানি করা হচ্ছে, যা দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে অসম প্রতিযোগিতায় ফেলছে। এ খাতে গড়ে ওঠা স্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো দেশের চাহিদা মেটানোর পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। তাই এ শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেয়া, গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে সর্বনিু সুদ নির্ধারণ, স্থানীয় শিল্পের স্বার্থ রক্ষায় সোলার প্যানেল আমদানি নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা প্রণয়ন, আমদানি করা সৌর যন্ত্রাংশের মান নিশ্চিত করা, সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারে উৎসাহিত করতে কর ও মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতিসহ উৎসাহব্যঞ্জক প্রণোদনা দেয়া উচিত।

আর কে চৌধুরী : সাবেক চেয়ারম্যান, রাজউক; মুক্তিযুদ্ধে ২ ও ৩ নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর