ঢাকা ০৩:৫৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সবুজ পাতা ধানের খামে হেমন্ত প্রস্থান এলো নেমে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:২৫:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ অক্টোবর ২০২০
  • ১৬৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মেঘের ভেলায় ভেসে ভেসে শরতের প্রস্থান হলো। আর কোনো এক অচিন পাথারের ওপার থেকে বাংলার ঋতুচক্রে আবির্ভাব হলো হেমন্তের। এ ঋতু উৎসবের। এ ঋতু নবান্নের।

আকাশে সাদা মেঘের আনাগোনা স্তম্ভিত হয়ে যেন প্রকৃতি এক নিখাদ নিরবতায় হেমন্তকে অভ্যর্থনা জানায়। নিজেকে সাজিয়ে তোলে হলুদ গাঁদা, মল্লিকা আর শিউলি ফুলের সাজে। ধবধবে কাশফুল পেরিয়ে এক নতুন রূপে প্রকৃতি নিজেকে সাজিয়ে তোলে।

বাংলা মাসের কার্তিক-অগ্রহায়ণজুড়ে ঋতুচক্রের ৪র্থ ঋতু হেমন্ত স্থান দখল করে নেয়। ‘কৃত্তিকা’ ও ‘আর্দ্রা’ দুটি তারার নাম অনুসারে কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসের নামকরণ করা হয়েছে। বর্ষার রেশ কাটিয়ে উঠে প্রকৃতি কেমন শুষ্ক আর শুদ্ধতায় নিজেকে নতুন রূপে গড়ে তোলে।

হেমন্ত বাংলা ঋতুচক্রের এক সীমাহীন সৌন্দর্যের ঋতু। শিশিরস্নাত সকাল, পাখির কলকাকলিতে মুগ্ধ সন্ধ্যা, রাতের একটু শীতলতা, মেঘমুক্ত আকাশে জোছনার সৌন্দর্য যেন এক অপার আনন্দের সঞ্চার করে। কবিগুরু তাই হেমন্তের মোহনীয় রূপে মুগ্ধ হয়ে গেয়েছেন-
‘হিমের রাতে ওই গগনের দীপগুলিরে
হেমন্তিকা করল গোপন আঁচল ঘিরে॥
ঘরে ঘরে ডাক পাঠালো- ‘দীপালিকায় জ্বালাও আলো,
জ্বালাও আলো, আপন আলো, সাজাও আলোয় ধরিত্রীরে।’’

মাঠে মাঠে পাকা ধানের সোনালি আভা, পাকা ধানের মৌ-মৌ গন্ধে প্রকৃতি ভারি হয়ে ওঠে। দিগন্ত-বিস্তৃত ফসলের বাহারি রূপ এক অনন্য সৌন্দর্যের পরির দেশে নিয়ে যায়। এর পরপরই আসে ধান কাটার ধুম। মাঠে মাঠে আরেক উৎসব। কৃষ্ণকায় আর জীর্ণদেহী কৃষকের লাল-সাদা দাঁতের হাসি আবহমান বাংলার চিরায়ত সৌন্দর্যেরই বহিঃপ্রকাশ। ধান কাটে মনের সুখে। আর হরেকরকম গানে মেতে ওঠে কৃষক।

খুব ভোরে খালি পায়ে সবুজ-কেমল কুয়াশা মোড়ানো ঘাষগুলো মাড়িয়ে সোনালি আভায় ডুব দিয়ে এ ঋতুতে কৃষকদের মাঠে আগমন ঘটে। আর মধ্যাহ্নে সেই কাঙ্ক্ষিত সোনালি ধান মাথায় করে বাড়ির উঠোন পর্যন্ত নিয়ে আসা নতুন রূপে আনন্দের সঞ্চার করে সবার মনে। ধানের নতুন ভারা চোখে পড়লে কৃষাণীর মুখে দেখা যায় চিকচিক হাসি।

হেমন্তের আগমনে ঘরে আসে নবান্নের সওগাত। নবান্ন হেমন্তেরই আশির্বাদপুষ্ট উৎসব। নতুন ধান ঘরে তুলে ঘরে ঘরে চলে পিঠা-পায়েসের আমেজ। কেমন একটা মায়াবী সুগন্ধে মেতে ওঠে প্রতিটি আলয়। নতুন ধান সংগ্রহের পর সেই ধান থেকে প্রাপ্ত চালের মিষ্টি পায়েস কিংবা ঢেঁকিছাটা চালের ভাত এক অপরিসীম তৃপ্তির সঞ্চার করে। পিঠা-পুলির উৎসবে চলে ভিন্ন আমেজ।

নবান্ন নিয়ে আসে খুশির বার্তা। বাঙালি কৃষক সমাজের এক অনন্য উৎসব। এটি কেবল বাংলাদেশেরই উৎসব নয়, পশ্চিমবঙ্গেরও উৎসব। বাংলাদেশে যদিও কালের বিবর্তনে নবান্ন উৎসবের সৌন্দর্য হারিয়ে যাচ্ছে। তবুও রাজধানীতে ‘জাতীয় নবান্ন উৎসব উদযাপন পরিষদ’ প্রতি বছর নবান্নকে উদযাপন করে।

ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। প্রতিবছর ৬টি ঋতুর পালাবদলে বাংলাকে নতুনভাবে সাজিয়ে তোলে। বাঙালি মনে নানা ঋতুতে নানা রঙের সঞ্চার করে। হেমন্ত বাংলার ঋতুতে শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে আসে। এসে তার সব রূপ ছড়িয়ে দেয়। আর এ মোহনীয় ঋতুর অবসান ঘটার পরই দুয়ারে হাজির হয় শীতবুড়ি।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সবুজ পাতা ধানের খামে হেমন্ত প্রস্থান এলো নেমে

আপডেট টাইম : ০৬:২৫:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ অক্টোবর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মেঘের ভেলায় ভেসে ভেসে শরতের প্রস্থান হলো। আর কোনো এক অচিন পাথারের ওপার থেকে বাংলার ঋতুচক্রে আবির্ভাব হলো হেমন্তের। এ ঋতু উৎসবের। এ ঋতু নবান্নের।

আকাশে সাদা মেঘের আনাগোনা স্তম্ভিত হয়ে যেন প্রকৃতি এক নিখাদ নিরবতায় হেমন্তকে অভ্যর্থনা জানায়। নিজেকে সাজিয়ে তোলে হলুদ গাঁদা, মল্লিকা আর শিউলি ফুলের সাজে। ধবধবে কাশফুল পেরিয়ে এক নতুন রূপে প্রকৃতি নিজেকে সাজিয়ে তোলে।

বাংলা মাসের কার্তিক-অগ্রহায়ণজুড়ে ঋতুচক্রের ৪র্থ ঋতু হেমন্ত স্থান দখল করে নেয়। ‘কৃত্তিকা’ ও ‘আর্দ্রা’ দুটি তারার নাম অনুসারে কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসের নামকরণ করা হয়েছে। বর্ষার রেশ কাটিয়ে উঠে প্রকৃতি কেমন শুষ্ক আর শুদ্ধতায় নিজেকে নতুন রূপে গড়ে তোলে।

হেমন্ত বাংলা ঋতুচক্রের এক সীমাহীন সৌন্দর্যের ঋতু। শিশিরস্নাত সকাল, পাখির কলকাকলিতে মুগ্ধ সন্ধ্যা, রাতের একটু শীতলতা, মেঘমুক্ত আকাশে জোছনার সৌন্দর্য যেন এক অপার আনন্দের সঞ্চার করে। কবিগুরু তাই হেমন্তের মোহনীয় রূপে মুগ্ধ হয়ে গেয়েছেন-
‘হিমের রাতে ওই গগনের দীপগুলিরে
হেমন্তিকা করল গোপন আঁচল ঘিরে॥
ঘরে ঘরে ডাক পাঠালো- ‘দীপালিকায় জ্বালাও আলো,
জ্বালাও আলো, আপন আলো, সাজাও আলোয় ধরিত্রীরে।’’

মাঠে মাঠে পাকা ধানের সোনালি আভা, পাকা ধানের মৌ-মৌ গন্ধে প্রকৃতি ভারি হয়ে ওঠে। দিগন্ত-বিস্তৃত ফসলের বাহারি রূপ এক অনন্য সৌন্দর্যের পরির দেশে নিয়ে যায়। এর পরপরই আসে ধান কাটার ধুম। মাঠে মাঠে আরেক উৎসব। কৃষ্ণকায় আর জীর্ণদেহী কৃষকের লাল-সাদা দাঁতের হাসি আবহমান বাংলার চিরায়ত সৌন্দর্যেরই বহিঃপ্রকাশ। ধান কাটে মনের সুখে। আর হরেকরকম গানে মেতে ওঠে কৃষক।

খুব ভোরে খালি পায়ে সবুজ-কেমল কুয়াশা মোড়ানো ঘাষগুলো মাড়িয়ে সোনালি আভায় ডুব দিয়ে এ ঋতুতে কৃষকদের মাঠে আগমন ঘটে। আর মধ্যাহ্নে সেই কাঙ্ক্ষিত সোনালি ধান মাথায় করে বাড়ির উঠোন পর্যন্ত নিয়ে আসা নতুন রূপে আনন্দের সঞ্চার করে সবার মনে। ধানের নতুন ভারা চোখে পড়লে কৃষাণীর মুখে দেখা যায় চিকচিক হাসি।

হেমন্তের আগমনে ঘরে আসে নবান্নের সওগাত। নবান্ন হেমন্তেরই আশির্বাদপুষ্ট উৎসব। নতুন ধান ঘরে তুলে ঘরে ঘরে চলে পিঠা-পায়েসের আমেজ। কেমন একটা মায়াবী সুগন্ধে মেতে ওঠে প্রতিটি আলয়। নতুন ধান সংগ্রহের পর সেই ধান থেকে প্রাপ্ত চালের মিষ্টি পায়েস কিংবা ঢেঁকিছাটা চালের ভাত এক অপরিসীম তৃপ্তির সঞ্চার করে। পিঠা-পুলির উৎসবে চলে ভিন্ন আমেজ।

নবান্ন নিয়ে আসে খুশির বার্তা। বাঙালি কৃষক সমাজের এক অনন্য উৎসব। এটি কেবল বাংলাদেশেরই উৎসব নয়, পশ্চিমবঙ্গেরও উৎসব। বাংলাদেশে যদিও কালের বিবর্তনে নবান্ন উৎসবের সৌন্দর্য হারিয়ে যাচ্ছে। তবুও রাজধানীতে ‘জাতীয় নবান্ন উৎসব উদযাপন পরিষদ’ প্রতি বছর নবান্নকে উদযাপন করে।

ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। প্রতিবছর ৬টি ঋতুর পালাবদলে বাংলাকে নতুনভাবে সাজিয়ে তোলে। বাঙালি মনে নানা ঋতুতে নানা রঙের সঞ্চার করে। হেমন্ত বাংলার ঋতুতে শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে আসে। এসে তার সব রূপ ছড়িয়ে দেয়। আর এ মোহনীয় ঋতুর অবসান ঘটার পরই দুয়ারে হাজির হয় শীতবুড়ি।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা।