ঢাকা ০৮:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উত্তরাঞ্চলে কৃষিতেই স্বচ্ছলতা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:১১:০৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ নভেম্বর ২০২০
  • ১৭৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ চাকরি বাকরি ও শিল্পকারখানা বা ব্যবসা বাণিজ্য ছাড়াও যে কেবল কৃষিকর্ম করেই অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বি হওয়া যায়, তা প্রমাণ করে দিচ্ছে উত্তরাঞ্চলের ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও বর্গা চাষিরা। কৃষি এলাকা হিসেবে চিহ্নিত উত্তরঞ্চল সেই বৃটিশ আমল থেকেই এই অঞ্চলে উৎপাদিত খাদ্য শস্য সারা দেশের চাহিদা মেটালেও উৎপাদক চাষিরা ঐতিহ্যগতভাবে চাষাবাদের ধারায় নিজেরা কখনো অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার মুখ দেখেনি। তবে বর্তমানে ধান, পাট ও আঁখ চাষ ছাড়াও এখন বিভিন্ন রকম সবজি, শাক ও ফলমূল এমনকি ফুল চাষ করেও আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে, দেখছে স্বচ্ছলতার মুখ।

পূর্ব বগুড়ার গাবতলী উপজেলা নেপালতলী ইউনিয়নের ডমর গ্রামের প্রান্তিক চাষি মো. বুলু মিয়া (৬৩) ট্রাডিশনাল ধান ও পাট চাষের পরিবর্তে পেঁপে চাষ করে সফলতার যে নজির স্থাপন করেছেন তাতে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন ঐ গ্রামের ২৫টি পরিবার। ইতোমধ্যে পেঁপে চাষ করে নিজেদের দারিদ্রতা দূর করেছেন। গ্রামটি এখন সারাদেশের পাইকারি সবজি ব্যবসায়ীদের কাছে “পেঁপে গ্রাম” নামে চিহ্নিত হয়েছে। পেঁপে চাষি বুলু মিয়া জানান, পৈত্রিকভাবে পাওয়া দুই-আড়াই বিঘা জমিতে যখন ধান চাষ করতাম, তখন চরম অর্থনৈতিক ভোগ করছিলাম। হঠাৎ মাথায় পেঁপেসহ বিভিন্ন সবজি চাষের খেয়াল চাপে। গ্রামে ধানি জমিতে পেঁপে বা সবজি চাষের ঘটনাকে অনেকে পাগলামি মনে করেছিল। তাতে আমি দমে যাইনি, পেঁপে চাষে সফলতা পেয়েছি।

সম্প্রতি পরপর দুই বছর প্রতিবেশি দেশ ভারত কর্তৃক হঠাৎ করে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ফলে দেশে পেঁয়াজ এর যে সঙ্কট তৈরি হয় সেই প্রেক্ষাপটে ব্যাপক ভাবে পেঁয়াজ উৎপাদনের তাগিদ তৈরি হয়েছে উত্তরের জনমানসে। অনেকেই ছাদ বাগানের টবে ফুল বা টমেটো এবং মরিচের পাশাপাশি এখন পেঁয়াজ রসুনের চাষও করছে। উত্তরাঞ্চল এখন সবধরনের শাকসবজি মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, ভুট্টা, আখ, চিনা বাদাম, সরিষা, তিল, পেঁপে, খেশারী, মশুর, মুগ, ছোলা, মটর, ধনিয়া, কালোজিরা, যব ছাড়াও বিদেশি খেঁজুর, মালটা, কমলা, আপেল, ড্রাগন, দুরিয়ানি, চেরি ইত্যাদি ফল চাষে সরকারিভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

চলতি বছরের দীর্ঘস্থায়ী বন্যার মধ্যেও উত্তরের সচেতন চাষিরা বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে পলিথিনে, উচুঁ মাচায় এমনকি নদীর ওপরে কচুরি পানার ওপরে বেড করে বিভিন্ন ধরনের সবজির চারা সংরক্ষণ করেছে। এমনকি শাকের চাষও করেছে। ফলে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পলিপড়া জমিতে সংরক্ষিত চারা লাগিয়ে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়েই বাজারে ব্যাপকভাবে লাউ, কুমড়া, শসা, শিম, বরবটি, বেগুন, কাঁচামরিচ, ধনিয়াপাতা, পুদিনাপাতাসহ সবধরনের শাকসবজির সরবরাহ এসেছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

উত্তরাঞ্চলে কৃষিতেই স্বচ্ছলতা

আপডেট টাইম : ১০:১১:০৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ নভেম্বর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ চাকরি বাকরি ও শিল্পকারখানা বা ব্যবসা বাণিজ্য ছাড়াও যে কেবল কৃষিকর্ম করেই অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বি হওয়া যায়, তা প্রমাণ করে দিচ্ছে উত্তরাঞ্চলের ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও বর্গা চাষিরা। কৃষি এলাকা হিসেবে চিহ্নিত উত্তরঞ্চল সেই বৃটিশ আমল থেকেই এই অঞ্চলে উৎপাদিত খাদ্য শস্য সারা দেশের চাহিদা মেটালেও উৎপাদক চাষিরা ঐতিহ্যগতভাবে চাষাবাদের ধারায় নিজেরা কখনো অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার মুখ দেখেনি। তবে বর্তমানে ধান, পাট ও আঁখ চাষ ছাড়াও এখন বিভিন্ন রকম সবজি, শাক ও ফলমূল এমনকি ফুল চাষ করেও আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে, দেখছে স্বচ্ছলতার মুখ।

পূর্ব বগুড়ার গাবতলী উপজেলা নেপালতলী ইউনিয়নের ডমর গ্রামের প্রান্তিক চাষি মো. বুলু মিয়া (৬৩) ট্রাডিশনাল ধান ও পাট চাষের পরিবর্তে পেঁপে চাষ করে সফলতার যে নজির স্থাপন করেছেন তাতে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন ঐ গ্রামের ২৫টি পরিবার। ইতোমধ্যে পেঁপে চাষ করে নিজেদের দারিদ্রতা দূর করেছেন। গ্রামটি এখন সারাদেশের পাইকারি সবজি ব্যবসায়ীদের কাছে “পেঁপে গ্রাম” নামে চিহ্নিত হয়েছে। পেঁপে চাষি বুলু মিয়া জানান, পৈত্রিকভাবে পাওয়া দুই-আড়াই বিঘা জমিতে যখন ধান চাষ করতাম, তখন চরম অর্থনৈতিক ভোগ করছিলাম। হঠাৎ মাথায় পেঁপেসহ বিভিন্ন সবজি চাষের খেয়াল চাপে। গ্রামে ধানি জমিতে পেঁপে বা সবজি চাষের ঘটনাকে অনেকে পাগলামি মনে করেছিল। তাতে আমি দমে যাইনি, পেঁপে চাষে সফলতা পেয়েছি।

সম্প্রতি পরপর দুই বছর প্রতিবেশি দেশ ভারত কর্তৃক হঠাৎ করে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ফলে দেশে পেঁয়াজ এর যে সঙ্কট তৈরি হয় সেই প্রেক্ষাপটে ব্যাপক ভাবে পেঁয়াজ উৎপাদনের তাগিদ তৈরি হয়েছে উত্তরের জনমানসে। অনেকেই ছাদ বাগানের টবে ফুল বা টমেটো এবং মরিচের পাশাপাশি এখন পেঁয়াজ রসুনের চাষও করছে। উত্তরাঞ্চল এখন সবধরনের শাকসবজি মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, ভুট্টা, আখ, চিনা বাদাম, সরিষা, তিল, পেঁপে, খেশারী, মশুর, মুগ, ছোলা, মটর, ধনিয়া, কালোজিরা, যব ছাড়াও বিদেশি খেঁজুর, মালটা, কমলা, আপেল, ড্রাগন, দুরিয়ানি, চেরি ইত্যাদি ফল চাষে সরকারিভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

চলতি বছরের দীর্ঘস্থায়ী বন্যার মধ্যেও উত্তরের সচেতন চাষিরা বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে পলিথিনে, উচুঁ মাচায় এমনকি নদীর ওপরে কচুরি পানার ওপরে বেড করে বিভিন্ন ধরনের সবজির চারা সংরক্ষণ করেছে। এমনকি শাকের চাষও করেছে। ফলে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পলিপড়া জমিতে সংরক্ষিত চারা লাগিয়ে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়েই বাজারে ব্যাপকভাবে লাউ, কুমড়া, শসা, শিম, বরবটি, বেগুন, কাঁচামরিচ, ধনিয়াপাতা, পুদিনাপাতাসহ সবধরনের শাকসবজির সরবরাহ এসেছে।