ঢাকা ০৩:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

লাল সবুজের নেপথ্যের ইতিহাস

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৪৭:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২০
  • ১৮৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ডিসেম্বর মাস এলেই বিজয়ের রঙে ছেয়ে যায় আমাদের চারপাশ। পুরো বাংলাদেশ বিজয়ের উৎসবে মেতে ওঠে। অন্যদিকে বাংলার কৃতি সন্তানদের হারানোর দুঃখও মনকে আচ্ছন্ন করে।

অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এক নাম- বাংলাদেশ। আর এই রক্তের আরেকটি অর্জন হলো লাল-সবুজের মিশ্রণে আমাদের জাতীয় পতাকা। এ কথা কারোই অজানা নয় যে, লাল সবুজে ঘেরা জাতীয় পতাকা বাঙালির জীবন ও ইতিহাসে কতখানি গুরুত্ব বহন করে। তবে বর্তমান যে পতাকাটি আমরা সব জায়গায় দেখি তা আগে কিন্তু ঠিক এরকম ছিলো না।

বর্তমান পতাকাটির রূপকার কামরুল হাসান হলেও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ও তার কিছু আগে যে পতাকাটি ব্যবহার করা হয়েছিলো তার নকশাকার ভিন্ন। বাংলাদেশের প্রথম পতাকা এবং তা থেকে পতাকার বর্তমান বৈশিষ্ট্যে আসার কারণ ও ঘটনা নিয়েই লেখাটি।

স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকার নকশা কিন্তু করা হয়ে গিয়েছিলো স্বাধীনতার কিছু আগেই। বাংলাদেশের প্রথম পতাকাটির নকশা কিন্তু ‘স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস’ সংগঠনের কিছু কর্মী এবং ছাত্রনেতাদের হাত ধরে।

১৯৭০ সালের ৬ জুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ইকবাল হলের (বর্তমান সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ১০৮নং কক্ষে পতাকার প্রাথমিক নকশাটি করা হয়। যার নকশাকাররা হচ্ছেন ছাত্রলীগ নেতা আ স ম আব্দুর রব, কাজী আরেফ আহমেদ, শাহজাহান সিরাজ, মনিরুল ইসলাম (মার্শাল মনি), স্বপন কুমার চৌধুরী; জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ) ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলাম, কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা শিবনারায়ণ দাস, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সাধারণ সাধারণ সম্পাদক হাসানুল হক ইনু, ছাত্রনেতা ইউসুফ সালাহউদ্দিন আহমেদ, কামরুল আলম খান (খসরু) সহ আরো অনেকে।

সেখানে সবার মতামত অনুযায়ী সবুজ পটভূমিতে লাল সূর্যের মাঝে হলুদ বাংলাদেশের মানচিত্র সম্বলিত পতাকার নকশাটি চূড়ান্ত করা হয়। এই মানচিত্রটি বিশেষ কারণবশত পতাকায় যোগ করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ১৯৭১ সালের ২ মার্চ প্রথম পতাকা তোলা হয়। পতাকাটি প্রথম উত্তোলন করেন ছাত্রনেতা ও ‘ডাকসু’র তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট আ স ম আবদুর রব। এসময় উপস্থিত ছিলেন ছাত্রনেতা ও কর্মীরাও।

১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পটুয়া কামরুল হাসানকে পতাকাটির নতুন নকশা ও এর ওপর প্রতিবেদন করার নির্দেশ দেন। শিল্পী কামরুল হাসানের নকশা করা মানচিত্রবিহীন পতাকাটিই বর্তমানে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা হিসেবে সর্বত্র প্রচলিত। বর্তমান পতাকাটি মাপজোখ ও তৈরি করতে বেশ সময় লেগেছিলো কামরুল হাসানের।

পটুয়া কামরুল হাসানের ডিজাইন করা বর্তমান জাতীয় পতাকায় গাঢ় সবুজ রঙটি বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতি এবং তারুণ্যের প্রতীক। আর মাঝের লাল বৃত্তটি উদীয়মান সূর্যের পাশাপাশি বাংলাদেশের মানুষের দেয়া রক্ত ও আত্মত্যাগ নির্দেশ করে। স্বাধীন বাংলাদেশের গৌরবজ্বল উপাখ্যানের অন্যতম ধারক ও বাহক গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের এই জাতীয় পতাকা। লাল-সবুজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে লুকিয়ে আছে বাংলাদেশিদের অপরিমেয় আত্মত্যাগ ও বীরত্বের কাহিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে একসাথে সাকিব-তামিম

লাল সবুজের নেপথ্যের ইতিহাস

আপডেট টাইম : ১১:৪৭:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ডিসেম্বর মাস এলেই বিজয়ের রঙে ছেয়ে যায় আমাদের চারপাশ। পুরো বাংলাদেশ বিজয়ের উৎসবে মেতে ওঠে। অন্যদিকে বাংলার কৃতি সন্তানদের হারানোর দুঃখও মনকে আচ্ছন্ন করে।

অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এক নাম- বাংলাদেশ। আর এই রক্তের আরেকটি অর্জন হলো লাল-সবুজের মিশ্রণে আমাদের জাতীয় পতাকা। এ কথা কারোই অজানা নয় যে, লাল সবুজে ঘেরা জাতীয় পতাকা বাঙালির জীবন ও ইতিহাসে কতখানি গুরুত্ব বহন করে। তবে বর্তমান যে পতাকাটি আমরা সব জায়গায় দেখি তা আগে কিন্তু ঠিক এরকম ছিলো না।

বর্তমান পতাকাটির রূপকার কামরুল হাসান হলেও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ও তার কিছু আগে যে পতাকাটি ব্যবহার করা হয়েছিলো তার নকশাকার ভিন্ন। বাংলাদেশের প্রথম পতাকা এবং তা থেকে পতাকার বর্তমান বৈশিষ্ট্যে আসার কারণ ও ঘটনা নিয়েই লেখাটি।

স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকার নকশা কিন্তু করা হয়ে গিয়েছিলো স্বাধীনতার কিছু আগেই। বাংলাদেশের প্রথম পতাকাটির নকশা কিন্তু ‘স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস’ সংগঠনের কিছু কর্মী এবং ছাত্রনেতাদের হাত ধরে।

১৯৭০ সালের ৬ জুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ইকবাল হলের (বর্তমান সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ১০৮নং কক্ষে পতাকার প্রাথমিক নকশাটি করা হয়। যার নকশাকাররা হচ্ছেন ছাত্রলীগ নেতা আ স ম আব্দুর রব, কাজী আরেফ আহমেদ, শাহজাহান সিরাজ, মনিরুল ইসলাম (মার্শাল মনি), স্বপন কুমার চৌধুরী; জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ) ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলাম, কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা শিবনারায়ণ দাস, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সাধারণ সাধারণ সম্পাদক হাসানুল হক ইনু, ছাত্রনেতা ইউসুফ সালাহউদ্দিন আহমেদ, কামরুল আলম খান (খসরু) সহ আরো অনেকে।

সেখানে সবার মতামত অনুযায়ী সবুজ পটভূমিতে লাল সূর্যের মাঝে হলুদ বাংলাদেশের মানচিত্র সম্বলিত পতাকার নকশাটি চূড়ান্ত করা হয়। এই মানচিত্রটি বিশেষ কারণবশত পতাকায় যোগ করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ১৯৭১ সালের ২ মার্চ প্রথম পতাকা তোলা হয়। পতাকাটি প্রথম উত্তোলন করেন ছাত্রনেতা ও ‘ডাকসু’র তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট আ স ম আবদুর রব। এসময় উপস্থিত ছিলেন ছাত্রনেতা ও কর্মীরাও।

১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পটুয়া কামরুল হাসানকে পতাকাটির নতুন নকশা ও এর ওপর প্রতিবেদন করার নির্দেশ দেন। শিল্পী কামরুল হাসানের নকশা করা মানচিত্রবিহীন পতাকাটিই বর্তমানে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা হিসেবে সর্বত্র প্রচলিত। বর্তমান পতাকাটি মাপজোখ ও তৈরি করতে বেশ সময় লেগেছিলো কামরুল হাসানের।

পটুয়া কামরুল হাসানের ডিজাইন করা বর্তমান জাতীয় পতাকায় গাঢ় সবুজ রঙটি বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতি এবং তারুণ্যের প্রতীক। আর মাঝের লাল বৃত্তটি উদীয়মান সূর্যের পাশাপাশি বাংলাদেশের মানুষের দেয়া রক্ত ও আত্মত্যাগ নির্দেশ করে। স্বাধীন বাংলাদেশের গৌরবজ্বল উপাখ্যানের অন্যতম ধারক ও বাহক গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের এই জাতীয় পতাকা। লাল-সবুজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে লুকিয়ে আছে বাংলাদেশিদের অপরিমেয় আত্মত্যাগ ও বীরত্বের কাহিনি।