ঢাকা ০৪:২৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ছোট প্রকল্পে বড় ব্যয় শতকোটি টাকার পরামর্শক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৩৩:০৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২০
  • ১৬১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মাত্র ১৪০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতু নির্মাণে প্রায় শতকোটি (৯৬ কোটি ৯৬ লাখ) টাকার পরামর্শকের প্রস্তাবে পরিকল্পনা কমিশন বিস্ময় প্রকাশ করেছে। বস্তুত এটি বিস্ময় জাগানিয়া প্রস্তাবই বটে!

অর্থনীতিবিদরাও এ ব্যপারে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তাদের কাছেও প্রকল্পের ব্যয় এত অধিক হওয়ার বিষয়টি যৌক্তিক বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না।

তারা মনে করছেন, এত ছোট আকারের সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে পরামর্শকই লাগার কথা নয়। দেশে উপজেলা পর্যায়ে এমন শত শত ছোট সেতু তৈরি হয়েছে। অথচ এ ক্ষেত্রে প্রায় শতকোটি টাকার পরামর্শক সেবার প্রস্তাব করা হয়েছে! এমনকি খোদ সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন যুগান্তরকে বলেছেন, এত টাকার পরামর্শক লাগার কথা নয়।

শুধু তাই নয়, একই প্রকল্পে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ খাতে ১ কোটি ৬১ লাখ টাকার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, প্রশিক্ষণের নামে বিদেশ সফরের আদৌ প্রয়োজন আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা উচিত। উল্লেখ্য, ‘সাইনবোর্ড-মোরেলগঞ্জ-রায়েন্দা-শরণখোলা-বগী সড়কের ১৭তম কিলোমিটারে পানগুচি নদীর ওপর পানগুচি সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পে এমন প্রস্তাব দেয়া হয়।

আমরা মনে করি, কোনো উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো যেমন অনুচিত, তেমনি প্রকল্পে অপচয় রোধও কাম্য। এ ব্যাপারে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনাও রয়েছে। তারপরও দুর্ভাগ্যজনকভাবে একের পর এক প্রকল্পে অপচয়ের খবর মিলছে। বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে সরকারের আয় কমেছে এবং ব্যয় বেড়েছে।

জানা গেছে, ব্যয় সাশ্রয়ের চিন্তা থেকে অন্তত ৫০০ প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ স্থগিত রাখা হয়েছে। এ অবস্থায় বাহুল্য ব্যয় বাদ দিয়ে বা কমিয়েই যে কোনো প্রকল্প প্রস্তাব দেয়া উচিত। একটি প্রকল্প যখন চূড়ান্ত হয়ে একনেকে আসে, তখন তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয় না। এর আগেই প্রকল্পের কোনো খাতে কোনো অপচয়ের ব্যাপার থাকলে তা রোধ করতে হবে।

করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতির বিষয়টিও সংশ্লিষ্টদের ভেবে দেখতে হবে। তাছাড়া প্রকল্প প্রস্তাবে অতিরিক্ত ব্যয় দেখানোর পেছনে দুর্নীতি বা অন্য কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা দরকার। পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেছেন, উল্লিখিত সেতু নির্মাণ প্রকল্পের ক্ষেত্রে পরামর্শক ব্যয় অত্যধিক বেশি হওয়ার বিষয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় জানতে চাওয়া হলে এর সন্তোষজনক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। এরপর প্রকল্প ব্যয় প্রায় অর্ধেক কমিয়ে দিতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া বৈদেশিক প্রশিক্ষণ খাতেও ব্যয় কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে। এসব সুপারিশ মেনে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করে পুনরায় পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানোর পর তা একনেকে উপস্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। সে ক্ষেত্রে প্রকল্পটির একটি যৌক্তিক প্রস্তাব পেশ করা হবে-এটাই কাম্য।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ছোট প্রকল্পে বড় ব্যয় শতকোটি টাকার পরামর্শক

আপডেট টাইম : ১১:৩৩:০৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মাত্র ১৪০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতু নির্মাণে প্রায় শতকোটি (৯৬ কোটি ৯৬ লাখ) টাকার পরামর্শকের প্রস্তাবে পরিকল্পনা কমিশন বিস্ময় প্রকাশ করেছে। বস্তুত এটি বিস্ময় জাগানিয়া প্রস্তাবই বটে!

অর্থনীতিবিদরাও এ ব্যপারে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তাদের কাছেও প্রকল্পের ব্যয় এত অধিক হওয়ার বিষয়টি যৌক্তিক বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না।

তারা মনে করছেন, এত ছোট আকারের সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে পরামর্শকই লাগার কথা নয়। দেশে উপজেলা পর্যায়ে এমন শত শত ছোট সেতু তৈরি হয়েছে। অথচ এ ক্ষেত্রে প্রায় শতকোটি টাকার পরামর্শক সেবার প্রস্তাব করা হয়েছে! এমনকি খোদ সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন যুগান্তরকে বলেছেন, এত টাকার পরামর্শক লাগার কথা নয়।

শুধু তাই নয়, একই প্রকল্পে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ খাতে ১ কোটি ৬১ লাখ টাকার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, প্রশিক্ষণের নামে বিদেশ সফরের আদৌ প্রয়োজন আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা উচিত। উল্লেখ্য, ‘সাইনবোর্ড-মোরেলগঞ্জ-রায়েন্দা-শরণখোলা-বগী সড়কের ১৭তম কিলোমিটারে পানগুচি নদীর ওপর পানগুচি সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পে এমন প্রস্তাব দেয়া হয়।

আমরা মনে করি, কোনো উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো যেমন অনুচিত, তেমনি প্রকল্পে অপচয় রোধও কাম্য। এ ব্যাপারে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনাও রয়েছে। তারপরও দুর্ভাগ্যজনকভাবে একের পর এক প্রকল্পে অপচয়ের খবর মিলছে। বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে সরকারের আয় কমেছে এবং ব্যয় বেড়েছে।

জানা গেছে, ব্যয় সাশ্রয়ের চিন্তা থেকে অন্তত ৫০০ প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ স্থগিত রাখা হয়েছে। এ অবস্থায় বাহুল্য ব্যয় বাদ দিয়ে বা কমিয়েই যে কোনো প্রকল্প প্রস্তাব দেয়া উচিত। একটি প্রকল্প যখন চূড়ান্ত হয়ে একনেকে আসে, তখন তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয় না। এর আগেই প্রকল্পের কোনো খাতে কোনো অপচয়ের ব্যাপার থাকলে তা রোধ করতে হবে।

করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতির বিষয়টিও সংশ্লিষ্টদের ভেবে দেখতে হবে। তাছাড়া প্রকল্প প্রস্তাবে অতিরিক্ত ব্যয় দেখানোর পেছনে দুর্নীতি বা অন্য কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা দরকার। পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেছেন, উল্লিখিত সেতু নির্মাণ প্রকল্পের ক্ষেত্রে পরামর্শক ব্যয় অত্যধিক বেশি হওয়ার বিষয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় জানতে চাওয়া হলে এর সন্তোষজনক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। এরপর প্রকল্প ব্যয় প্রায় অর্ধেক কমিয়ে দিতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া বৈদেশিক প্রশিক্ষণ খাতেও ব্যয় কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে। এসব সুপারিশ মেনে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করে পুনরায় পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানোর পর তা একনেকে উপস্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। সে ক্ষেত্রে প্রকল্পটির একটি যৌক্তিক প্রস্তাব পেশ করা হবে-এটাই কাম্য।