ঢাকা ০৮:০৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জনপ্রিয় হচ্ছে পানিফলের চাষ, সচ্ছলতা এসেছে ৩ শতাধিক পরিবারে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৫০:৪০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ নভেম্বর ২০২০
  • ২৪৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ স্থানীয় নাম ‘সিঙ্গারা’, অনেকই চিনেন ‘পানিফল’ হিসেবে। এর একমাত্র কারণ এটি কেবল হাঁটু বা কোমর পানিতেই জন্মায়।

দেখতে খানিকটা বাজারে তৈরি সিঙ্গারা মতো হওয়ায় অনেকেই সিঙ্গারা বলেও চিনেন।

তাছাড়াও এ ফলের নানা জায়গায় নানা নাম রয়েছে। ওয়াটার কালট্রপ, বাফেলো নাট, ডেভিল পড ইত্যাদি। আবার ইংরাজিতে একে ওয়াটার চেস্টনাটও বলা হয়। এরও বৈজ্ঞানিক নাম ‘ট্রাপা নাটানস’।

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ ও ইসলামপুর উপজেলার পতিত জমিতে এই পানিফলের চাষ ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় এ ফল চাষে আগ্রহী হচ্ছে কৃষকেরা। প্রতিবছর বোরো ধান কাটার পর, খাল-বিল-ডোবায় জমে থাকা পানিতে প্রথমে এই ফলের লতা রোপণ করা হয়। তিন থেকে সাড়ে তিন মাসের মধ্যে ফল আসে গাছে। এ ফল চাষে সার-কীটনাশকের তেমন প্রয়োজন হয় না। প্রতি বিঘা জমি চাষে তিন-চার হাজার টাকা খরচ করে ২৫-৩০ হাজার টাকা লাভ করে চাষিরা। দেওয়ানগঞ্জ ও ইসলামপুরের তিন শতাধিক কৃষক পতিত ৭৪ হেক্টর জমিতে পানিফল চাষ করছে। স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি পানিফল বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকায়।

এদিকে ডোবা আর বদ্ধ জলাশয়ে পানিফল চাষ করে সাবলম্বী হয়ে উঠছে এই অঞ্চলের অনেক হতদরিদ্র মানুষ। অল্পপুঁজি ব্যয় করে পানিফল চাষের মাধ্যমে দু’পয়সা বাড়তি আয় করে অভাবের সংসারে সচ্ছলতা এনেছে প্রায় তিন  শতাধিক পরিবার।

আবুল হাসেম, মোস্তাক আলী, দানেছ আলী, মির্জা বদি উজ্জামান, বিপ্লব আলী, তারা মিয়াসহ পানিফল চাষিরা জানান, সরকারি-বেসরকারি খাত থেকে ঋণ সহায়তা পেলে আরও অনেক মানুষ পানিফল চাষ করবে। এতে একদিকে নিজেরা যেমন স্বাবলম্বী হতে পারে তেমনি গ্রামীণ অর্থনীতিতেও অবদান রাখা সম্ভব হবে।

পানি ফলের গুনাগুণ: চিকিৎসকরা বলেন, যেকোনো মৌসুমি ফলই শরীরের জন্য উপকারি। ঠিক একইভাবে উপকারি পানিফল। খাদ্য ও পুষ্টিগুণে এটি মহৌষধ। পানিফলের প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্য যোগ্য অংশ অর্থাৎ খোলা ছাড়িয়ে মোট শাঁসের পরিমাণ ১০০ গ্রাম হলে তাতে পাওয়া যায় –

১) খাদ্যশক্তি রয়েছে ৬৫ কিলো ক্যালোরি
২) জলের পরিমাণ ৮৪.৯ গ্রাম
৩) খনিজ পদার্থ– ০.৯ গ্রাম
৪) খাদ্য আঁশ– ১.৬ গ্রাম
৫) আমিষ– ২.৫ গ্রাম
৬) শর্করা– ১১.৭ গ্রাম
৭) ক্যালসিয়াম– ১০ মিলিগ্রাম
৮) আয়রন– ০.৮ মিলিগ্রাম
৯) ভিটামিন বি১ – ০.১৮ মিলিগ্রাম
১০) ভিটামিন বি২ – ০.০৫ গ্রাম
১১) ভিটামিন সি – ১৫ মিলিগ্রাম
১২) এক একটি পানি ফলে চর্বির পরিমাণ – ০.৯ গ্রাম
১৩) এছাড়াও আছে পটাশিয়াম, জিঙ্ক,  ভিটামিন-ই। রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান।

এ তো গেল পুষ্টিগুণ। এবার জেনে নেওয়া যাক ঔষধি গুণ বা খাদ্য গুণ বা উপকারিতা কি কি?

১. পানিফল শরীরের পুষ্টির অভাব দূর করে।
২. পানিফল পেটের রোগ নিরাময় করে।
৩. ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে করতে সাহায্য করে।
৪. দুর্বল শরীরকে বল দেয়।
৫. হাত-পা ফোলা ঠিক করে।
৬. এটি যকৃতের প্রদাহনাশক অর্থাৎ লিভারের ইনফ্লামেশন নিরাময় করে।
৭. এটি যৌন শক্তিবর্ধক একটি ফল।
৮. ঋতুর আধিক্যজনিত সমস্যা ঠিক করতে খুবই উপকারি।
৯. এমনকি এতে রয়েছে ক্যানসার প্রতিরোধের গুণও।
১০. শরীর ঠাণ্ডা করতে পানিফলের জুড়ি নেই।
১১. শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে।
১২. বমিভাব, হজমের সমস্যা দূর করতে পানিফলের কোনো তুলনা হয় না।
১৩. অনিদ্রা দূর করতে কাজে দেয়।
১৪. ঠাণ্ডা লাগা, সর্দি থেকে স্বস্তি পেতে সাহায্য করে পানিফল।
১৫. ব্রঙ্কাইটিস, অ্যানিমিয়া কমাতে পারে।
১৬. পানিফলের শাঁস শুকিয়ে রুটি বানিয়ে খেলে অ্যালার্জি দূর হয়।
১৬. পিত্তজনিত রোগ নাশ করে।
১৭. রক্ত আমাশা বন্ধ করে।
১৮. প্রসাবের সমস্যা দূর করে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় হচ্ছে পানিফলের চাষ, সচ্ছলতা এসেছে ৩ শতাধিক পরিবারে

আপডেট টাইম : ১০:৫০:৪০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ নভেম্বর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ স্থানীয় নাম ‘সিঙ্গারা’, অনেকই চিনেন ‘পানিফল’ হিসেবে। এর একমাত্র কারণ এটি কেবল হাঁটু বা কোমর পানিতেই জন্মায়।

দেখতে খানিকটা বাজারে তৈরি সিঙ্গারা মতো হওয়ায় অনেকেই সিঙ্গারা বলেও চিনেন।

তাছাড়াও এ ফলের নানা জায়গায় নানা নাম রয়েছে। ওয়াটার কালট্রপ, বাফেলো নাট, ডেভিল পড ইত্যাদি। আবার ইংরাজিতে একে ওয়াটার চেস্টনাটও বলা হয়। এরও বৈজ্ঞানিক নাম ‘ট্রাপা নাটানস’।

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ ও ইসলামপুর উপজেলার পতিত জমিতে এই পানিফলের চাষ ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় এ ফল চাষে আগ্রহী হচ্ছে কৃষকেরা। প্রতিবছর বোরো ধান কাটার পর, খাল-বিল-ডোবায় জমে থাকা পানিতে প্রথমে এই ফলের লতা রোপণ করা হয়। তিন থেকে সাড়ে তিন মাসের মধ্যে ফল আসে গাছে। এ ফল চাষে সার-কীটনাশকের তেমন প্রয়োজন হয় না। প্রতি বিঘা জমি চাষে তিন-চার হাজার টাকা খরচ করে ২৫-৩০ হাজার টাকা লাভ করে চাষিরা। দেওয়ানগঞ্জ ও ইসলামপুরের তিন শতাধিক কৃষক পতিত ৭৪ হেক্টর জমিতে পানিফল চাষ করছে। স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি পানিফল বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকায়।

এদিকে ডোবা আর বদ্ধ জলাশয়ে পানিফল চাষ করে সাবলম্বী হয়ে উঠছে এই অঞ্চলের অনেক হতদরিদ্র মানুষ। অল্পপুঁজি ব্যয় করে পানিফল চাষের মাধ্যমে দু’পয়সা বাড়তি আয় করে অভাবের সংসারে সচ্ছলতা এনেছে প্রায় তিন  শতাধিক পরিবার।

আবুল হাসেম, মোস্তাক আলী, দানেছ আলী, মির্জা বদি উজ্জামান, বিপ্লব আলী, তারা মিয়াসহ পানিফল চাষিরা জানান, সরকারি-বেসরকারি খাত থেকে ঋণ সহায়তা পেলে আরও অনেক মানুষ পানিফল চাষ করবে। এতে একদিকে নিজেরা যেমন স্বাবলম্বী হতে পারে তেমনি গ্রামীণ অর্থনীতিতেও অবদান রাখা সম্ভব হবে।

পানি ফলের গুনাগুণ: চিকিৎসকরা বলেন, যেকোনো মৌসুমি ফলই শরীরের জন্য উপকারি। ঠিক একইভাবে উপকারি পানিফল। খাদ্য ও পুষ্টিগুণে এটি মহৌষধ। পানিফলের প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্য যোগ্য অংশ অর্থাৎ খোলা ছাড়িয়ে মোট শাঁসের পরিমাণ ১০০ গ্রাম হলে তাতে পাওয়া যায় –

১) খাদ্যশক্তি রয়েছে ৬৫ কিলো ক্যালোরি
২) জলের পরিমাণ ৮৪.৯ গ্রাম
৩) খনিজ পদার্থ– ০.৯ গ্রাম
৪) খাদ্য আঁশ– ১.৬ গ্রাম
৫) আমিষ– ২.৫ গ্রাম
৬) শর্করা– ১১.৭ গ্রাম
৭) ক্যালসিয়াম– ১০ মিলিগ্রাম
৮) আয়রন– ০.৮ মিলিগ্রাম
৯) ভিটামিন বি১ – ০.১৮ মিলিগ্রাম
১০) ভিটামিন বি২ – ০.০৫ গ্রাম
১১) ভিটামিন সি – ১৫ মিলিগ্রাম
১২) এক একটি পানি ফলে চর্বির পরিমাণ – ০.৯ গ্রাম
১৩) এছাড়াও আছে পটাশিয়াম, জিঙ্ক,  ভিটামিন-ই। রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান।

এ তো গেল পুষ্টিগুণ। এবার জেনে নেওয়া যাক ঔষধি গুণ বা খাদ্য গুণ বা উপকারিতা কি কি?

১. পানিফল শরীরের পুষ্টির অভাব দূর করে।
২. পানিফল পেটের রোগ নিরাময় করে।
৩. ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে করতে সাহায্য করে।
৪. দুর্বল শরীরকে বল দেয়।
৫. হাত-পা ফোলা ঠিক করে।
৬. এটি যকৃতের প্রদাহনাশক অর্থাৎ লিভারের ইনফ্লামেশন নিরাময় করে।
৭. এটি যৌন শক্তিবর্ধক একটি ফল।
৮. ঋতুর আধিক্যজনিত সমস্যা ঠিক করতে খুবই উপকারি।
৯. এমনকি এতে রয়েছে ক্যানসার প্রতিরোধের গুণও।
১০. শরীর ঠাণ্ডা করতে পানিফলের জুড়ি নেই।
১১. শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে।
১২. বমিভাব, হজমের সমস্যা দূর করতে পানিফলের কোনো তুলনা হয় না।
১৩. অনিদ্রা দূর করতে কাজে দেয়।
১৪. ঠাণ্ডা লাগা, সর্দি থেকে স্বস্তি পেতে সাহায্য করে পানিফল।
১৫. ব্রঙ্কাইটিস, অ্যানিমিয়া কমাতে পারে।
১৬. পানিফলের শাঁস শুকিয়ে রুটি বানিয়ে খেলে অ্যালার্জি দূর হয়।
১৬. পিত্তজনিত রোগ নাশ করে।
১৭. রক্ত আমাশা বন্ধ করে।
১৮. প্রসাবের সমস্যা দূর করে।