ঢাকা ১০:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইসির বিরুদ্ধে বিশিষ্ট ৪২ নাগরিকের অভিযোগ রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় দুই পক্ষই

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:০৬:১৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২০
  • ১৮৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশের বিশিষ্ট ৪২ জন নাগরিকের অভিযোগের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আনুষ্ঠানিকভাবে গতকাল সোমবার পর্যন্ত কোনো বক্তব্য দেয়নি। বিষয়টি নিয়ে কমিশনের কোনো বৈঠকও হয়নি। কয়েকজন কমিশনার বিষয়টি নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তা তাঁদের ব্যক্তিগত মতামত। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা গত রবিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এটি রাষ্ট্রপতি দেখছেন, এ বিষয়ে আমার কিছু বলা ঠিক হবে না।’ অন্যদিকে অভিযোগকারী দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরাও তাঁদের পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি। তাঁদেরও প্রত্যাশা রাষ্ট্রপতি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম ও অসদাচরণের অভিযোগ এনে ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের’ মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন দেশের ৪২ জন নাগরিক। এ বিষয়ে গত ১৪ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে আবেদন করেছেন তাঁরা। পরে গত ১৯ ডিসেম্বর এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় অভিযোগের বিষয়টি সরকারপ্রধানকে জানানো হবে। একই সঙ্গে বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়ার আগ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনারদের দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকতে অথবা নৈতিক কারণে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের আহ্বান জানান তাঁরা। তবে এ আহ্বানে নির্বাচন কমিশনারদের সাড়া মেলেনি।

এদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ৪২ বিশিষ্ট নাগরিকের ওই অভিযোগ ও আবেদনকে বিএনপির অপচেষ্টা হিসেবেই দেখছেন। তিনি গতকাল বলেন, ‘নানা অনিয়ম ও অসদাচরণের অভিযোগ এনে মূলত বিএনপি নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, তাদের এই চেষ্টা হালে পানি পাবে না।’

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের একজন কর্মকর্তা সার্বিক এই বিষয় সম্পর্কে বলেন, সাড়ে তিন বছরে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অনেকের অনেক অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়নি। নির্বাচনসংক্রান্ত অনেক অভিযোগ আমলযোগ্য মনে হয়নি এ কমিশনের কাছে। নির্বাচন কমিশনের একজন সদস্যের অভিযোগও অগ্রাহ্য হয়েছে। এ অবস্থায় বিশিষ্ট নাগরিকদের এসব অভিযোগ কমিশনের কাছে আমলযোগ্য নাও হতে পারে।

গতকাল নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ইসির বিরুদ্ধে ৪২ জন নাগরিকের রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদনের বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। প্রধান নির্বাচন কমিশনার যে কথা বলেছেন, আমারও সেই একই কথা। যেহেতু রাষ্ট্রপতির কাছে তাঁরা আবেদন করেছেন, সেহেতু আমাদের আর কিছু বলার থাকতে পারে না।’

এই নির্বাচন কমিশনার আরো জানান, বিষয়টি নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে তাঁর কোনো আলোচনা হয়নি এবং কমিশন সভায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হতে পারে—এমন কোনো আলোচনার কথাও তিনি জানেন না।

নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘ওই সব অভিযোগ-আবেদনের বিষয়ে আমি যা বলেছি তা আমার ব্যক্তিগত মতামত। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন কি না আমার জানা নেই।’

গত রবিবার এ নির্বাচন কমিশনার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘সবচেয়ে যে বিষয়টি পীড়াদায়ক সেটি হচ্ছে, একদিকে রাষ্ট্রপতির কাছে অভিযোগ করলেন, আবার অন্যদিকে আমাদেরও অভিযুক্ত করে ফেললেন। শুধু সেটা নয়, আমাদের কী করণীয় বা দণ্ড একঅর্থে সেটা দিয়ে দিলেন। এটা কতটা বিবেচনাপ্রসূত ও শিষ্টাচারবর্জিত কি না, সেটা আপনাদের ওপরই বিবেচনার ভার দিলাম। এসব অভিযোগ হয়তো বা কোনো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব অভিযোগের কোনোটির ভিত্তি আছে বলে আমি মনে করি না। এমন একটি বিষয় উপস্থাপন করা সুধীজনদের জন্য বিবেচনাপ্রসূত নয়।’

এ ছাড়া ইসির বিরুদ্ধে যে নির্বাচন কমিশনারের অভিযোগ বিশিষ্ট নাগরিকদের অভিযোগের তালিকায় স্থান পেয়েছে, সেই মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘গত কয়েক দিন বিষয়টি নিয়ে অন্য নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে আমার কোনো কথা হয়নি। আমি নিজেও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’

অন্যদিকে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদনকারী নাগরিকদের মধ্যে ড. শাহদীন মালিক গতকাল কালের কণ্ঠ’র এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘সরকারপ্রধানকে আমরা এখনো বিষয়টি জানানোর উদ্যোগ নিইনি। পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়েও আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা আশা করছি, রাষ্ট্রপতি বিষয়টি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ইসির বিরুদ্ধে বিশিষ্ট ৪২ নাগরিকের অভিযোগ রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় দুই পক্ষই

আপডেট টাইম : ১০:০৬:১৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশের বিশিষ্ট ৪২ জন নাগরিকের অভিযোগের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আনুষ্ঠানিকভাবে গতকাল সোমবার পর্যন্ত কোনো বক্তব্য দেয়নি। বিষয়টি নিয়ে কমিশনের কোনো বৈঠকও হয়নি। কয়েকজন কমিশনার বিষয়টি নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তা তাঁদের ব্যক্তিগত মতামত। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা গত রবিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এটি রাষ্ট্রপতি দেখছেন, এ বিষয়ে আমার কিছু বলা ঠিক হবে না।’ অন্যদিকে অভিযোগকারী দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরাও তাঁদের পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি। তাঁদেরও প্রত্যাশা রাষ্ট্রপতি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম ও অসদাচরণের অভিযোগ এনে ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের’ মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন দেশের ৪২ জন নাগরিক। এ বিষয়ে গত ১৪ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে আবেদন করেছেন তাঁরা। পরে গত ১৯ ডিসেম্বর এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় অভিযোগের বিষয়টি সরকারপ্রধানকে জানানো হবে। একই সঙ্গে বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়ার আগ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনারদের দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকতে অথবা নৈতিক কারণে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের আহ্বান জানান তাঁরা। তবে এ আহ্বানে নির্বাচন কমিশনারদের সাড়া মেলেনি।

এদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ৪২ বিশিষ্ট নাগরিকের ওই অভিযোগ ও আবেদনকে বিএনপির অপচেষ্টা হিসেবেই দেখছেন। তিনি গতকাল বলেন, ‘নানা অনিয়ম ও অসদাচরণের অভিযোগ এনে মূলত বিএনপি নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, তাদের এই চেষ্টা হালে পানি পাবে না।’

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের একজন কর্মকর্তা সার্বিক এই বিষয় সম্পর্কে বলেন, সাড়ে তিন বছরে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অনেকের অনেক অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়নি। নির্বাচনসংক্রান্ত অনেক অভিযোগ আমলযোগ্য মনে হয়নি এ কমিশনের কাছে। নির্বাচন কমিশনের একজন সদস্যের অভিযোগও অগ্রাহ্য হয়েছে। এ অবস্থায় বিশিষ্ট নাগরিকদের এসব অভিযোগ কমিশনের কাছে আমলযোগ্য নাও হতে পারে।

গতকাল নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ইসির বিরুদ্ধে ৪২ জন নাগরিকের রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদনের বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। প্রধান নির্বাচন কমিশনার যে কথা বলেছেন, আমারও সেই একই কথা। যেহেতু রাষ্ট্রপতির কাছে তাঁরা আবেদন করেছেন, সেহেতু আমাদের আর কিছু বলার থাকতে পারে না।’

এই নির্বাচন কমিশনার আরো জানান, বিষয়টি নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে তাঁর কোনো আলোচনা হয়নি এবং কমিশন সভায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হতে পারে—এমন কোনো আলোচনার কথাও তিনি জানেন না।

নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘ওই সব অভিযোগ-আবেদনের বিষয়ে আমি যা বলেছি তা আমার ব্যক্তিগত মতামত। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন কি না আমার জানা নেই।’

গত রবিবার এ নির্বাচন কমিশনার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘সবচেয়ে যে বিষয়টি পীড়াদায়ক সেটি হচ্ছে, একদিকে রাষ্ট্রপতির কাছে অভিযোগ করলেন, আবার অন্যদিকে আমাদেরও অভিযুক্ত করে ফেললেন। শুধু সেটা নয়, আমাদের কী করণীয় বা দণ্ড একঅর্থে সেটা দিয়ে দিলেন। এটা কতটা বিবেচনাপ্রসূত ও শিষ্টাচারবর্জিত কি না, সেটা আপনাদের ওপরই বিবেচনার ভার দিলাম। এসব অভিযোগ হয়তো বা কোনো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব অভিযোগের কোনোটির ভিত্তি আছে বলে আমি মনে করি না। এমন একটি বিষয় উপস্থাপন করা সুধীজনদের জন্য বিবেচনাপ্রসূত নয়।’

এ ছাড়া ইসির বিরুদ্ধে যে নির্বাচন কমিশনারের অভিযোগ বিশিষ্ট নাগরিকদের অভিযোগের তালিকায় স্থান পেয়েছে, সেই মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘গত কয়েক দিন বিষয়টি নিয়ে অন্য নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে আমার কোনো কথা হয়নি। আমি নিজেও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’

অন্যদিকে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদনকারী নাগরিকদের মধ্যে ড. শাহদীন মালিক গতকাল কালের কণ্ঠ’র এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘সরকারপ্রধানকে আমরা এখনো বিষয়টি জানানোর উদ্যোগ নিইনি। পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়েও আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা আশা করছি, রাষ্ট্রপতি বিষয়টি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।