ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২০তম ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৮ মার্চ। এই কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে দলটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন তুঙ্গে। এ সম্মেলনে পরবর্তী তিন বছরের জন্য নতুন নেতৃত্বের হাতে তুলে দেওয়া হবে দেশের প্রাচীনতম দলটির পরিচালনার ভার। কে হচ্ছেন দলের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক— এ নিয়েই মূলত এখন নানামুখী আলোচনা দলে। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম তৃতীয়বারের মতো দায়িত্ব পেয়ে হ্যাট্রিক করছেন, নাকি এ পদে নতুন মুখ আসছে— এ আলোচনা এখন কেন্দ্র থেকে জেলা-উপজেলার নেতা-কর্মীদের মুখে মুখে। তবে কাউন্সিলের আগে আপাতত জানা যাচ্ছে না কে হচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ এ পদটির দাবিদার। কাউন্সিলে নেতা-কর্মীরাই নির্ধারণ করবেন আগামী দিনে কে হবেন লড়াই-সংগ্রামে দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রধান সহযোদ্ধা।
তবে দলপ্রধান বিশ্বরাজনীতি ও দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার নিরিখেই গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে দীর্ঘদিনের দক্ষ, যোগ্য, ত্যাগী ও পরিশ্রমী নেতৃত্ব আনতে চান। দেশের প্রাচীনতম এ রাজনৈতিক দলটির সভাপতির পরে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নাম ছাড়াও জোরালোভাবে শোনা যাচ্ছে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহর নাম। তবে আরও বেশ কয়েকজন নেতা এ পদে আসতে আগ্রহী বলে জানা গেছে। আগামী ২৮ মার্চ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলন। গত ৯ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সম্মেলন সফল করতে ১০টি উপ-কমিটি গঠন করতে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ কয়েকজন নেতাকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। সভাপতি পদে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা পুনর্নির্বাচিত হবেন এটা নিশ্চিত বলা যায়। মূলত সভাপতির পরেই গুরুত্বপূর্ণ পদ সাধারণ সম্পাদক কে হচ্ছেন তা নিয়েই আগ্রহ দেশের রাজনৈতিক মহলে। আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে এলজিইডি মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর গুঞ্জন উঠেছিল হয়তো আগামীতে তাকে দলের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু এলজিইডি মন্ত্রণালয় থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর নতুনরূপে আত্মপ্রকাশ করেছেন সৈয়দ আশরাফ। বিশেষ করে গত বছরের আগস্ট মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪০তম শাহাদাত্বার্ষিকী উপলক্ষে একটানা ৪০ দিনব্যাপী কর্মসূচিতে একদিনে একাধিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা গেছে তাকে। ওয়ান-ইলেভেন-পরবর্তী সময়ে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দীর্ঘদিন দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলের দুর্দিনে রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও প্রজ্ঞার সঙ্গে দলের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন তিনি।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৯ সালের ২৪ জুলাইয়ের জাতীয় কাউন্সিলে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম প্রথমবারের মতো দলটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সম্মেলনে তিনি দ্বিতীয় দফায় সাধারণ সম্পাদক হন। দু’দফায় দায়িত্ব পালনের সময় সরকার ও দলের জন্য বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাসহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এজন্য দলের হাইকমান্ড তার প্রতি সন্তুষ্ট। সৈয়দ আশরাফ পুনরায় দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলে তিনি এই পদে হ্যাট্রিক করবেন।
এ ছাড়া আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি এর আগেই গত দুই সম্মেলনেই সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী ছিলেন। ২০০৯-এর সম্মেলনের আগে ওবায়দুল কাদের দলের প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তখন থেকেই তিনি সাধারণ সম্পাদক পদের আলোচনায় রয়েছেন। এবার তিনি কাঙ্ক্ষিত এ পদে আসতে পারেন— এমনটা আলোচনা আছে দলের ভিতর-বাইরে। গত ডিসেম্বরে পৌরসভা নির্বাচন পরিচালনায় দলের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালনের সময় থেকেই দলীয় সভাপতির কার্যালয়েও সময় দিচ্ছেন প্রতিনিয়ত। পদপদবি না পাওয়া মনঃক্ষুণ্ন সাবেক ছাত্রনেতাদের রাজনীতির মাঠে সক্রিয় করছেন তিনি। দলের নেতারা বলছেন, ওবায়দুল কাদেরের তত্পরতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। সম্প্রতি দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহাবউদ্দিন ফরায়েজির কবর জিয়ারত ও তার পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিতেও তৃণমূলে ছুটে গেছেন তিনি। এছাড়া চলতি মাসেই পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর ছেলের মৃত্যুতে শোকাহত পরিবারের পাশে দাঁড়াতেও দেখা গেছে তাকে। তৃণমূলে ছুটে যাওয়ার জন্য দলে তার সুনাম রয়েছে। সৈয়দ আশরাফ, ওবায়দুল কাদের ছাড়াও এ পদের জন্য জোর আলোচনায় আছেন আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ। ফরিদপুরের এ রাজনীতিক আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত বলে দলে প্রচার রয়েছে। এছাড়া রাজনীতির মাঠে সারা দেশে নেতা-কর্মীদের মধ্যে তার একটি আলাদা ইমেজ রয়েছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিভিন্ন বিদেশি কূটনৈতিকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের পক্ষে তার দূতিয়ালি বেশ লক্ষণীয়।