ঢাকা ০৮:৪৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৫১:৪৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৮ অক্টোবর ২০২০
  • ১৭৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গেজেটভুক্ত প্রায় ৫৫ হাজার মুক্তিযোদ্ধার সব ধরনের তথ্য পুনরায় যাচাই-বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। উদ্যোগটি প্রশংসনীয়।

জানা যায়, এসব মুক্তিযোদ্ধার বেশিরভাগই ২০০২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত কোনোরকম যাচাই-বাছাই ছাড়াই তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন। এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) আইন লঙ্ঘিত হয়েছে। তাই নতুন করে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ওই তালিকার মুক্তিযোদ্ধাদের নাম সংশ্লিষ্ট জেলা-উপজেলা ও মহানগর কমিটির কাছে পাঠানো হবে।

উল্লেখ্য, গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা হতে হলে উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটির সুপারিশ থাকতে হয়। এই কমিটির সুপারিশসহ প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য তা উপস্থাপন করতে হয় জামুকার বৈঠকে। জামুকার সম্মতিসাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম গেজেটভুক্ত হয়। কিন্তু দেখা গেছে, বিভিন্ন সময় উপজেলা কমিটির যাচাই-বাছাই শেষে যে সংখ্যক ব্যক্তির নাম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে উঠে এসেছে, তার চেয়ে অনেক বেশিসংখ্যক ব্যক্তি গেজেটভুক্ত হয়েছেন। ২০০২ সালে জামুকা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এ পর্যন্ত অর্ধলক্ষাধিক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা গেজেটভুক্ত হয়েছেন।

এমনও দেখা গেছে, কেউ একটা আবেদন লিখে জমা দিয়েছেন, তিনিও মুক্তিযোদ্ধা বনে গেছেন। কাজেই সঠিক যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমেই মুক্তিযোদ্ধার তালিকা চূড়ান্ত করা প্রয়োজন।

স্বাধীনতার প্রায় অর্ধশত বছরের সামনে দাঁড়িয়েও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি তালিকা তৈরি করতে না-পারা দুঃখজনক। মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা তাদের প্রাপ্য। কোনো ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার কারণে নয়, একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তারা জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলেন।

এমনকি অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা সনদ পর্যন্ত নেননি। অথচ মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিয়েও অনেকে কারচুপির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাম লিখিয়েছেন। তারা নিশ্চয়ই গর্হিত কাজ করেছেন। এমনকি প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরে অবস্থানকারী কিছু কর্মকর্তা পর্যন্ত ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েছিলেন চাকরিতে দু’বছর বেশি থাকার জন্য।

এ পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘদিন থেকেই জনদাবি রয়েছে, মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা থেকে অমুক্তিযোদ্ধাদের বাদ দিতে হবে। অর্থাৎ, বিধিবহির্ভূতভাবে যারা গেজেটভুক্ত হয়েছেন, তাদের চিহ্নিত করে অমুক্তিযোদ্ধা আখ্যা দিতে হবে।

দেরিতে হলেও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে; আমরা একে স্বাগত জানাই। তবে অমুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে-প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা যেন এ প্রক্রিয়ায় বাদ না পড়েন। তেমনটি ঘটলে সেটা হবে অত্যন্ত দুঃখজনক। মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিয়ে যারা মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, তাদের অবশ্যই ছেঁটে ফেলতে হবে তালিকা থেকে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই

আপডেট টাইম : ১১:৫১:৪৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৮ অক্টোবর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গেজেটভুক্ত প্রায় ৫৫ হাজার মুক্তিযোদ্ধার সব ধরনের তথ্য পুনরায় যাচাই-বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। উদ্যোগটি প্রশংসনীয়।

জানা যায়, এসব মুক্তিযোদ্ধার বেশিরভাগই ২০০২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত কোনোরকম যাচাই-বাছাই ছাড়াই তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন। এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) আইন লঙ্ঘিত হয়েছে। তাই নতুন করে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ওই তালিকার মুক্তিযোদ্ধাদের নাম সংশ্লিষ্ট জেলা-উপজেলা ও মহানগর কমিটির কাছে পাঠানো হবে।

উল্লেখ্য, গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা হতে হলে উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটির সুপারিশ থাকতে হয়। এই কমিটির সুপারিশসহ প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য তা উপস্থাপন করতে হয় জামুকার বৈঠকে। জামুকার সম্মতিসাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম গেজেটভুক্ত হয়। কিন্তু দেখা গেছে, বিভিন্ন সময় উপজেলা কমিটির যাচাই-বাছাই শেষে যে সংখ্যক ব্যক্তির নাম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে উঠে এসেছে, তার চেয়ে অনেক বেশিসংখ্যক ব্যক্তি গেজেটভুক্ত হয়েছেন। ২০০২ সালে জামুকা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এ পর্যন্ত অর্ধলক্ষাধিক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা গেজেটভুক্ত হয়েছেন।

এমনও দেখা গেছে, কেউ একটা আবেদন লিখে জমা দিয়েছেন, তিনিও মুক্তিযোদ্ধা বনে গেছেন। কাজেই সঠিক যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমেই মুক্তিযোদ্ধার তালিকা চূড়ান্ত করা প্রয়োজন।

স্বাধীনতার প্রায় অর্ধশত বছরের সামনে দাঁড়িয়েও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি তালিকা তৈরি করতে না-পারা দুঃখজনক। মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা তাদের প্রাপ্য। কোনো ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার কারণে নয়, একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তারা জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলেন।

এমনকি অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা সনদ পর্যন্ত নেননি। অথচ মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিয়েও অনেকে কারচুপির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাম লিখিয়েছেন। তারা নিশ্চয়ই গর্হিত কাজ করেছেন। এমনকি প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরে অবস্থানকারী কিছু কর্মকর্তা পর্যন্ত ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েছিলেন চাকরিতে দু’বছর বেশি থাকার জন্য।

এ পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘদিন থেকেই জনদাবি রয়েছে, মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা থেকে অমুক্তিযোদ্ধাদের বাদ দিতে হবে। অর্থাৎ, বিধিবহির্ভূতভাবে যারা গেজেটভুক্ত হয়েছেন, তাদের চিহ্নিত করে অমুক্তিযোদ্ধা আখ্যা দিতে হবে।

দেরিতে হলেও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে; আমরা একে স্বাগত জানাই। তবে অমুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে-প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা যেন এ প্রক্রিয়ায় বাদ না পড়েন। তেমনটি ঘটলে সেটা হবে অত্যন্ত দুঃখজনক। মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিয়ে যারা মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, তাদের অবশ্যই ছেঁটে ফেলতে হবে তালিকা থেকে।