বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের কূটনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যে ঢাকায় একটি আঞ্চলিক সম্মেলনে প্রতিনিধি পাঠাচ্ছে না ইসলামাবাদ। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া এবং দেশটির এক কূটনীতিবিদের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে শীতলতার মধ্যে এ পদক্ষেপ নিল তারা।
আগামীকাল সোমবার ঢাকায় সার্কের মন্ত্রী পর্যায়ের ‘সাউথ এশিয়ান কনফারেন্স অন স্যানিটেশন’-এর উদ্বোধন হবে। এ সম্মেলন আয়োজকদের একজন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মো. খায়রুল ইসলাম বলেন, পাকিস্তান বারবার তাদের প্রতিনিধি পাল্টেছে এবং তারা সময়মতো ভিসার জন্য আসেননি।
অবশ্য পাকিস্তান বলছে, ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাইকমিশন ১০ দিন পাসপোর্ট রাখলেও প্রতিনিধিদের কাউকে ভিসা দেয়নি। প্রতি দুই বছর অন্তর সার্কভুক্ত দেশগুলোতে পর্যায়ক্রমে পয়ঃনিষ্কাশন বিষয়ে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধিরা সেখানে সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ‘দক্ষিণ এশিয়ার চ্যালেঞ্জ’ স্যানিটেশন নিয়ে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা ঠিক করেন।
‘বেটার স্যানিটেশন, বেটার লাইফ’ সস্নোগান নিয়ে এবারের সম্মেলনে আফগানিস্তান, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল ও শ্রীলংকার প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। সম্মেলন শেষে গৃহীত হওয়ার কথা রয়েছে ‘ঢাকা ঘোষণা’।
মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালি হত্যাকাণ্ডে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে উষ্মা প্রকাশ করে গত নভেম্বরে ইসলামাবাদ বিবৃতি দেয়ার পর দুই দেশের সম্পর্কে সাম্প্রতিক টানাপড়েনের শুরু।
এরমধ্যে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠায় পাকিস্তানি কূটনীতিক ফারিনা আরশাদকে ঢাকা থেকে প্রত্যাহার করা হয়।
এর প্রতিক্রিয়ায় গত মঙ্গলবার পাকিস্তান বাংলাদেশ হাই কমিশনের কাউন্সেলর (রাজনৈতিক) মৌসুমী রহমানকে ফেরত নেয়ার আহ্বান জানায়, যাকে পাকিস্তানের মুখ রক্ষার চেষ্টা হিসেবে দেখছে ঢাকা।
স্যানিটেশন সম্মেলনের ফোকাল পারসন খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘পাকিস্তান এখন তাদের মন্ত্রীকেও পাঠাচ্ছে না। মন্ত্রী পর্যায়ের এই সম্মেলনে তাদের অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।’
ঢাকার আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ইসলামাবাদ প্রাথমিকভাবে ৬০ সদস্যের প্রতিনিধি দলের তালিকা পাঠিয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের সচিব (এলজিআরডি) ওইসব আমন্ত্রণপত্রে সই করেছিলেন। পাকিস্তান বারবার প্রতিনিধি তালিকা পাল্টানোর কারণে তারা যথাসময়ে ভিসার আবেদন করতে পারেননি।’
অন্যদিকে ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনের মুখপাত্র আমব্রিন জান বলছেন, ৬০ সদস্যের প্রতিনিধি দলের তালিকা বা মন্ত্রীর আসা সম্পর্কে তার কিছু জানা নেই।
তিনি বলেন, এ সম্মেলনের জন্য ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দলের অনুমোদন দিয়েছিল ইসলামাবাদ। ওই দলে সব প্রদেশের কর্মকর্তাদের রাখা হয়েছিল। তবে তাদের কারো ভিসা ইস্যু করা হয়নি। ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাইকমিশন ১০ দিন তাদের পাসপোর্ট রেখেছিল। সুতরাং, ইসলামাবাদ থেকে কোনো প্রতিনিধি আসছেন না।
১৯৭১ সালে সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান থেকে আলাদা হওয়া বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের বিচারকে কেন্দ্র করে পাকিস্তান প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আসছে, যাকে অযাচিত হস্তক্ষেপ মনে করছে ঢাকা।
সর্বশেষ গত নভেম্বরে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মুজাহিদের মৃত্যুদ- কার্যকরের পর ইসলামাবাদের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘পাকিস্তান গভীরভাবে মর্মাহত।’
এর প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে তলব করে কড়া ভাষায় প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ সরকার। পাল্টা হিসেবে ইসলামাবাদে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে তলব করে দেশটির সরকার।
এরপর পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের দাবি নতুন করে সামনে আনে গণজাগরণ মঞ্চসহ বিভিন্ন সংগঠন।
এরমধ্যে গত মাসে ঢাকার একটি আদালতে এক জেএমবি সদস্যের জবানবন্দিতে পাকিস্তান হাইকমিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি ফারিনার জঙ্গি যোগসাজশের তথ্য এলে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে শীতলতা আরো বাড়ে।
ফারিনাকে ফিরিয়ে নিলেও তার বিরুদ্ধে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইসলামাবাদ।
এর প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান সেদেশ থেকে বাংলাদেশি কূটনীতিককে প্রত্যাহার করতে বলার পর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বুধবার বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আগের মতোই থাকবে।
‘তবে আমরা বর্তমান পরিস্থিতির উপরও গভীরভাবে নজর রাখছি। জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে আমরা কোনো আপস করব না।’
জাল মুদ্রাসহ ধরা পড়ায় গত বছর জানুয়ারিতে মো. মাজহার নামে ঢাকা দূতাবাসের আরেক কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করেছিল ইসলামবাদ। – যায়যায়দিন