ঢাকা ০৭:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ওই যে এটাই ‘ভিলেন’ আকবরের অট্টালিকা বাড়ি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:১৮:৫৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ অক্টোবর ২০২০
  • ১৮৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশজুড়ে এখন আলোচিত নাম আকবর হোসেন ভূঁইয়া। তিনি সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সদ্য বরখাস্ত হওয়া উপপরিদর্শক (এসআই)। ইউটিউব চ্যানেলে নাটকের মাধ্যমে সমাজের নানা অসংগতি তুলে ধরাই ছিল ওই পুলিশ কর্মকর্তার শখ। চাকরিজীবনেও ‘ভালো মানুষ’ বলেই ধারণা ছিল অনেকের। কিন্তু সিলেটে নির্যাতন করে যুবক হত্যার অভিযোগ ওঠার পর ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে সবাই অন্য চোখে দেখছেন।

আলোচনা-সমালোচনা চলছে এসআই আকবরের নিজ গ্রাম ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের বগইর গ্রামেও। তাঁর নয়নাভিরাম বাড়ি আর নির্মাণাধীন সুবিশাল গেটে চোখ আটকে যাচ্ছে পথচারীর। কেউ কেউ আঙুল উঁচিয়ে দেখাচ্ছেন এটাই ‘ভিলেন’ আকবরের বাড়ি।

বাড়ির লোকজন বলছেন, ছোটবেলা থেকেই শান্ত স্বভাবের আকবর হত্যার মতো জঘন্য কাজ করতে পারে—সেটা তাঁরাও বিশ্বাস করতে পারছেন না। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা খুঁজে বের করার দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা।

মাত্র ১০ হাজার টাকার জন্য রায়হান নামে এক যুবককে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ উঠলে আকবরসহ চারজন এখন সাময়িক বরখাস্ত। আশুগঞ্জের বগইর গ্রামের জাফর আলী ভূঁইয়ার তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সবার বড় আকবর। ২০০৫ সালে কনস্টেবল হিসেবে চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর আকবর ২০১৪ সালে এসআই পদে পদোন্নতি পান।

গতকাল বিকেলে বগইরের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ১৫ শতাংশ জায়গার ওপর নয়নাভিরাম একটি একতলা ভবন। বাড়ির সামনেই কাজ চলছে সুবিশাল গেটের। বাড়ির উঠানে বেশ কিছু মানুষের আনাগোনা। তবে ভবনের দরজা-জানালা সব লাগানো। আকবরের বাবা অসুস্থ, মা কথা বলবেন না বলে জানানো হয়। আকবরের এক ভাই থাকেন সিঙ্গাপুর।

দূর থেকে ছুটে আসা কয়েকজন আত্মীয় ও এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে বোঝা যায়, আকবরের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠায় তাঁরা ‘থ’। আকবর এমন কাজ করতে পারেন সেটা তাঁরা ভাবতেও পারছেন না।

তবে গ্রামেরই দু-একজন আত্মীয় এসআইয়ের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সত্য হতে পারে বলে অভিমত দেন। তাঁরা আকবরের বাবা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জাফর আলীর বিরুদ্ধে অনেক আগে ধর্ষণের মামলা হয়েছিল বলেও জানান।

কথা হয় আকবরের বন্ধু ও আত্মীয় মো. পারভেজুর রহমান ভূঁইয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আকবরের পক্ষে এমন হত্যাকাণ্ড ঘটানো সম্ভব বলে মনে করি না। আমরা চাই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করা হোক।’ আকবরকে একজন সংস্কৃতিমনা মানুষ হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি।

আমেনা বেগম নামে বগইর গ্রামের এক নারী জানান, বেশ কয়েক বছর আগে গ্রামের পূর্বপাড়ার বাড়ি তাঁর ছেলের কাছে বিক্রি করে দক্ষিণ পাড়ায় এসে নতুন বাড়ি করেন আকবরের বাবা। আকবরকে তাঁরা ভালো ছেলে হিসেবেই চেনেন।

তবে হাবিবুল্লাহ ভূঁইয়া নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘এমনিতেই তো কাউকে বরখাস্ত করার কথা না। নিশ্চয় পেছনে কোনো ঘটনা আছে। তদন্ত করলে সব বের হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আকবরের যে ভাই সিঙ্গাপুর থাকে সে প্রায়ই দেশে চলে আসে। তার আয়-রোজগার খুব ভালো না বলে জানি।’

আকবরের ছোট ভাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আরিফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে গত রবিবার কথা হয়। তিনি বিপদে আছেন জানিয়ে দোয়া চান। এখন গণমাধ্যমে বিভিন্ন খবর আমরা দেখতে পাচ্ছি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার বাবা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে অবসরে যাওয়ার টাকায় দোতলা ভিতের ভবনের নিচের অংশ কাজ করি। এর পাঁচ বছর পর মেজো ভাই সিঙ্গাপুর থেকে এসে একতলার কাজ শেষ করেন। এখানে বড় ভাইয়ের (আকবর) কোনো অংশীদারি নেই। বাড়ির জায়গাটিও আমাদের পৈতৃক সূত্রে পাওয়া।’ ভবন নির্মাণ করতে প্রায় ২০ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে।

বিশ্বজিৎ পাল বাবু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

ওই যে এটাই ‘ভিলেন’ আকবরের অট্টালিকা বাড়ি

আপডেট টাইম : ০৯:১৮:৫৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ অক্টোবর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশজুড়ে এখন আলোচিত নাম আকবর হোসেন ভূঁইয়া। তিনি সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সদ্য বরখাস্ত হওয়া উপপরিদর্শক (এসআই)। ইউটিউব চ্যানেলে নাটকের মাধ্যমে সমাজের নানা অসংগতি তুলে ধরাই ছিল ওই পুলিশ কর্মকর্তার শখ। চাকরিজীবনেও ‘ভালো মানুষ’ বলেই ধারণা ছিল অনেকের। কিন্তু সিলেটে নির্যাতন করে যুবক হত্যার অভিযোগ ওঠার পর ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে সবাই অন্য চোখে দেখছেন।

আলোচনা-সমালোচনা চলছে এসআই আকবরের নিজ গ্রাম ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের বগইর গ্রামেও। তাঁর নয়নাভিরাম বাড়ি আর নির্মাণাধীন সুবিশাল গেটে চোখ আটকে যাচ্ছে পথচারীর। কেউ কেউ আঙুল উঁচিয়ে দেখাচ্ছেন এটাই ‘ভিলেন’ আকবরের বাড়ি।

বাড়ির লোকজন বলছেন, ছোটবেলা থেকেই শান্ত স্বভাবের আকবর হত্যার মতো জঘন্য কাজ করতে পারে—সেটা তাঁরাও বিশ্বাস করতে পারছেন না। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা খুঁজে বের করার দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা।

মাত্র ১০ হাজার টাকার জন্য রায়হান নামে এক যুবককে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ উঠলে আকবরসহ চারজন এখন সাময়িক বরখাস্ত। আশুগঞ্জের বগইর গ্রামের জাফর আলী ভূঁইয়ার তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সবার বড় আকবর। ২০০৫ সালে কনস্টেবল হিসেবে চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর আকবর ২০১৪ সালে এসআই পদে পদোন্নতি পান।

গতকাল বিকেলে বগইরের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ১৫ শতাংশ জায়গার ওপর নয়নাভিরাম একটি একতলা ভবন। বাড়ির সামনেই কাজ চলছে সুবিশাল গেটের। বাড়ির উঠানে বেশ কিছু মানুষের আনাগোনা। তবে ভবনের দরজা-জানালা সব লাগানো। আকবরের বাবা অসুস্থ, মা কথা বলবেন না বলে জানানো হয়। আকবরের এক ভাই থাকেন সিঙ্গাপুর।

দূর থেকে ছুটে আসা কয়েকজন আত্মীয় ও এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে বোঝা যায়, আকবরের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠায় তাঁরা ‘থ’। আকবর এমন কাজ করতে পারেন সেটা তাঁরা ভাবতেও পারছেন না।

তবে গ্রামেরই দু-একজন আত্মীয় এসআইয়ের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সত্য হতে পারে বলে অভিমত দেন। তাঁরা আকবরের বাবা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জাফর আলীর বিরুদ্ধে অনেক আগে ধর্ষণের মামলা হয়েছিল বলেও জানান।

কথা হয় আকবরের বন্ধু ও আত্মীয় মো. পারভেজুর রহমান ভূঁইয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আকবরের পক্ষে এমন হত্যাকাণ্ড ঘটানো সম্ভব বলে মনে করি না। আমরা চাই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করা হোক।’ আকবরকে একজন সংস্কৃতিমনা মানুষ হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি।

আমেনা বেগম নামে বগইর গ্রামের এক নারী জানান, বেশ কয়েক বছর আগে গ্রামের পূর্বপাড়ার বাড়ি তাঁর ছেলের কাছে বিক্রি করে দক্ষিণ পাড়ায় এসে নতুন বাড়ি করেন আকবরের বাবা। আকবরকে তাঁরা ভালো ছেলে হিসেবেই চেনেন।

তবে হাবিবুল্লাহ ভূঁইয়া নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘এমনিতেই তো কাউকে বরখাস্ত করার কথা না। নিশ্চয় পেছনে কোনো ঘটনা আছে। তদন্ত করলে সব বের হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আকবরের যে ভাই সিঙ্গাপুর থাকে সে প্রায়ই দেশে চলে আসে। তার আয়-রোজগার খুব ভালো না বলে জানি।’

আকবরের ছোট ভাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আরিফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে গত রবিবার কথা হয়। তিনি বিপদে আছেন জানিয়ে দোয়া চান। এখন গণমাধ্যমে বিভিন্ন খবর আমরা দেখতে পাচ্ছি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার বাবা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে অবসরে যাওয়ার টাকায় দোতলা ভিতের ভবনের নিচের অংশ কাজ করি। এর পাঁচ বছর পর মেজো ভাই সিঙ্গাপুর থেকে এসে একতলার কাজ শেষ করেন। এখানে বড় ভাইয়ের (আকবর) কোনো অংশীদারি নেই। বাড়ির জায়গাটিও আমাদের পৈতৃক সূত্রে পাওয়া।’ ভবন নির্মাণ করতে প্রায় ২০ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে।

বিশ্বজিৎ পাল বাবু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া