ঢাকা ১০:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জাল ভরে উঠছে ইলিশ, উৎসবের আমেজ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:১১:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ অক্টোবর ২০২০
  • ১৫৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বড় ফেনী ও ছোট ফেনী নদীতে জাল ফেললেই ধরা পড়ছে রুপালি ইলিশ। জাল ভরে মাছ আসায় ফেনীর সোনাগাজীতে ইলিশ শিকারি ও জেলেদের ঘরে সুদিন ফিরে এসেছে।

এক সপ্তাহ ধরে বড় ফেনী ও ছোট ফেনী নদীর উপকূলজুড়ে যেন ইলিশ ধরার উৎসব চলছে। জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ায় জেলে ও বিক্রেতারা অনেক খুশি। দামও অনেকটা নাগালে মধ্যে।

সোনাগাজী উপজেলায় ১ হাজার ৬২৪টি নিবন্ধিত জেলে পরিবার রয়েছে। এর বাইরেও আরও প্রায় কয়েক শ মৌসুমি মৎস্যজীবী আছেন। ১৪ অক্টোবর থেকে ২২ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে। তাই উপজেলার মুহুরী প্রকল্প, চর খোন্দকার, দক্ষিণ চর চান্দিয়া, মুছাপুর, সন্ধীপ চ্যানেলসহ উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকায় ও ঘাটে শত শত জেলে ইঞ্জিনচালিত বড় নৌকা ও ট্রলারে করে নদী ও সাগরে মাছ ধরায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।

উপজেলা মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বড় ফেনী ও ছোট ফেনী নদীর উপকূলজুড়ে কয়েক হাজার জেলে নৌকা ও ট্রলারে করে ইলিশ ধরছেন।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার চর খোন্দকার, জেলেপাড়া ও মুছাপুর এলাকায় নদী ও সাগর থেকে জেলেরা নৌকা ও ট্রলারে মাছ বোঝাই করে বাজারজাত করার জন্য উপকূলে এসে মহাজনের কাছে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। জেলেদের জালে ধরা পড়া ইলিশগুলোর ওজন ২০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি পর্যন্ত দেখা গেছে। তবে এক কেজি থেকে দুই কেজির ইলিশ ধরা পড়লেও সংখ্যায় কম। এসব মাছ সোনাগাজী, ফেনী, নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে।

চর খোন্দকার জেলেপাড়ার প্রিয় লাল জলদাস বলেন, এবার নদীতে গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি ইলিশ ধরা পড়ছে। জেলে ও মৎস্যজীবীরা বেশি বেশি মাছ ধরতে পেরে অনেক খুশি। এভাবে আগামী নিষেধাজ্ঞার আগ পর্যন্ত ইলিশ ধরা পড়লে জেলেদের অভাব এবং বাজারে ইলিশের সংকট থাকবে না।

মাছ ধরার ট্রলার মালিক মানিক মিয়া জানান, সম্প্রতি ৬৫ দিন নদী ও সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় দুই সপ্তাহ ধরে নদীতে প্রচুর ইলিশসহ অন্যান্য মাছ পাওয়া যাচ্ছে। এতে করে জেলে, মাঝি, মহাজন ও আড়তদারেরা অনেক লাভবান হচ্ছেন। মাছের দামও বেশ ভালো পাওয়া যাচ্ছে।

তিনি বলেন, অনেক ট্রলারের মালিক ও মহাজন সারা বছরের আয় গত দুই সপ্তাহে করে ফেলেছেন।

উপজেলার জেলেপাড়ার মাছ ধরার ট্রলারের মালিক সফি উল্যাহ বলেন, তার ট্রলারে মাঝিসহ ১২ জন লোক ইলিশ ধরার কাজ করছেন। গত দুই সপ্তাহে প্রচুর মাছ ধরা পড়েছে। মাছ বিক্রি করে তিনি ছয়-সাত লাখ টাকা লাভ করেছেন। সামনে আবারো মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আসছে। তাই গত দুই সপ্তাহের মতো আবারো জাল ভরে মাছ ধরতে পারলে পুরো বছরের আয় হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে ঋণও পরিশোধ করা যাবে।

তিনি আশা করছেন, কয়েক দিন পর পূর্ণিমায় নদীতে বেশ ভালো মাছ ধরা পড়বে।

ফেনী শহর থেকে ইলিশ কিনতে আসা শেখ ফরিদ বলেন, তিনি সোনাগাজী পৌর শহর থেকে ২ কেজি ওজনের একটি ইলিশ ১ হাজার ৮০০ টাকা দিয়ে এবং ১ কেজি ওজনের দুটি ইলিশ ৮০০ টাকা করে কিনেছেন।

সোনাগাজী পৌর শহরের মাছ ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান বলেন, নদীতে প্রচুর পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ায় বিক্রি এবং বাজারে চাহিদাও বেশ ভালো রয়েছে। তিনি বলেন, ২০০-৪০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ ৩৫০ টাকা, ৫০০-৮০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ ৫০০-৬০০ টাকায় এবং ৯০০-১০০০ গ্রামের বেশি ইলিশ ৭৫০-৮০০ টাকায় বিক্রি করছেন।

নেয়ামত উল্যাহ নামের আরেক মাছ ব্যবসায়ী বলেন, বড় ফেনী ও ছোট ফেনী নদীর ইলিশ মাছের স্বাদ বেশ ভালো। বাজারে অনেক ক্রেতা জিজ্ঞেস করে নেন মাছগুলো কোন নদীর। তিনি চর খোন্দকার ও মুছাপুর ঘাট থেকে ইলিশ এনে সোনাগাজী পৌর শহরে বিক্রি করেন।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তূর্য সাহা বলেন, সোনাগাজী উপজেলায় ১ হাজার ৬২৪ জন নিবন্ধিত জেলের মধ্যে ছয় শতাধিক জেলে ইলিশ শিকার করেন। এর বাইরেও স্থানীয় কয়েক শ জেলে রয়েছেন। তাদের সঙ্গে আবার দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা আরো প্রায় দুই শ’ জেলে ইলিশ ধরায় যোগ দেন।

এবার নদীতে গত বছরের চেয়ে বেশি ইলিশ ধরা পড়ায় জেলেরা বেশ খোশ মেজাজে রয়েছেন। মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণে প্রধান প্রজনন মৌসুমে নদীতে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ ধরা বন্ধ থাকে। এসময়ে জেলেরা মাছ ধরা থেকে বিরত থাকলে আগামী দিনে আরো বেশি ইলিশসহ অন্যান্য মাছ ধরা পড়বে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জাল ভরে উঠছে ইলিশ, উৎসবের আমেজ

আপডেট টাইম : ১০:১১:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ অক্টোবর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বড় ফেনী ও ছোট ফেনী নদীতে জাল ফেললেই ধরা পড়ছে রুপালি ইলিশ। জাল ভরে মাছ আসায় ফেনীর সোনাগাজীতে ইলিশ শিকারি ও জেলেদের ঘরে সুদিন ফিরে এসেছে।

এক সপ্তাহ ধরে বড় ফেনী ও ছোট ফেনী নদীর উপকূলজুড়ে যেন ইলিশ ধরার উৎসব চলছে। জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ায় জেলে ও বিক্রেতারা অনেক খুশি। দামও অনেকটা নাগালে মধ্যে।

সোনাগাজী উপজেলায় ১ হাজার ৬২৪টি নিবন্ধিত জেলে পরিবার রয়েছে। এর বাইরেও আরও প্রায় কয়েক শ মৌসুমি মৎস্যজীবী আছেন। ১৪ অক্টোবর থেকে ২২ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে। তাই উপজেলার মুহুরী প্রকল্প, চর খোন্দকার, দক্ষিণ চর চান্দিয়া, মুছাপুর, সন্ধীপ চ্যানেলসহ উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকায় ও ঘাটে শত শত জেলে ইঞ্জিনচালিত বড় নৌকা ও ট্রলারে করে নদী ও সাগরে মাছ ধরায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।

উপজেলা মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বড় ফেনী ও ছোট ফেনী নদীর উপকূলজুড়ে কয়েক হাজার জেলে নৌকা ও ট্রলারে করে ইলিশ ধরছেন।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার চর খোন্দকার, জেলেপাড়া ও মুছাপুর এলাকায় নদী ও সাগর থেকে জেলেরা নৌকা ও ট্রলারে মাছ বোঝাই করে বাজারজাত করার জন্য উপকূলে এসে মহাজনের কাছে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। জেলেদের জালে ধরা পড়া ইলিশগুলোর ওজন ২০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি পর্যন্ত দেখা গেছে। তবে এক কেজি থেকে দুই কেজির ইলিশ ধরা পড়লেও সংখ্যায় কম। এসব মাছ সোনাগাজী, ফেনী, নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে।

চর খোন্দকার জেলেপাড়ার প্রিয় লাল জলদাস বলেন, এবার নদীতে গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি ইলিশ ধরা পড়ছে। জেলে ও মৎস্যজীবীরা বেশি বেশি মাছ ধরতে পেরে অনেক খুশি। এভাবে আগামী নিষেধাজ্ঞার আগ পর্যন্ত ইলিশ ধরা পড়লে জেলেদের অভাব এবং বাজারে ইলিশের সংকট থাকবে না।

মাছ ধরার ট্রলার মালিক মানিক মিয়া জানান, সম্প্রতি ৬৫ দিন নদী ও সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় দুই সপ্তাহ ধরে নদীতে প্রচুর ইলিশসহ অন্যান্য মাছ পাওয়া যাচ্ছে। এতে করে জেলে, মাঝি, মহাজন ও আড়তদারেরা অনেক লাভবান হচ্ছেন। মাছের দামও বেশ ভালো পাওয়া যাচ্ছে।

তিনি বলেন, অনেক ট্রলারের মালিক ও মহাজন সারা বছরের আয় গত দুই সপ্তাহে করে ফেলেছেন।

উপজেলার জেলেপাড়ার মাছ ধরার ট্রলারের মালিক সফি উল্যাহ বলেন, তার ট্রলারে মাঝিসহ ১২ জন লোক ইলিশ ধরার কাজ করছেন। গত দুই সপ্তাহে প্রচুর মাছ ধরা পড়েছে। মাছ বিক্রি করে তিনি ছয়-সাত লাখ টাকা লাভ করেছেন। সামনে আবারো মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আসছে। তাই গত দুই সপ্তাহের মতো আবারো জাল ভরে মাছ ধরতে পারলে পুরো বছরের আয় হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে ঋণও পরিশোধ করা যাবে।

তিনি আশা করছেন, কয়েক দিন পর পূর্ণিমায় নদীতে বেশ ভালো মাছ ধরা পড়বে।

ফেনী শহর থেকে ইলিশ কিনতে আসা শেখ ফরিদ বলেন, তিনি সোনাগাজী পৌর শহর থেকে ২ কেজি ওজনের একটি ইলিশ ১ হাজার ৮০০ টাকা দিয়ে এবং ১ কেজি ওজনের দুটি ইলিশ ৮০০ টাকা করে কিনেছেন।

সোনাগাজী পৌর শহরের মাছ ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান বলেন, নদীতে প্রচুর পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ায় বিক্রি এবং বাজারে চাহিদাও বেশ ভালো রয়েছে। তিনি বলেন, ২০০-৪০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ ৩৫০ টাকা, ৫০০-৮০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ ৫০০-৬০০ টাকায় এবং ৯০০-১০০০ গ্রামের বেশি ইলিশ ৭৫০-৮০০ টাকায় বিক্রি করছেন।

নেয়ামত উল্যাহ নামের আরেক মাছ ব্যবসায়ী বলেন, বড় ফেনী ও ছোট ফেনী নদীর ইলিশ মাছের স্বাদ বেশ ভালো। বাজারে অনেক ক্রেতা জিজ্ঞেস করে নেন মাছগুলো কোন নদীর। তিনি চর খোন্দকার ও মুছাপুর ঘাট থেকে ইলিশ এনে সোনাগাজী পৌর শহরে বিক্রি করেন।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তূর্য সাহা বলেন, সোনাগাজী উপজেলায় ১ হাজার ৬২৪ জন নিবন্ধিত জেলের মধ্যে ছয় শতাধিক জেলে ইলিশ শিকার করেন। এর বাইরেও স্থানীয় কয়েক শ জেলে রয়েছেন। তাদের সঙ্গে আবার দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা আরো প্রায় দুই শ’ জেলে ইলিশ ধরায় যোগ দেন।

এবার নদীতে গত বছরের চেয়ে বেশি ইলিশ ধরা পড়ায় জেলেরা বেশ খোশ মেজাজে রয়েছেন। মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণে প্রধান প্রজনন মৌসুমে নদীতে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ ধরা বন্ধ থাকে। এসময়ে জেলেরা মাছ ধরা থেকে বিরত থাকলে আগামী দিনে আরো বেশি ইলিশসহ অন্যান্য মাছ ধরা পড়বে।