বিশ্ব স্ট্রোক দিবস দেশে স্ট্রোকের চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাংলাদেশে মানুষের মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ স্ট্রোক। এ পরিপ্রেক্ষিতে দেশে প্রথমবারের মতো মস্তিষ্কের অপারেশন ছাড়াই রক্তের জমাট (যা স্ট্রোকের কারণ) অপসারণ করে রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে এসেছে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতাল (এনআইএনএস)। উন্নত দেশগুলোতে স্ট্রোকের উপসর্গ দেখা দিলে অল্টেপ্লেস বা আরটিপিএ (রিকম্বিনেন্ট টিস্যু প্লাসমাইনোজেন অ্যাক্টিভেটর) ইনজেকশন সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে রোগীর শিরায় দেয়া হয়।

বর্তমানে দেশের বেশ কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল সফলভাবে ইনট্রাভেনাস থ্রোম্বোলাইসিস (আইভি থ্রোম্বোলাইসিস) শুরু করেছে। তবে কোনো রোগী যদি সাড়ে চার ঘণ্টা পর হাসপাতালে আসেন কিংবা আইভি থ্রোম্বোলাইসিস থেরাপির জন্য নির্দেশিত না হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে এন্ডোভাসকুলার স্টেন্ট অ্যাসপিরেশন কিংবা মেকানিক্যাল থ্রোম্বেকটমি প্রক্রিয়া ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়া হয়। এ প্রক্রিয়াটি সেসব রোগীর জন্য উপকারী, যাদের ইনজেকশন প্রদানের সময় রক্তের জমাট পুরোপুরি অপসারিত হয় না।

একটি উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা যাক। একজন রোগী সকালে বিছানা থেকে ওঠার চেষ্টা করছেন; কিন্তু তিনি উপলব্ধি করলেন তিনি বিছানা থেকে উঠতে পারছেন না। উপরন্তু তিনি তার ডান হাত ও ডান পায়ে একধরনের অসাড়তা অনুভব করছেন।

এ পরিস্থিতিতে তিনি বিছানা থেকে ওঠার জন্য অন্যদের কাছ থেকে সাহায্যের আহ্বান জানান। তবে তিনি স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারছেন না। এ অবস্থায় তিনি যখন পুনরায় ওঠার চেষ্টা করেন তখন বিছানা থেকে নিচে পড়ে যান এবং তাকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়।

রক্ত জমাট বেঁধে মস্তিষ্কের ধমনি ব্লক হলে সাধারণত ইস্কেমিক স্ট্রোক হয়। স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দেয়ার ২ ঘণ্টার মধ্যে তাকে জরুরি বিভাগে (ইডি) নিয়ে যাওয়া হয়। ইতোমধ্যে তার শরীরের ডানপাশে হালকা থেকে মাঝারি রকমের দুর্বলতা দেখা যায় এবং তিনি স্পষ্টভাবে কথা বলার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার স্ট্রোক ধরা পড়ে এবং সিটি স্ক্যানে দেখা যায় তার ইস্কেমিক স্ট্রোক হয়েছে এবং সিটি অ্যাঞ্জিওগ্রামে দেখা যায়, থ্রোম্বোস দ্বারা বাঁ পাশের মাঝের কিছু অংশ বন্ধ হয়ে গেছে।

পরে আল্টেপ্লেস নামের ওষুধ লক্ষণ শুরুর তিন ঘণ্টার মধ্যে একটি শিরাপথে দেয়া হয়। বোলাস ইনজেকশন দেয়ার ২০ মিনিট পর রোগীর ডান হাতের উপরের অংশ নড়াচড়া করতে শুরু করে। তবে পাঁচ ঘণ্টা পর তার অবস্থার আবারও অবনতি ঘটে। তার শরীরের ডান পাশে দুর্বলতা অনুভূত হয় এবং তিনি কথা বলতে সমস্যার সম্মুখীন হন।

এরপর রোগীর ব্লক হয়ে যাওয়া রক্তনালি থেকে জমাটকৃত রক্ত অপসারণে তাকে নিউরো ইন্টারভেনশন ক্যাথ ল্যাবে নিয়ে যাওয়া হয়, যাকে মেকানিক্যাল থ্রোম্বেক্টমি (এমটি) বলা হয়। ক্যাথ ল্যাবে রোগীর মস্তিষ্কের রক্তনালিগুলো অ্যাঞ্জিওগ্রাফি পদ্ধতি ব্যবহার করে মূল্যায়ন করা হয়।

দেখা যায়, তার মস্তিষ্কের বাঁ অংশে রক্ত সরবরাহকারী একটি বৃহৎ রক্তনালি সংকুচিত এবং দূরে সরে গিয়ে বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া অংশে একটি তারের উপর একটি ছোট টিউব বসানো হয় এবং তারপর সেখানে একটি ক্লট রিট্রিভার স্থাপন করা হয়।

পাঁচ মিনিট অপেক্ষার পর ক্লট রিট্রিভার বের করে আনা হয়, যা রক্ত জমাট বাঁধার কারণে ব্লক হয়ে যাওয়া রক্তনালি থেকে জমাটকৃত রক্ত বের করে আনে। ফলে মস্তিষ্কের রক্তনালিগুলোয় পুনরায় রক্তপ্রবাহ সরবরাহ হয়। পুরো প্রক্রিয়াটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়।

আগামী দিনে অ্যাকিউট স্ট্রোকের চিকিৎসায় মেকানিক্যাল থ্রোম্বেক্টমি বেশ আশাব্যঞ্জক ফল দেবে। আমাদের প্রত্যাশা, এটি জনগণের মাঝে স্ট্রোক বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করবে, যা তাদের যথাসময়ে স্ট্রোকের চিকিৎসা নিতে উৎসাহিত করবে।

ডা. সিরাজী শফিকুল ইসলাম : সহযোগী অধ্যাপক, ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজি, এনআইএনএস

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর